মোঃ সাইফুল ইসলাম :
দৌলতপুর উপজেলার ভররা গ্রামে একটি প্রভাবশালী মহল গড়ে তুলেছে তাদের সুদের সাম্রাজ্য। আর তাদের সুদের বাণিজ্যে সহজ সরল গ্রামবাসী সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়েছে। লাখ লাখ টাকা মানুষকে লোভ দেখিয়ে প্রায় ২০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নিউ সমিতির নির্বাহী পরিচালক টেইলার্স মো: শাহিনুর ইসলাম দরজী, তার মামা কোষাধক্ষ্য সাইদুর রহমান, ম্যানেজার আব্বাস আলী, সহযোগী হৃদয়,আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমানসহ আরো অনেকে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় এ সুদের ব্যবসা করে আসছে ।
জানা গেছে, প্রায় ১৭ মাস ধরে জেলার দৌলতপুর উপজেলা খলসী ইউনিয়নের ভররা গ্রামে নিউ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মো: শাহিনুর ইসলাম দরজী(৩৫) গ্রামের সাধারন মানুষকে উচ্চ সুদের লোভ দেখিয়ে প্রতারনা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । সমিতির প্রায় কয়েক শতাধিক সদস্য ও তাদের পরিবার নি:স্ব হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার আসল ও সুদের টাকা যখন না পাওয়া যাচ্ছে। লোকজন যখন প্রতারনার শিকার হচ্ছে তখন সমিতির সদস্যগন দৌলতপুর উপজেলার ভররা গ্রামে নিউ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শাহিনুর ইসলাম দরজী ও সহযোগি সাইদুর রহমানের বাড়ি ঘেরাও করে । পরে দৌলতপুর থানা পুলিশ খবর পেয়ে দুই প্রতারককে আটক করে থানায় নিয়ে আসে । শাহিনুর ইসলাম দরজী ভররা গ্রামের আরজত আলীর ছেলে ও সাইদুর রহমান একই গ্রামের আতোয়ার রহমানের ছেলে । বাকী সমিতির সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
প্রতারনার শিকার ভররা গ্রামের জুলু মল্লিকের ছেলে জামাল মল্লিক জানান, প্রতি মাসে এক লাখে ৬০-৮০ হাজার টাকা সুদ দেবে, এই লোভে পরে আমি ভররা নিউ সমিতির সদস্য হই। প্রথমে ১ লক্ষ ৬০ হাজার জমা করি । পরে আমার ভাইদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে ৪ লক্ষ ৩০ হাজারসহ বিভিন্ন সময় রিসিভের মাধ্যমে পর্যায় ক্রমে ১১ লক্ষ ৮০ টাকা জমা করি। আমি এখন পর্যন্ত কোন সুদের টাকা পাই নাই। আমার মতো শত শত মানুষ প্রতারিত হয়ে নি:স্ব হয়ে পরেছে।
প্রতারনার শিকার ভররা গ্রামের আব্দুস ছালামের ছেলে আলতাফ হোসেন জানান, আমার বাড়ির পাশের এক জন ঐ নিউ সমিতিতে সদস্য হয়ে, এক লাখে মাসে ৫০ হাজার টাকা লাভ পেয়েছে । আমিও তার কথা শুনে সমিতিতে ভর্তি হয়ে প্রথমে এক লাখ জমা করি । পরে পর্যায় ক্রমে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা জমা করি । আসল ও সুদের টাকা নিয়ে গড়িমশি করলে সদস্যরা সবাই মিলিত হয়ে শাহিনুর ইসলাম দরজী বাড়ি ঘেরাও করে ।
প্রতারনার শিকার ভররা গ্রামের নকীমুদ্দিনের ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী নুর ইসলাম জানান,আমি উচ্চ সুদের কথা শুনে ৩ লক্ষ টাকা রিসিভের মাধ্যমে জমা করি । আমাকেও প্রতি মাসে লাখে ৫০ হাজার টাকা হারে সুদ দিয়েছে । প্রতি মাসে যে টাকা পেয়েছি সেই টাকা বাদ দিলে আরো ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পাই ।
প্রতারনার শিকার ভররা গ্রামের আমোদ আলীর মেয়ে নাসিমা বেগম জানান, আমি চলতি মাসে উচ্চ সুদের আশায় ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে ভররা নিউ সমিতিতে ৪ লক্ষ টাকা রিসিভের মাধ্যমে জমা দিয়েছি । এ ভাবে ভররা ও আশেপাশের গ্রামগুলি থেকে শতশত মানুষ ঐ সমিতিতে কোটি কোটি টাকা জমা করেন। আসল ও সুদের টাকা নিয়ে গড়িমশি করলে সদস্যরা সবাই মিলিত হয়ে শাহিনুর ইসলাম দরজীর বাড়ি ঘেরাও করে । ভররা এলাকার বিউটি আক্তার জানান, আমাকে ১ লক্ষ টাকায় ৮০ হাজার করে লাভ দেবে তাই আমি রিসিবের মাধ্যমে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছি। টাকার কথা আমার স্বামী জানেনা।
আটক ভররা নিউ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মো: শাহিনুর ইসলাম দরজী ও সহযোগি সাইদুর রহমান জানান, গত ১৬/১৭ মাস পূর্বে ভররা নিউ সমিতি নাম দিয়ে একটি এন.জি.ও করেছি । প্রায় ৫০ জন সদস্য নিয়ে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করছি । সদস্যদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে এক সদস্যর টাকা আরেক সদস্যদের মাঝে সুদের টাকা হিসাবে দিতাম। সদস্যদের কাছ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা আদায় করা হয়েছিল । কিছু টাকা সদস্যদের ফেরৎ দেওয়া হয়েছে । আমাকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে ভররা গ্রামের জামাই, বরংগাইলের মানু মিয়া এক বস্তায় ১৮ লাখ টাকা নিয়ে গেছে।
সোমবার রাতে আরো ৯০ লাখ টাকা ছালার বস্তায় ভরে বাড়ির পাশে পুকুরের পানির নিচে লুকিয়ে রাখি । লুকিয়ে রাখা সেই টাকার কথা আমার সমিতির ম্যানেজার আব্বাস মিয়া জানতো । পরের দিন পুকুরে রাখা সেই টাকা নিয়ে আব্বাস উধাও হয়ে গেছে বলে জানান নিউ সমিতির নির্বাহী পরিচালক মো: শাহিনুর ইসলাম দরজী ।
এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুনীল কুমার কর্মকার জানান, ভররা গ্রামে নিউ সমিতির নির্বাহী পরিচালক শাহিনুর ইসলাম দরজী ও সাইদুর রহমানকে সমিতির সদস্যরা পাওনা টাকার দাবিতে তাকে বাড়িতে অবরুদ্ব করে রেখেছে খবর পাই । পরে ভররা এলাকায় ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর প্রতারনার শিকার সমিতির সদস্যদের অভিযোগ শুনে প্রতারক দুই জনকে তাৎক্ষনিক আটক করা হয়। প্রতারনার শিকার ভররা গ্রামের জুলু মল্লিকের ছেলে জামাল মল্লিক বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছে । দৌলতপুর থানার মামলা নং-২৩। তারিখ-২৪/০৪/২০১৯ ইং । এ ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেস্টা চলছে ।