অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালতে (জাবি) স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনেছে অতিথি পাখির আগমন। শান্ত পানিতে লাল শাপলার মাঝে জলকেলিতে মেতে আছে অসংখ্য পাখি। অতিথি পাখির আগমনে ক্যাম্পাসের জলাশয়গুলো এরই মধ্যে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠেছে। পাখির কলতানে দিনভর মুখর থাকে এসব জলাশয়। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি পাখি এসেছে ক্যাম্পাসে।
কিছুক্ষণ পরই অবতরণ করল একঝাঁক পাখি, সঙ্গে সঙ্গে উড়ে গেল আরেক ঝাঁক। এসব পাখি এসেছে শত–সহস্র মাইল পাড়ি দিয়ে। তবে এদের দুরন্তপনা দেখে মনে হবে এ জায়গা যেন তাদের অতি চেনা, আপন নিবাস। ইট–পাথরের নগরী এমন দৃশ্য দেখতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মনকে আরও প্রশান্ত করে যেতে পারবেন। প্রতিবারের মতো চলতি শীত মৌসুমেও অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বিশ্ববিদ্যালয়।
চারপাশ গাছগাছালিতে ঢাকা, মাঝরাতে হঠাৎই একপাল শিয়ালের হুক্কা হুয়া চিৎকারে সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডেকে ওঠে রাতজাগা পাখি, ভেঙে যায় হাজার বছরের মধ্যরাতের নিস্তব্ধতা। বনের তীর ঘেষে বয়ে চলা আঁকা বাঁকা জলাশয়ে লাল সাদা শাপলা ফুল আর ডালে ডালে শিকারের আশায় বসে থাকা মাছরাঙ্গার তীক্ষ্ম চোখ। কখনওবা হর্ন বাজিয়ে ছুটে যায় দূরন্ত বাস, চারিদিক সরগরম থাকে মানুষের কোলাহলে, আড্ডায়। বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নান্দনিক এসব দৃশ্য ধারণ করে আছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। অতিথি পাখি, শীত, পাখি মেলা আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় যেন একে অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কারণ প্রতিবছর এ ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে আসে নাম না জানা অসংখ্য অতিথি পাখি।
আর এসব অতিথি পাখিকে কেন্দ্র করে ২০০১ সাল থেকে পাখি মেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। সম্প্রতি প্রতিবছরের ন্যায় এবারও পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হলো ১৮তম ‘পাখি মেলা–২০১৯’। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আর অতিথি পাখি মেলবন্ধনের নাম। জাবি কর্তৃপক্ষ অতিথি পাখির নিরাপদ বিচরণ ও বাসস্থানরে জন্য র্সবোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। দর্শনার্থীদের সচেতন করা ও যানবাহনের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা বাস্তাবায়ন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিসের এস্টেট শাখার অধীনে জলাশয়গুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও অতিথি পাখির নিরাপদ আবাস ব্যবস্থাপনার কাজ করে থাকে।
নিরাপদ আবাসস্থল মনে হওয়ায়র কারণেই জাবির লেকগুলোতে মূলত অতিথি পাখি আবার ফিরে এসেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, অতিথি পাখিদের খাদ্য সংগ্রহের জন্য জলাশয়গুলোর জলজউদ্ভিদ পরিষ্কার করে পাশে স্তূপ আকারে রাখা হয়েছে। যানবাহন রাখার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা নর্ধিারণ করা হয়েছে এবং হর্ন বাজানো নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ আরও জানান, অতিথি পাখি এসে ফিরে যায় পরে আবার আসার কারণ প্রকৃতির এক প্রকৃষ্ঠ আশীর্বাদ। অতিথি পাখিগুলো আমাদের আপন করে নিয়েছে। এখন সময় আমাদের তাদের নিরাপদে বিচরণ ও ঝুঁকিমুক্ত বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রকৃতির মাঝে অতিথি পাখি যেন সুষ্ঠু র্সবোচ্চ নিরাপদে বিচরণ করতে পারে সে দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানানো হয়।