স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদ ও চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে চলেছেন। নতুন মন্ত্রিসভার শপথ নিচ্ছে আগামীকাল সোমবার। নতুন মন্ত্রিসভারয় ঠাই পেতে পারেন প্রায় ৬০ জন। পুরনোদের মধ্যে প্রায় এক ডজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বাদ পড়ছেন বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন। সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে সরকার গঠনের জন্য নিয়ে আমন্ত্রণ জানান। এরপর গত দুদিন ধরে মন্ত্রিসভা গঠন নিয়ে শেখ হাসিনা হোমওয়ার্ক করছেন। রোববারের মধ্যেই তার নতুন মন্ত্রিসভার জায়গা পাওয়াদের তালিকা চুড়ান্ত করার কথা রয়েছে। এরপর নির্বাচিতদের এই তালিকা চলে যাবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ব্যস্ততা বাড়বে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের. দীর্ঘদিনের রেওয়াজ অনুযায়ী নতুন মন্ত্রিসভার প্রতিটি সদস্যকে ফোন করে তিনিই জানাবেন সুসংবাদ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে মন্ত্রিপরিষদের তালিকা হাতে পাওয়ার পর পরই শপথ অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শপথের আগে সকাল থেকেই তালিকায় স্থান পাওয়া ভাগ্যবান মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের টেলিফোন করে শপথ গ্রহণের জন্য বঙ্গভবনে আসার আমন্ত্রণ জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই এখন মন্ত্রিত্ব পাওয়ার আশায় প্রহর গুণছেন। কারা এবার মন্ত্রিপরিষদে জায়গা পাচ্ছেন সেই তালিকা এখন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ল্যাপটপে। তবে তালিকায় স্থান পেতে নেতারা নানাভাবে দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান এমন প্রচারণা চালাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন গণভবনে।
এই তালিকায় যেমন তরুণরা রয়েছেন তেমনি পছন্দের মন্ত্রণালয় এবং পরিষদে নিজের জায়গা নিশ্চিত করতে তোড়জোড় চালাচ্ছেন সিনিয়ররাও। টেকনোক্র্যাট কোটায় এবার কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে এমন সংবাদের পর সংসদ সদস্যদের বাইরের কিছু নেতাও শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। আওয়ামী লীগের বাইরে মহাজোটের শরিক দলগুলোর নেতারাও রয়েছেন এই তালিকায়। সকলেরই এক অপেক্ষা, কখন ফোনে কল আসবে আর বলা হবে, ‘শপথ নেয়ার জন্য …টার সময় আপনাকে বঙ্গভবনে আসতে হবে’।
ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের কাছ থেকে প্ওায়া তথ্য অনুযায়ী, টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ফের জোটগতভাবেই সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। মন্ত্রিসভার কলেবর এবার বাড়ানো হয়েছে। ৬০ সদস্যের মন্ত্রিসভা হতে পারে বলে জানা গেছে।
গণভবনের একাধিক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী এই মেয়াদে সুশাসন ও দুর্নীতি দমনের প্রতি বেশি নজর দেবেন।রযে মন্ত্রীরা গত পাঁচ বছরে কিছু কাজের মাধ্যমে সরকারকে বিব্রত করেছেন, সমালোচনায় ফেলেছেন, তারা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন না- এটি এক প্রকার চূড়ান্ত। যারা নিজ মন্ত্রণালয়ের কিছু জটিল সমস্যা নিজেরা সুরাহা করতে পারেননি, এবারের মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়ছেন তারা। কাজেই বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে এমন কয়েকটি ক্যাটাগরিতে বাদ পড়ছেন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। একই সঙ্গে এবারের সরকারে যুক্ত থাকছেন না মহাজেটভুক্ত জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা। তারা এবার সংসদে প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করবেন। একারণেও বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ পড়ছেন জাতীয় পার্টির একজন মন্ত্রী ও দুজন প্রতিমন্ত্রী। তবে মহাজোটের শরিক দল হাসানুল হক ইনুর জাসদ, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি-জেপি ও রাশেদ খান মেননের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রতিনিধি হয়তো থাকছেন নতুন মন্ত্রিসভায়।
সূত্র জানায়, পুরনোদের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের অন্তর্ভুক্ত হওয়াটা। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল) এবার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেতে পারেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী করা হতে পারে ড. আবদুল মোমেনকে।
এবারের মন্ত্রিসভার গঠন নিয়ে যারা ইতিবাচক আলোচনায় রয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনে সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন, টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, চাঁদপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. দীপু মনি, চাঁদপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য রফিকুল ইসলাম আগেও মন্ত্রী ছিলেন।
একেবারেই নতুনদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন নেত্রকোনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অসিম কুমার উকিল। যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মইনুদ্দিন খান বাদল, সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য একে আব্দুল মোমেন, পিরোজপুর-১ আসনের শ ম রেজাউল করিম, চাঁদপুর-৪ আসনের শফিকুল রহমান, দিনাজপুর-৩ আসনের খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শরীয়তপুর-২ আসনের এনামুল হক শামীম, রংপুর-৪ আসনের টিপু মুনশি, নাটোর-৪ আসনের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ঠাকুরগাঁও-২ আসনের দবিরুল ইসলাম, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস।
নতুন মন্ত্রিপরিষদে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনায় আরও যাদের নাম ইতিবাচক তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে তারা হলেন চট্টগ্রাম-৯ আসনে সংসদ সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের হাবিবে মিল্লাত, নওগাঁ-৬ আসনের ইসরাফিল আলম, গাজীপুর-২ আসনের জাহিদ আহসান রাসেল, গাজীপুর-৪ আসনের সিমিন হোসেন রিমি। এছাড়াও মন্ত্রী হচ্ছেন কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ।
মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েতে পারেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামাল, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। তবে মন্ত্রিসভা গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরই নির্ভর করছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।