ভিডিও শেয়ারিং পোর্টাল ইউটিউব কারও মাধ্যমে নয়, সরাসরিই বাংলাদেশে আসছে। অক্টোবরের মধ্যে দেশে অফিস চালু করবে বলে ইউটিউব জানিয়েছে। বিশ্বের ৬১তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে তাদের এই অফিস চালু হচ্ছে।
জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইউটিউব কর্তৃপক্ষ আমাকে জানিয়েছেন স্থানীয় আইন মেনেই তারা অফিস করবে। এজন্য তাদের কারও সহায়তা বা পৃষ্ঠপোষকতা লাগবে না। নিজেদের নয়, তারা বাংলাদেশের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ফলো করবে বলে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। অফিস হলে ইউটিউবে আমাদের ইজি একসেস পাওয়া যাবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার সঙ্গে তাদের বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু ইউটিউব আমাকে তাদের ইতিবাচক মনোভাব জানিয়ে দিয়েছে। হয়তো আগামীতে অফিসিয়াল ভিজিট হতে পারে।’ তিনি বলেন, “দেশের কয়েকটি টিভি চ্যানেলের ‘ইউটিউব চ্যানেল’ ভালো করছে। এগুলোতে দৃষ্টি পড়েছে ইউটিউব কর্তৃপক্ষের। তারা মনে করছেন ভবিষ্যতে বাংলাদেশে তাদের ভালো একটা বাজার হবে, কনটেন্টের হাব হবে। এমনকি বিজ্ঞাপনের বাজারকেও তারা বিশাল সম্ভাবনাময় বলেও মনে করছেন।”
দেশের একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলের অনলাইন ভার্শনের প্রধান বলেন, ‘ইউটিউব ওই অর্থে কাউকে পাত্তা দেয় না। যদি ওরা কাউকে প্রয়োজন মনে করে তাহলে নিজে থেকেই তার কাছে আসে। ফলে ইউটিউব কারও মাধ্যমে এদেশে আসছে এটা ভাবার কোনও যৌক্তিক কারণ নেই। ইউটিউব অনেক আগে থেকেই এদেশকে নজরে রেখেছে। ফলে ব্যবসায়িক সম্ভাব্যতা যাচাই করেই তারা এদেশে আসছে। তারা নিজেরাই অফিস করবে। বরং তারা সম্ভাবনাময় কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তাদের পার্টনার করে নেয়। সিএমএস (কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) দেয়।’ তার প্রতিষ্ঠান আরও ৪ বছর আগে সিএমএস পেয়েছে বলে তিনি জানান।
ওই কর্মকর্তা জানান, তার প্রতিষ্ঠানের ২২টি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সম্প্রতি একটি চ্যানেল গোল্ডেন বাটন পেয়েছে। শিগগিরই আরেকটি চ্যানেল গোল্ডেন বাটন পাবে। তিনি আরও জানান, এই চ্যানেলগুলো থেকে ইউটিউব প্রতি মাসে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ আয় করে থাকে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তবে ইউটিউব দেশে এলে ভালো কিছুই হবে। কোনও সমস্যা হলে দ্রুত সমাধান করা যাবে। নতুন নতুন ব্যবসার দ্বার উন্মুক্ত হবে।
জানা গেছে, দেশের একাধিক টিভি চ্যানেল এরই মধ্যে ইউটিউব থেকে গোল্ড বাটন পেয়েছে। দেশে সিলভার বাটন এসেছে অসংখ্য।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়েছে। দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ফেসবুক, ইউটিউবে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখছে। এই বিষয়টিকেই ইউটিউব আরও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশে অফিস চালু হলে ইউটিউবভিত্তিক নতুন নতুন ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরি হবে।
প্রসঙ্গত, কোনও চ্যানেল ১০ লাখ গ্রাহকের মাইলফলক অর্জন করলে স্বীকৃতিস্বরূপ ইউটিউবের পক্ষ থেকে গোল্ডেন প্লে বাটন দেওয়া হয়। দেশের একাধিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে ইউটিউবে তাদের চ্যানেলের গ্রাহকপ্রিয়তার কারণে অ্যাপ্রিসিয়েশন হিসেবে গোল্ডেন প্লে ও সিলভার প্লে বাটন পেয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ইউটিউবের ট্রাস্টেড ফ্ল্যাগার ‘প্রেনিউর ল্যাব’-এর প্রধান নির্বাহী আরিফ নিজামী বলেন, ‘ইউটিউব যে দেশেই যায় সেখানে নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেই যায়। তবে স্থানীয় আইন তারা মেনে চলে। তবে মধ্যস্থতাকারীর কোনও ধার ধারে না এই পোর্টালটি। তিনি আরও বলেন, দেশে ইউটিউবের বাজার বড় হচ্ছে। কনটেন্ট বাড়ছে। বিদেশি বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি দেশি বিজ্ঞাপনও বাড়ছে। তবে টাকার অংকটা ঠিক এখনই বলা যাবে না।’
এদিকে কিছুদিন আগে তথ্যপ্রযুক্তি খাত সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জানা গিয়েছিল বাংলাদেশ থেকে গুগল, ফেসবুক ও ইউটিউব বছরে হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে।