২০১৯-২০ অর্থবছরের নতুন বাজেটে থাকবে নতুন নতুন উদ্যোগ। আগামী বাজেটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালনের প্রতিফলন থাকবে। তবে বেশি মনোযোগ থাকবে নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির দিকে। ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী, গ্রামকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে। যেখানে ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে। আমার গ্রাম আমার শহর কার্যক্রম বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের হাতে। তবে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়কে এ কাজে সম্পৃক্ত করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন বাজেটে প্রাথমিকভাবে মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮.১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বেড়েছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে উন্নয়নের পাশাপাশি বেশকিছু খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দক্ষতা উন্নয়ন। সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়নে নানা ধরনের পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিও অগ্রাধিকার খাতে থাকছে। অগ্রাধিকার তালিকায় আরও রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সক্ষমতা অর্জন, সরকারি সেবাদানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন। এছাড়া বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ অধিক ব্যবহার, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি ও নতুন রফতানির বাজার অনুসন্ধানের বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নতুন বাজেটে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এসব প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে বাজেটে বরাদ্দ বেশি রাখা হবে। ব্যাংক ও ভ্যাট খাতে সংস্কার করা হবে। করের হার নতুন করে বাড়ানো হবে না। আর ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরে ঘোষণা থাকবে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৩.১ শতাংশের সমান। চলতি অর্থবছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারিত আছে ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার বেশি। নতুন বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি হচ্ছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা। এছাড়া প্রতিবছরের মতো নতুন বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশের মধ্যেই বাজেটের ঘাটতি রাখা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন এডিপিতে মোট প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৫৬৪টি। এর মধ্যে কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১৬টি, জেডিসিএফ প্রকল্প একটি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব প্রকল্প রয়েছে ৮৯টি ও বিনিয়োগ প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৩৫৮টি। সমাপ্তর জন্য নির্ধারিত প্রকল্প ধরা হয়েছে ৩৫৫টি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রকল্প ৬২টি। বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ২৪২টি এবং বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৪৫টি। বরাদ্দসহ অনুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ৪১টি।
নতুন এডিপিতে পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগসহ গুরুত্ব বিবেচনায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পদ্মা সেতু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় পরিবহন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৫২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ২৬.০৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ খাতে ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট এডিপির ১২.৮৩ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাত। এই খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১২ শতাংশ।
পর্যায়ক্রমে অন্যান্য খাতে বরাদ্দ হচ্ছে, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ১০.৫৫ শতাংশ। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ ১৭ হাজার ৫৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, যা মোট এডিপির ৮.৬৫ শতাংশ। পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ১৫৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ৭.৪৮ শতাংশ, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১৩ হাজার ৫৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বা ৬.৪৪ শতাংশ, কৃষি খাতে ৭ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বা ৩.৭৬ শতাংশ, পানি সম্পদ খাতে ৫ হাজার ৬৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বা ২.৭৯ শতাংশ, জনপ্রশাসন খাতে ৫ হাজার ২৪ কোটি টাকা বা ২.৪৮ শতাংশ বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে।
আগামী এডিপিতে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ ২৬ হাজার ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, আগামী বাজেট হবে সংস্কারমুখী। ব্যাংক ও ভ্যাট খাতে থাকছে ব্যাপক সংস্কার। অর্থবছরের শুরুতেই নতুন ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন (২০১২)’ কার্যকরের ঘোষণা থাকছে। সংস্কারের আওতায় থাকবে ব্যাংকসহ পুঁজিবাজার, সঞ্চয়পত্র ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি খাতও। তবে জনগণকে রাখা হবে ভ্যাট ও করের চাপমুক্ত। খুব বেশি কর চাপানো হবে না। করপোরেটসহ ক্ষেত্রবিশেষে কর হার কমানো হবে।
আসন্ন বাজেটে ব্যক্তি আয়কর সীমা কমানো হবে না। তবে করপোরেট কর হার কিছুটা কমানো হতে পারে। নতুন করে কোনও পণ্য বা সেবার ওপর কর চাপানো হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্তির ঘোষণা থাকবে। এটি একসঙ্গে ঘোষণা না দিয়ে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্তি করা হবে। এজন্য বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।