1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৮ অপরাহ্ন
ব্রেকিং নিউজ

অনুপস্থিত শিক্ষককে উপস্থিত দেখিয়ে বেতন উত্তোলন নেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কাজী মনিরুজ্জামান

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০২২
  • ৬২০ বার দেখা হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার :
মাদ্রাসায় না গিয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতা নেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান। মানিকগঞ্জের নয়াকান্দি এলাকার দোয়াত আলী দাখিল মাদ্রাসার (প্রতিষ্ঠানের কোড-২৮০৪০৬২১০১) এই শিক্ষক গত দুই বছর ধরে অনুপস্থিত। অসুস্থতার কারণে দাঁড়িয়ে ক্লাস নিতে কষ্ট হয় বলে তিনি মাদ্রাসায় যান না। তবে নিয়মিত বিয়ে পড়ানোর কাজটি ঠিকই করেন। মানিকগঞ্জ পৌরসভা এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নিবন্ধিত নিকাহ রেজিষ্টারও তিনি। কোর্ট এলাকায় সারাদিন ঘুরে ঘুরে বিয়ে পড়াতে দেখা যায় তাকে। দীর্ঘ ১৫ বছর কোর্ট মসজিদে ইমামতিও করেছেন মনিরুজ্জামান।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ এর ১১.১০ (ক) বিধান মোতাবেক ‘বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশ প্রাপ্তির জন্য আবেদনকারী শিক্ষক-কর্মচারীগণ একই সাথে একাধিক পদে চাকুরীতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না।’

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ধারা ২ ও পেনাল কোড এর ধারা ২১ এর উপধারা ১২ (ক) অনুযায়ী, ‘কোন সরকারি কর্তব্য সম্পাদনের জন্য সরকারের চাকুরিতে বা বেতনভুগেী হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন বা ফি অথবা কমিশন আকারে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন’ সেও সরকারি কর্মচারীরূপে গণ্য হবেন। সে হিসেবে একজন এমপিওভুক্ত শিক্ষক সরকারি কর্মচারী, একই বিধান মোতাবেক কমিশন আকারে পারিশ্রমিক গ্রহণ করায় নিকাহ রেজিস্টার পদও সরকারি কর্মচারী হিসাবে গণ্য। দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী, সরকারের দুই পদে একই সাথে কর্মরত থাকা অপরাধ অর্থ আত্মসাতের সামিল।

২০২০ সালের ৬ জানুয়ারি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিস্টাররা একইসঙ্গে সরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা ভোগ করতে পারেন না। কোন নিকাহ রেজিস্টার তার নিজ অধিক্ষেত্রের বাইরে কোন সরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হিসেবে বা অন্য কোন পদে চাকরি করলে তার লাইসেন্স বাতিলসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মো. মনিরুজ্জামান একই সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও নিবন্ধিত নিকাহ রেজিস্টার। মনিরুজ্জামানের এমপিও ইনডেক্স নং- ডি২০০৬৬৬২, পে কোড-১০, অগ্রণী ব্যাংক হিসাব নং- টি-৯৮৬। শিক্ষকদের দেওয়া মাদ্রাসার গত জুন মাসের বেতন শিটে দেখা যায়, প্রতি মাসে তার বেতন মঞ্জুরি করা ২০ হাজার ৯৬০ টাকা। কল্যাণ ট্রাস্ট ও রিটায়ারমেন্ট বেনিফিটের টাকা বাদে জুন মাসেও তিনি বেতন তুলেছেন ১৯ হাজার ১৪ টাকা।

মাদ্রাসায় না এসে, ক্লাস না নিয়ে শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান কিভাবে নিয়মিত বেতন-ভাতা পান জানতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার মতিউর রহমান বলেন, বিষয়টি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি অবগত আছেন। শিক্ষক মনিরুজ্জামান সপ্তাহে একদিন এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন।

মো. মনিরুজ্জামান বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। দাঁড়িয়ে ক্লাস নিতে পারি না। এজন্য দুই বছর ধরে ক্লাস নেই না। তবে সপ্তাহে একদিন গিয়ে হাজিরা দিয়ে আসি। তিনি বলেন, আমি চাকরি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি, মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বিল্লাল হোসেন আমাকে চাকরি ছাড়তে দেননি। বিল্লাল হোসেন আমাকে বলেছেন, আপনার এমপিও বাতিল হলে, একজন শিক্ষককে নতুন করে এমপিও করাতে অনেক দৌঁড়ঝাপ করতে হবে। এর চেয়ে আপনি থেকে যান। আপনার পরিবর্তে প্রয়োজনে আমরা একজন খন্ডকালিন শিক্ষক নিয়োগ দেব।

মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি ও মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বিল্লাল হোসেন বলেন, দুই বছর হলো আমি মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরে এসেছি। আর শিক্ষক মনিরুজ্জামান দুই বছর ধরে মাদ্রাসায় অনিয়মিত। অতএব আমি তাকে চাকরি ছাড়তে নিষেধ করেছি বা খন্ডকালিন শিক্ষক নিয়োগ দিতে চেয়েছি, এমনটা নয়। ওই শিক্ষক নিজের অপরাধ চাপা দিতে আমার কথা বলেছেন।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বর্তমান সভাপতি এ্যাড আবু বকর সিদ্দিক (তুষার) বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। মাদ্রাসা সুপার এ বিষয়ে আমাকে কিছু জানাননি। আর মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও পৌর মেয়র রমজান আলী বলেন, আমি জানতাম ওই শিক্ষক অসুস্থ। এজন্য তিনি তার পরিবের্ত একজন খন্ডকালিন শিক্ষক দিয়েছেন। তবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসায় আসেন না বা ক্লাস নেন না, এটা জানতাম না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নার্গিস সুলতানা বলেন, এমপিওভুক্ত একজন শিক্ষককে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হবে। সে অসুস্থ হলে মেডিকেল রিপোর্ট দেখিয়ে ছুটি নিতে পারবেন। তবে তার পরিবর্তে প্রক্সি বা বদলি কিংবা খন্ডকালীন শিক্ষক দেওয়ার সুযোগ নেই। এমনটা হলে তার এমপিও বাতিল হবে। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান শিক্ষা কর্মকর্তা।

মানিকগঞ্জ জেলা রেজিস্টার জেড এম ইমরান আলী বলেন, মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তবে সে যে এমপিওভুক্ত শিক্ষক, এটা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury