শরীরের অতিরিক্ত ওজন এবং মেদ-ভুঁড়ি কমানোর জন্য খাওয়াদাওয়ার প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। আজকাল যাদের ডায়াবেটিস হয়েছে, তাদের অনেকেরই আসলে ওজন বেশি এবং অল্প বয়সেই মেদ-ভুঁড়ি হয়ে গিয়েছে। ওজন কমাতে পারলে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। এমনকি দেখা গিয়েছে যাদের চার বছর বা তার চেয়ে কম সময় ধরে ডায়াবেটিস হয়েছে, তারা খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে অতিরিক্ত ওজন কমানোর মাধ্যমে রক্তের অতিরিক্ত গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন
ফাস্টফুড কিংবা বাইরের কেনা খাবার পরিহার করুন
বার্গার-স্যান্ডউইচ এবং কোক-ফানটা জাতীয় ফাস্টফুড ওজন বাড়ানো, মেদ-ভুঁড়ি হওয়া এবং পরিণতিতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে অনেকে মনে করে থাকেন। এজন্য ফাস্টফুড কিংবা বাইরের কেনা খাবার পরিহার করা উত্তম। সবচেয়ে ভালো হয় যদি এক প্লেট খাবারের অর্ধেকটা সালাদ বা সবজি হয়; আর বাকি অর্ধেকের চার ভাগের তিন ভাগ প্রোটিনযুক্ত খাবার আর এক ভাগ শর্করা জাতীয় খাবার হয়।
শাকসবজি এবং ফলমূল বেশি খেতে হবে
সবজি এবং প্রোটিন বেশি পরিমাণে খাওয়া ওজন কমানোর জন্য উপকারী এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। শাকসবজিতে ক্যালরি কম। কিন্তু সহজে পেট ভরে এবং খুব ধীরে ধীরে শাকসবজির পুষ্টি উপাদান ধীরে ধীরে রক্তে প্রবেশ করে। ফলে সহসা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় না। সবজি-সালাদের সঙ্গে অলিভ অয়েল বা জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করতে পারলে আরও ভালো। জলপাইয়ের তেল শরীরের জন্য খুবই উপকারী। কামরাঙা, জাম, জামরুল, পেয়ারা, বাঙ্গি, আপেল, স্ট্রবেরি প্রভৃতি ফলে অন্য মিষ্টি ফলের তুলনায় অনেক কম শর্করা থাকে। এ জন্য যারা ওজন কমাতে চান, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান কিংবা মেদ-ভুঁড়ি কমাতে আগ্রহী তাদের এসব ফল বেশি বেশি খাওয়া উচিত।
প্রোটিনজাতীয় খাবারের পরিমাণ বাড়াতে হবে
শর্করা পরিহার করে তিন বেলা প্রোটিনযুক্ত খাবার খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যাওয়ার প্রমাণ রয়েছে। মাছ, মুরগির মাংস, ডিম, মটরশুঁটি এবং দুধ জাতীয় খাবারে প্রচুর প্রোটিন পাওয়া যায়।
দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কম হওয়া ভালো
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তি কঠোর ডায়েটিং করে, অর্থাৎ দিনে মাত্র ৬০০ ক্যালরি প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পর ওষুধ সেবন বন্ধ করতে পেরেছেন। অনেকে দীর্ঘ তিন মাস শর্করা জাতীয় খাবার পুরোপুরি পরিহার করে শুধু প্রোটিনযুক্ত খাবার খেয়েও উপকৃত হয়েছেন।
স্বাস্থ্যের জন্য বাদাম খাওয়া উপকারী
প্রতিদিন একমুঠো কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম, আখরোট প্রভৃতি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই
উপকারী। বাদাম যেমন ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, তেমন রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। বাদামের ম্যাগনেশিয়াম ইনসুলিনের প্রভাবকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
খাওয়াদাওয়ার সময়-অসময়
কী খাওয়া উচিত, কতটা খাওয়া উচিত এ নিয়ে নানারকম তথ্যের অভাব নেই। কিন্তু ইদানীং গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কী খাওয়া উচিত আর কতটা খাওয়া উচিত, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো কখন খাওয়া উচিত। আমাদের প্রত্যেকের দেহঘড়ি একেকজনের জন্য একেকরকম। মানুষের দেহঘড়ির ছন্দের সঙ্গে মিলিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে মানুষের শরীর সবচেয়ে ভালোভাবে কাজ করে। শরীরের প্রতিটি কোষ দেহঘড়ির ছন্দ অনুযায়ী কাজ করে। এর অর্থ হলো শরীরের প্রতিটি হরমোন এবং এনজাইম নিঃসরিত হয় দেহঘড়ির কাঁটা মেনে; এমনকি এই ঘড়ি ধরেই শরীরের প্রতিটি জিন তার কাজ করে যায়।
গবেষণায় দেখা যায় দেহঘড়ির নিয়ম মেনে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর প্রথম ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের শরীর সবচেয়ে দক্ষতার সঙ্গে খাদ্য হজম এবং তা থেকে পুষ্টি আহরণ করতে পারে। এরপর শরীর অন্য বিপাকীয় এবং মেরামতি কাজে ব্যস্ত থাকে। দিনের প্রথম ৮ থেকে ১০ ঘণ্টার বাইরে যখন কিছু খাওয়া হয়, তখন বিপাক ক্রিয়া এবং মেরামতের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এ জন্য সময়মতো খাওয়া যেমন উপকারী; অসময়ে খাওয়া-দাওয়া তেমন ক্ষতিকরও হতে পারে।
অতএব কী খাবেন, কতটা খাবেন এবং কখন খাবেন, এ তিনটি বিষয়ে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।