শুভংকর পোদ্দার, স্টাফ রিপোর্টার:
সোনালী আঁশ পাট এক সময় কৃষকের গলার ফাঁস হলেও এখন সোনালী স্বপ্ন হয়ে কৃষকের ঘরে ঘরে উঁকি দিতে শুরু করেছে। জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঝিটকা হাটে পাটের বাজার জমে উঠেছে এবং দামও রয়েছে মোটামুটি। পাট জাগ দেয়ার সময় পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকায় এবং শ্রমিকদের মজুরি বেশি হওয়ায় কৃষকের একটু বাড়তি খরচ হলেও দাম মোটামুটি পাওয়ায় কৃষক কিছুটা খুশী।
বাংলাদেশের পাটের তৈরী বিভিন্ন পণ্য বিশ্বের বাজার দখল করেছে। সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন জুট বিভাগে পাট পণ্য সামগ্রী বহুমুখীকরণ ও পাট পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধির হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে কাজ করছে। গতবার পাটের ভাল দাম পাওয়ায় হরিরামপুরে কৃষকরা পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এদিকে, পাটের উৎপাদন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। এছাড়া পাটের রং আর মান অনুসারে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত মণ দরে পাট বিক্রি করতে পারছেন কৃষকরা। নতুন করে সোনালি আঁশে সুদিন ফিরে আসায় পাটে আবার রঙিন স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।
এ ব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলার কয়েকজন পাট চাষী এবং পাট ব্যবসায়ী জানান, গত বছর প্রতি মণ পাট ১হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রয় হয়েছে। এতে করে হরিরামপুরের কৃষকরা পাট চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে এবং এলাকায় আগের চেয়ে অনেক পরিমাণ বেশী পাট চাষ হয়েছে। চলতি মওসুমে পাট গাছে পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। এছাড়া কয়েকজন পাট চাষী জানান, পর্যাপ্ত শ্রমিকের অভাবে পাট কাটা এবং জাগ দেয়া যাচ্ছেনা। আর যে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে তাদের মজুরী দিতে হচ্ছে ৬০০/৮০০ টাকা এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেশী হলেও বাজার দর মাঝারি থাকায় তারা কিছুটা খুশী তবে গতবছরের মতো দাম পেলে তারা আরো বেশি লাভবান হতো।
সরেজমিনে শনিবার মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার বৃহত্তর ঝিটকা হাটের পাট হাটায় গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে পাট ক্রয়/বিক্রয় কেন্দ্রগুলো যেন বহু বছর পর প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
চালা গ্রামের মোঃ আকতার মিয়া (৪৮) জানান, এবছর পানি একটু নামিতে হওয়ায় পাট ভালো হয়েছে তবে পাটের আশ ছাড়াতে বা পাট কাটতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের মজুরি দিতে হচ্ছে ৬০০/৮০০ টাকা তাই গতবারের চেয়ে এবার একটু খরচ বৃদ্ধি পাবে। মহাপুরা গ্রামে আরেক পাট চাষী হাফেজ উদ্দিন(৬২)জানান, সে এবছর দেড় (১/৫) বিঘা যায়গায় পাট চাষ করেছে। সেখানে তার প্রায় ১০হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং তার ঘরে ওঠেছে ১৫মণ পাট।
এছাড়াও এই হাটে ঘিওর উপজেলার মাশাইল গ্রাম থেকে আসা নতুন এক পাট চাষী মোঃ উজ্জ্বল হোসেন জানান, এই বছরই আমি প্রথম বাজারের সবচেয়ে ভালো জাতের বেলন পাট চাষ করেছি। ৩০শতাংশ যায়গায় পাট চাষ করতে আমার প্রায় ১১ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং আমি পাট পেয়েছি ৭মণ এতে আমার লস না হলেও লাভ হবেনা। তবে গত হাটেও এই পাট ২হাজার টাকা গেছে বলেও জানান। এইরকম ভাবে দাম পাওয়া গেলে তিনি আর পাট চাষ করবেন না বলেও এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
এছাড়া গত হাটের পাটের দামের চেয়ে এই হাটে কম কেনো তা জানতে চাইলে, পাট ব্যবসায়ী টনি সাহা, জামাল মোল্লা জানান, গতবছরের এবং গত দুই হাটের চেয়ে পাটের আমদানি বেশি হওয়ায় পাটের দাম একটু কমে গেছে।
এবিষয়ে হরিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জহিরুল হক জানান, গত বছরে হরিরামপুরে পাট চাষ হয়েছিলো, ৩৩০ হেক্টর জমিতে আর এইবছর তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৩৭৩ হেক্টর জমিতে।