ধামরাই প্রতিনিধি : ধামরাইয়ে পাঁচ বছরের শিশু মনির হোসেনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ হিসেবে দাবি করে ১০ লাখ টাকা। ওই টাকা মনিরের বাবা দিতে ব্যর্থ হয়। এরআগেই অপহরণকারীরা মনিরের মুখে স্কসটেপ দিয়ে আটকিয়ে দম বন্ধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। অপহরণকারীদের মধ্যে এক অপহরণকারীর বাড়ী থেকেই লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত উপজেলার সদর ইউনিয়নের আশুলিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মুদি দোকানী মাজেদুল ইসলাম ও জয়পুরা গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে রাজমিস্ত্রি মানসুরকে সোমবার রাতে আটক করে পুলিশ। এছাড়া দিনভর অভিযান চালিয়ে কালামপুর এলাকা থেকে রাব্বি (২৭) কে আটক করেছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন।
আটকৃতদের বরাদ দিয়ে ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ-ঢাকা উত্তর) সাইদুর রহমান সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংএ জানান, ধামরাই সদর ইউনিয়নের আশুলিয়া গ্রামের সোনা মিয়া ওরফে কালা মিয়ার পাঁচ বছরের ছেলে মনির হোসেনকে তার বাড়ীর কাছ থেকে শনিবার সন্ধ্যায় অপহরণ করে একই গ্রামের মূল পরিকল্পনাকারী আবুল হোসেনের ছেলে মুদি দোকানদার মাজেদুল ইসলাম (২২) ও মিশু মিয়ার ছেলে রাব্বি। যখন মনিরকে অপরহণ করা হয় তখন অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী মাজেদুল ও মনিরের বাবা কালা একত্রে মাগরিবের নামায পড়তে যায় স্থানীয় মসজিদে। এ কৌশলে মাজেদুলের দোকানের সামনে থেকে মনিরকে অপরহণ করা হয়। পরক্ষণেই মনিরের মুখে স্কসটেপ দিয়ে আটকিয়ে দেয় রাব্বি। পরে রাব্বি একটি বস্তায় মনিরকে ভরে একটি বাঁশঝাড়ের ভিতর রেখে দেয়। মাজেদুল নামাজ পড়ে দোকানে আসে। এরপর রাব্বি ও মাজেদুল মিলে রাত এগারটার দিকে বস্তাবন্দী অবস্থায় মনিরকে নিয়ে যায় রাব্বিদের বাড়ী গোয়ালঘরের পিছনের একটি গর্তে। মনিরকে নেওয়ার আগে ঐ রাতেই গোয়ালঘরের পিছনে গর্ত করে রেখে আসে অপহরণকারীরা। এদিকে খবর দেওয়া হয় উপজেলা জয়পুরা গ্রামের আবদুল হামিদের ছেলে মানসুরকে (৪০)। মাজেদুলের ফুফাতো ভাই মানসুর। থবর পেয়ে মানসুর ওই রাতেই মাজেদুলের বাড়ীতে চলে আসে। তারা তিনজন মিলে রাব্বিদের গোয়ালঘরের পিছনে গর্ত করে রাখে। সেখানে রাত এগারটারদিকে মনিরকে বস্তাবন্দী অবস্থায় নিয়ে রাখা হয়। মাজেদুল, রাব্বি এবং মানসুর প্রায় দুই মাস আগেই পরিকল্পনা করে মনিরকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করবে। এ টাকা থেকে মাজেদুল পাঁচ লাখ টাকা ও মানসুর ৫০ হাজার ও রাব্বি ১ লাখ টাকা ঋণ পরিশোধ করবে। মানসুরের ইচ্ছা ছিল মনিরকে নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে ঘুরে বেড়াবে মানিকগঞ্জের ঝিটকা এলাকায়। এরমধ্যে হয়তো মুক্তিপণের দশ লাখ টাকা পেয়ে যাবে তারা।
এদিকে তিনজনে মিলে রবিবার সকালে মনিরের বাবার মোবাইল ফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ঘটনার পরই মনিনের বাবা রবিবার সকালে থানায় জিডি করে। ধামরাই থানা পুলিশ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপহরণকারীদের আটক করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। সবশেষ মাজেদুল ও মানসুরকে তাদের নিজ নিজ বাড়ী থেকে আটক করে সোমবার গভীর রাতে। তবে রাব্বিকে আটক করতে পারেনি। আটকদের তথ্যে মঙ্গলবার মনিরের লাশ উদ্ধার করা হয় রাব্বিদের গোয়াল ঘরের পিছনের একটি গর্ত থেকে। লাশের ময়না তদন্তের জন্য রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং-৩৪।
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, জিডিতে উল্লেখিত মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে মূল পরিকল্পনাকারীদের দু’জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী নেওয়ার জন্য আগামীকাল (আজ বুধবার) আদালতে পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, মনিরের বাবার কাছ থেকে মাসে ৫ হাজার টাকা সুদ দেওয়ার শর্তে ১ লাখ টাকা সুদে নেয় মাজেদুল।