স্টাফ রিপোর্টার: লেহা-পড়া করলে মাইনষে অনেক সম্মান করে। সুখে শান্তিতে থাকা যায়। সকাল থেইকা রাইত পর্যন্ত কাম (কাজ) করি। সেই টেহা মার (মায়ের) কাছে দেই। ওই টেহা দিয়াই সংসার চলে। লেহা-পড়া করার কপাল আমাগো নেই বলে সোজা সাপটা মন্তব্য করেন নয় বছরের শিশু পলাশ দাস। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে বিভিন্ন ফেরিতে ঘুরে ঘুরে মানুষের জুতা সেলাই ও জুতা কালি করে পলাশ। মাত্র নয় বছর বয়সেই অর্থের সন্ধানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ায় সে। পারিবাকি অভাব অনটনে কখনোই স্কুলে যাওয়া হয়নি পলাশের। একই মন্তব্য করলো পলাশের সহকর্মী তাপস দাস (৯)। সিরাজগঞ্জের বাগবাড়ি এলাকার অজিত দাসের ছেলে পলাশ। চার বছর আগে স্ট্রোক করে মারা যায় পলাশের বাবা। বড় এক ভাই ও ছোট এক বোন আর মা রয়েছে পলাশের পরিবারে। পরিবারের অর্থ জোগাতে পলাশের বড় ভাইও রয়েছে একই পেশায়। আর মা গৃহিনী। মাঝে মধ্যে অন্যের বাড়িতেও কাজ করেন পরিবারের সচ্ছলতার আশায়। রোববার দুপুরে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথের মাঝ পদ্মায় রো রো (বড়) ফেরি কেরামত আলীতে কথা হয় শিশু পলাশ ও তাপসের সঙ্গে। পলাশ জানায়, পলাশ কোলে থাকায় অবস্থায় তার বাবা স্ট্রোক করে মারা যান। অভাবের তাড়নায় বাধ্য হয়েই বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে জুতা সেলাইয়ের কাজ আয়ত্ত করে সে। প্রায় বছরখানেক ধরে বিভিন্ন ফেরিতে ঘুরে ঘুরে জুতা সেলাইয়ের কাজ করে সে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কোনোদিনও স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তার। সারাদিন কাজ করে দেড় থেকে দুইশো টাকা উপার্জন হয় তার। পুরো টাকাই মায়ের হাতে তুলে দেয় পলাশ। পাটুরিয়া ফেরিঘাটের পাশে একটি ভাড়া বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকে পলাশ। এভাবেই চলছে পলাশের জীবন। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার মনিরামপুর এলাকার স্বপন দাসের ছেলে তাপসের জীবন গল্পও পলাশের মতোই। তিন ভাই আর দুই বোন আর মাকে নিয়ে তাপসের পরিবার। বাবা স্বপন দাসের পেশাও ছিলো জুতা সেলাই করা। বাবার কাছ থেকেই তাপসের হাতেখড়ি। মাত্র কয়েকদিন মন্দিরে গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করলেও টাকার অভাবে স্কুলে ভর্তি হওয়া হয়নি তার। পরিবারের ব্যয় মেটাতে এখন বিভিন্ন ফেরিতে ঘুরে বেড়ায় মানুষের জুতা সেলাইয়ের কাজে।একই ফেরিতে তাপসের সহকর্মী মধ্যবয়সী যুবক সুজন দাস জানায়, পারিবারিক অভাব অনটনের কারণে এই বয়সেই পলাশ ও তাপসের কাজে আসা। এ রকম আরও অনেক শিশুই এই বয়সে জুতা কালি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে রয়েছে। পেটে ভাত না থাকলে পড়ার খরচ কিভাবে আসবে বলে জানতে চায় সুজন। তাই বাধ্য হয়েই পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য জুতা কালি করা থেকে বিভিন্ন কাজে জড়িত রয়েছে এসব শিশুরা।