কর্মক্ষেত্রে যদি আপনি আপনার পদোন্নতি চান তাহলে এখন থেকেই আপনি আপনার দক্ষতা, যোগ্যতা আর অভিজ্ঞতার বাইরে ভাবনা চিন্তা শুরু করুন।
কীভাবে আমি পদোন্নতি পাব?- এমন প্রশ্ন সকল চাকরিজীবির মাথায় ঘুরপাক খায়। এমনকি যেসব কর্মীরা অন্যদের থেকে ব্যতিক্রম তারা বসকে জিজ্ঞাসা করে বসেন, ‘পদোন্নতি পেতে হলে আমাকে কি করতে হবে?’
এক্ষেত্রে কিছু বসের উত্তর সুস্পষ্ট: নির্ধারিত কিছু কাজ সম্পন্ন করুন, অভিজ্ঞতা অর্জন করুন অথবা লাইন এ অপেক্ষায় থাকুন।
বাকিদের যেমন হাবস্পট এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ধর্মেশ শাহের পদোন্নতি পদ্ধতি ভিন্ন। ধর্মেশ পদোন্নতির বিষয়ে কর্মীদের অ্যাটিচিউড বা মনোভাবকে প্রাধান্য দেন।
কেন তিনি পদোন্নতির ব্যাপারে কর্মীদের মনোভাবের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেন সেটি জানতে চাইলে তিনি খুবই সহজ উত্তর দেন। তার মতে, মনোভাব আপনার কর্মকাণ্ডকে প্রকাশ করে। মনোভাব আপনার আচার-আচরণকে প্রকাশ করে। আপনার মনোভাবই আপনার সকল অর্জন ও সাফল্যের চালিকা শক্তি।
মনোভাব হলো সেই জিনিস যেটা আপনার কাজের গতি ও কর্মক্ষমতাকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি আপনার উন্নয়নের বা অগ্রগতির বিষয়কেও প্রাধান্য দেয়। ধর্মেশ এর মতে, যদি আপনি কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি পেতে চান তাহলে-
নিজের জন্য নয়, সকলের জন্য কাজ করুন: আপনি একা কখনোই কোনো কাজে যথার্থ সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। আর এ কারণেই দলের ভালো, ব্যতিক্রমী ও পরিশ্রমী সদস্য তার আশেপাশের সবাইকেও ভালো করে তুলতে পারে।
আপনি যদি আপনার বাস্কেটবল দলে একজন স্বার্থহীন খেলোয়াড়কে নিয়ে থাকেন তাহলে সে তার দলের বাকি খেলোয়াড়দেরকেও ভালো করে তুলতে পারবে। ফাঁকা জায়গায় পাস দেওয়া, বক্সিং আউটসহ ডিফেন্স ব্যবস্থাকে পরিবর্তনের মাধ্যমে সে বাকিদেরকে ভালো করে তুলবে। তার এই প্রয়াস টিম স্ট্যাটিসটিক্সে প্রকাশ না পেলেও তা দলের অবস্থান ও অবস্থাকে উন্নত করবে।
যারা ভালো নেতা হয়ে থাকেন তারা তাদের কর্মীদের কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য ও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান দিয়ে থাকেন।
বড় বড় ও সফল প্রতিষ্ঠানগুলো সবার আগে তাদের কাস্টমারদের পরিষেবা দিয়ে থাকেন। কারণ তারা জানেন কাস্টমারদের পরিসেবার মাধ্যমে তারা মূলত তাদের ব্যবসার মূল নীতিকেই তুলে ধরছেন।
যে কর্মী শুধু নিজের কথা ভেবে কাজ করে থাকেন এক সময় সে নিজেই একা হয়ে যাবে। কিন্তু যে কর্মী অন্যদের জন্য কাজ করে সে হয়তো সব প্রশংসা পাবেনা কিন্তু যোগ্য লোকের নজর তাকে এড়িয়ে যাবেনা।
অহংকারী নয়, নম্র হন: যারা আগ্রাসী হন বা অহংকারী হন তারা ভাবেন যে তারাই সব কিছু জানেন, কিন্তু নম্ররা প্রতিনিয়ত কর্মক্ষেত্রে নতুন কিছু শিখেন। নম্র ব্যক্তিরা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, জানতে চান, কোনো কিছু না পারলে তারা অন্যের সহযোগিতাও চেয়ে থাকেন।
নম্র ব্যক্তিরা সহজেই যেকোনো কাজে সফলতার প্রশংসা সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন। কারণ তারা স্বাভাবিকভাবেই জানেন কোনো কাজের সফলতা একা আনা সম্ভব না। দলীয় চেষ্টার মাধ্যমেই সাফল্য অর্জিত হয়।
নম্র ব্যক্তিরা যেকোনো সময় যেকোনো কাজ গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকেন। কাজের মাত্রার ব্যাপারে তারা ভাবেন না। কারণ তারা বিশ্বাস করেন কোনো কাজই ছোট নয়, আর এর মাধ্যমে তারা নিজেদের কাজের ক্ষেত্রে আত্মনিয়োগ এর বিষয়টিকে প্রকাশ করেন।
প্রকৃতপক্ষে সাফল্য তখনি আসবে যখন আপনি কত উপরে যেতে পারবেন তা না ভেবে কতটা নিচে নেমে কাজ করতে পারবেন সেটি ভাবতে পারবেন।
আশাবাদী হোন: আশাবাদীরা শক্তির সঞ্চার করে আর নিরাশাবাদীরা শক্তি হারিয়ে ফেলে। আশাবাদীরা অনেক বিষয় নিয়ে ভাবেন এবং সেগুলো করার ক্ষেত্রে নানা রকম ঝুঁকিও গ্রহণ করে থাকেন। কারণ তারা তাদের কাজের ইতিবাচকতা নিয়ে ভাবেন। নিরাশাবাদীরা কোনো কাজ শুরু করার আগে তার ভালো-মন্দের ব্যাখ্যা আর গবেষণা নিয়েই সময় কাটিয়ে দেন।
আশাবাদীরা কখনোই কোনো প্রকার প্রচার প্রকাশের অপেক্ষা করেন না। কারণ তারা জানেন যদি তারা কঠোর পরিশ্রম করেন তাহলে তারা যেকোনো কিছু অর্জন করতে পারবেন।
অপ্রয়োজনীয় বিষয় বাদ দিন: কোনো কাজ করার আগে তার কর্মপরিকল্পনা করা জরুরি। কিন্তু অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়। বেশি মাত্রায় পরিকল্পনা চিন্তা করে পরবর্তীতে তা কাজে না লাগাতে পারলে পরিশ্রম বৃথা।
সেরা কর্মীরা প্রথমে একটি ধারণার বিকাশ করেন, এরপর একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন এবং এর পর ব্যবহারিক চর্চার মাধ্যমে এই পরিকল্পনার অভিযোজন, সংযোজন, বিয়োজন করে থাকেন। কৌশল নির্ধারণের মাধ্যমে সাফল্যের শুরু হলেও শেষ হয় বিয়োজনের মধ্য দিয়েই।
দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করুন: নেতৃত্ব সংক্ষিপ্ত কোনো বিষয় নয়। প্রকৃত নেতারা তাদের কর্মীদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দিয়ে যেতে পারে এবং তাদেরকে এটি ভাবতে সাহায্য করে যে, তারা তাদের কাজে সক্ষম এবং সাফল্য নিয়ে আসতে পারবে।
প্রকৃত নেতা তারাই যাদেরকে আমরা অনুসরণ করতে আগ্রহী বা করতে চাই। সেই ব্যক্তিটির মধ্যে এমন একটি দক্ষতা রয়েছে যার কারণে আপনি কখনো মনে করবেন না যে, আপনি তাকে অনুসরণ করছেন। আপনার মনে হবে আপনি সবার সঙ্গেই যাচ্ছেন।
এ পরিমাণের সম্মান ও বিশ্বাস অর্জন কম সময়ে সম্ভব নয়। ভালো কর্মীরা শুধুমাত্র সংক্ষিপ্ত সময়ের বিষয়কে প্রাধান্য দেন না, তারা দীর্ঘ সময়ের বিষয়কেও প্রাধান্য দেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করে থাকেন।
স্বেচ্ছাসেবক হোন: ভালো কর্মীরা প্রকৃতিগতভাবেই স্বেচ্ছাসেবক হয়ে থাকেন। তারা অতিরিক্ত কাজের জন্য স্বেচ্ছা শ্রম দিয়ে থাকেন। কোনো দায়িত্ব অর্পণের আগেই তারা দায়িত্ব পালনে সচেতন থাকেন। তারা নতুন কর্মীদের প্রশিক্ষণ প্রদানে ও তাদের পরামর্শ প্রদানে স্বেচ্ছা শ্রম দিয়ে থাকেন। তারা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সবাইকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।
স্বেচ্ছাশ্রম কেন প্রয়োজন? প্রশ্ন আসতেই পারে। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবো কেন? যাদের মনে এমন প্রশ্ন আসবে তারা নেতৃত্বের যোগ্যতা সম্পন্ন না। স্বেচ্ছাসেবক নেতৃত্বের গুণাবলিকে প্রদর্শন করে। নেতারা সক্রিয় থাকেন। আর সক্রিয় ব্যক্তিদের কোনো কাজ সম্পাদনের জন্য বলে দিতে হয়না। তারা সেই কাজ আগে থেকেই করতে থাকেন।
সফল কর্মীরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পদোন্নয়ন পেয়ে থাকেন যেমনটি হয়ে থাকে ভালো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের। তারা তাদের সেবার মানের মাধ্যমে সমাজে পরিচিতি পেয়ে থাকেন এবং তাদের ব্যবসা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
যারা স্বেচ্ছাসেবক নন তারা কোনো কাজের ব্যাপারে অপেক্ষা করেন যে, তাদের কখন কাজ করার জন্য জিজ্ঞাসা করা হবে। এবং তারা অতিরিক্ত কোনো কাজ করার আগেই ক্ষতিপূরণের কথা ভাবেন। স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের কাজ করে যেতে থাকেন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ক্যারিয়ার আগে বাড়তে থাকে।
আত্ম-সচেতন হোন, স্বার্থপর নয়: আত্ম-সচেতন ব্যক্তিরা তাদের নিজেদের সম্পর্কে জানেন আর এর ফলে তারা তাদের আশেপাশে মানুষদেরও সহজে বুঝতে পারেন। তারা অন্যের কষ্টের ব্যাপারে সহানুভূতিশীল হন। কেননা তারা কোনো কাজে ব্যর্থতার কষ্টের ব্যাপারে অবগত।
তারা সমবেদনা ও উদারতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিতে পারেন। কারণ অসম্মান, অপমান ও ঘৃণা ভরা আচরণের কষ্টের ব্যাপারে জানেন। কাউকে তার সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিতে তারা সকল প্রকার চেষ্টা চালিয়ে যান। কারণ তারা এটাও জানেন সাফল্য অর্জনের পথে পিছিয়ে পড়লে কতটা ভোগান্তি পোহাতে হয়।
আত্ম-সচেতন কর্মীরা নিজ স্বার্থে নয় বরং তাদের দল, প্রতিষ্ঠান তথা কাস্টমারের প্রয়োজনে কাজ করে থাকেন। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য তাদের মূল কার্যক্রমে আত্ম-সচেতন ব্যক্তিদের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ জরুরি।
পরিবর্তনকে মেনে নিতে হবে: যেসকল প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বা লাভের পরিমাণ বেশি থাকে সেসকল প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত নানাবিধ পরিবর্তন ঘটে থাকে। যারা অধৈর্য তারা এই পরিবর্তনকে সহজে মেনে নিতে পারেনা। ফলে সচেতন বা অবচেতনভাবে তারা ধীরে ধীরে আশেপাশের কাজগুলোর গতি কমিয়ে দেয়।
সফল চর্চা গুরুত্বপূর্ণ। কাজ সম্পাদনের পদ্ধতিও গুরুত্বপূর্ণ। নির্দেশিকা, পদ্ধতি, নীতি এসবই কোনো ব্যবসাকে সফলভাবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।
সফল কর্মীরা পরিবর্তনের ব্যাপারে আগ্রহী থাকে এবং প্রবল ইচ্ছা পোষণ করে। সফল কর্মীরা উদ্ভুত নতুন কোনো পরিস্থিতিকে সহজেই মেনে নেয়। মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে তারা কোনো প্রকার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে থাকেনা।
যেসকল প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার গতি বেশি তাদের এমন কর্মী প্রয়োজন যারা যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে এবং সামনে এগিয়ে যাবে।