শিবালয় প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর পারে ইউনিয়নের নাম তেওতা। এ এলাকায় আবাদী কৃষিজমির বিরাট একটা অংশ নারায়ণ তেওতা গ্রামের প্রায় এক শ একর জমি নিয়ে শাজাপুর বিল। বাপ-দাদার সময় থেকে এখানে মৌসুমভেদে নানা ফসল আবাদ করে আসছে স্থানীয় কৃষকরা। তবে আশপাশে ফসলি জমি হতে নিচু হওয়ার ফলে বর্ষার পানি বিল থেকে নিষ্কাশন না হওয়ায় খালটি গত পাঁচ বছর আগে পলি মাটি পরে ভরে যায়। এতে পানি বের হতে না পারায় সারা বছর ধরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ সুয়োগে স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী মিলে মাছচাষের কথা বলে খালটি খনন না করে বিলটিকে অনাবাদি করে রেখেছিল।
সাম্প্রতি এলাকার শতাধিক কৃষক শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য লিখিত আবেদন করেন। পরে ইউএনও তাৎক্ষণিক দুই লাখ টাকার একটি প্রজেক্ট দিয়ে খাল খননের ব্যবস্থা করেন। আজ শনিবার দুপুরে শতাধিক কৃষকদের নিয়ে খাল কেটে জলাবদ্ধতা নিরসনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, উপজেলার তেওতা এলাকার শাজাপুর বিলে প্রায় এক শ একর ফসলি জমি রযেছে। এ মাঠের ফসল দিয়ে সারা বছর চলে স্থানীয় কৃষকদের। এখানে এক সময়ে ধান, গম, সরিষাসহ সবধরনের ফসল আবাদ হতো। বিলটি বর্ষার পানি বেরিয়ে যাওয়ার খালটি বিগত কয়েক বছর আগে পলি জমে বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের ফসলি মাঠে ফসল হলেও বিলটিতে সারা বছরই পানি জমে থাকে। এতে কোনোপ্রকার ফসল আবাদ না হওয়ায় আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়ে স্থানীয় কৃষকরা।
নিরুপায় হয়ে সাম্প্রতি কয়েক শ কৃষক শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পরিত্রাণ চেয়ে লিখিত আবেদন করেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে ইউএনও সরেজমিন পরিদর্শন করে বিলটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য খান খনন করে জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যবস্থা করে দেন।
রফিক মল্লিক নামের স্থানীয় কৃষক জানান, এ বিলে আমার এক শ শতাংশ জমি রয়েছে। এ জমির ফসল দিয়েই সারা বছর সংসার চলত। কিন্তু গত কয়েক বছর আগে বিলটি থেকে পানি নিষ্কাশনের না হওয়ায় খালটি পলি মাটি পড়ে ভরে যায়। তার পর থেকে সারা বছর জমিতে জলবদ্ধতা থাকার কারণে কোনো ফসল আবাদ করা সম্ভব হচ্ছিল না। পরে আমরা বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করার পর তিনি নিজ উদ্যোগে খালটি খনন করে পানি বের করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। আশা করি চলতি বোরো মৌসুমে ধান চাষাবাদ করতে পারব।
তেওতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের জানান, এই খালটি খননের পরে এ এলাকার দীর্ঘদিনের বিরাট একটা সমস্যার সমাধান হয়েছে। এ বিলে একসময়ে সবধরনের ফসল হতো তা আবার ফিরে আসবে। স্থানীয় কৃষকরা ফসল উৎপাদন করে পুনরায় নিজেদের পাশাপাশি এলাকার চাহিদাও পূরণ করবে।
শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ জানান, বর্তমান সরকার কৃষিকাজের ওপর বেশ জোর দিয়েছেন। কৃষিকাজে কৃষকের একখণ্ড জমিও যাতে অনাবাদি না থাকে সে বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে আমি দ্রুত স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় সমাধান করার চেষ্টা করেছি। বিলটির পানি নিষ্কাশনের জন্য খালটি পুনরায় খনন করে জমে থাকা পানি পাশে যমুনা নদীতে বের করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আশা করি এবার থেকেই ধান চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারবে। কৃষকরা প্রশাসনের প্রতি কৃজ্ঞতা জানালেও আমি বিষয়টি আমার চাকরির দায়বদ্ধতা মনে করি।