বিশেষ প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জের সিংগাইরের পাড়িল গ্রামে ভাষা শহীদ রফিক স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগারে দিন দিন কমে যাচ্ছে লোক সমাগম। যাতায়াতের অসুবিধাসহ স্মৃতি যাদুঘরে স্মৃতি চিহৃ ও পাঠাগারে প্রয়োজনীয় মুক্তিযুদ্ধের বই না থাকায় মানুষ খুব একটা যাচ্ছেনা সেখানে। এছাড়া জাদুঘরে শহীদ রফিকের কোন স্মৃতি চিহ্ন নেই। গ্রন্থাগারে অনেক বই থাকলেও ভাষা শহীদদের নিয়ে কোন বই নেই। এতে এলাকাবাসী, পাঠক ও দর্শনার্থীদের মাঝে রয়েছে নানান ক্ষোভ। শহীদ রফিকের বীরত্ব গাঁথা অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে জাদুঘরে স্মৃতিচিহ্ন ও ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই সংরক্ষনের দাবী রয়েছে স্থানীয়দের।
যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা তৈরী হলে পাড়িল গ্রামের রফিক নগরটিও হতে পারে একটি বড় পর্যটন কেন্দ্র।
৫২’র ভাষা আন্দোলনের প্রথম বীর- শহীদ রফিক। ২০০০ সালে এই সুর্য সন্তানকে মরনোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়। মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার পাড়িল গ্রামে জন্ম নেওয়া রফিকের নামে গ্রামটির নামকরন করা হয় রফিকনগর।
২০০৮ সালের ২৪ মে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদ রফিক নগরে নির্মাণ করে ভাষা শহীদ রফিক উদ্দিন আহমদ স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার। নির্মানের পর বাংলা একাডেমী থেকে বেশ কিছু বই দেওয়া হয় পাঠাগারে। কিন্তু স্মৃতি জাদুঘরে শহীদ রফিকের ব্যবহার্য কোন জিনিসপত্র কিংবা স্মৃতিচিহ্ন রাখা হয়নি। আশপাশের এলাকার মানুষ, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা মাঝে মধ্যে জাদুঘর ও পাঠাগারে আসে। কিন্তু প্রয়োজনীয় বই না থাকায় তারা হতাশ হয়ে ফিরে যায়। জাদুঘরে স্মৃতিময় কোন জিনিসপত্র না পেয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরী হয়।
স্থানীয়রা জানায়, ফেব্রুয়ারি মাস এলেই সরগরম হয়ে উঠে জাদুঘর-গ্রন্থাগারটি। বছরের বাকী সময় থাকে অযত্ন আর অবহেলায়। জাদুঘরে কিছু আলোকচিত্র থাকলেও নেই রফিকের কোন স্মৃতি চিহ্ন। পাঠাগারে কিছু বই থাকলেও সমকালীন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের অভাব রয়েছে। শহীদ রফিকের ওপর একটিমাত্র বই থাকলেও অন্য কোন ভাষা শহীদের কোন বই নেই গ্রন্থাগারে। এতে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস জানতে পারছে না নতুন প্রজন্ম।
পাড়িল গ্রামে যাওয়ার রাস্তাগুলোর বেহাল দশা। দুরদুরান্ত থেকে মানুষজন আসার কোন সুব্যবস্থা নেই। স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগারের পাশে থাকা-খাওয়ার কোন হোটেল কিংবা বিনোদনেরও কোন ব্যবস্থা নেই। তাই দিন দিন দর্শনার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, পাঠাগারে অনেক অনেক বই আছে। তবে সেগুলো বেশীরভাগই গল্পের বই। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলনের পটভুমি, ভাষা শহীদদের নিয়ে লেখা বইসহ সাময়িক বই না থাকায় তারা খুব একটা জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না। এসব বই সংযুক্ত করার দাবী করেছে তারা।
এলাকাবাসী জানায়, রফিক নগরকে সমৃদ্ধ করতে সেখানে বিনোদন কেন্দ্র, শিশুপার্ক গড়ে তুললে মানুষের সমাগম বাড়বে, মানুষ ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা জানতে পারবে।
জাদুঘর ও গ্রন্থাগারের লাইব্রেরিয়ান ফরহাদ হোসেন খান জানান, ২০০৯ সালের দিকে বাংলা একাডেমী কিছু বই দিয়েছিল। এরপর আর কোন বই কিংবা রফিকের স্মৃতিচিহ্ন পাওয়া যায়নি। জাদুঘর দেখতে আসা মানুষ হতাশ হয়ে ফিরে যায়। সমকালীন কোন বইও নেই পাঠাগারে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এখানে আসে। জেলা পরিষদ থেকে ওই মাসে ধুয়ে-মুছে পরিস্কার করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারির দিন এখানে অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এছাড়া বছরের বাকী সময় তেমন একটা গুরুত্ব পায়না এই জাদুঘর ও গ্রন্থাগার।
স্থানীয় বলধারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মাজেদ খান বলেন, তার ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভূক্ত এলাকায় পাড়িল গ্রামটি হলেও শহীদ রফিক নগরের স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার রক্ষনাবেক্ষন করে থাকেন জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ জাদুর ও পাঠাগারের দিকে সুনজর দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করলে লোকসমাগম বাড়বে। মানুষ দূর-দুরান্ত থেকে পাড়িল গ্রামে এসে শহীদ রফিক নগরীকে সমৃদ্ধ করবে।
এব্যাপারে মানিকগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শহীদ রফিকের স্মৃতি চিহৃ সংগ্রহের কাজ চলছে। পরিবারের সদস্যদের সাথে এরই মধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। রফিকের একটি রুমাল, ব্যবহৃত কলম, জামা-কাপড়সহ কিছু জিনিসপত্র পরিবারের কাছে রয়েছে। সেগুলো সংগ্রহ করে খুব শিগগরিই জাদুঘরে রাখা হবে। এছাড়া শহীদ রফিক নগরকে আরো সমৃদ্ধ ও জনসমাগম বাড়াতে সেখানে শিশুদের পার্কসহ বিনোদন কেন্দ্র নির্মানেরও পরিকল্পনা রয়েছে।