আশরাফ লিটন:
বাবা শুধু দু‘অক্ষরের একটি শব্দ নয়। এটি একটি অনুভূতির নাম। বাবা কথাটার ব্যাপকতা যে কতটা বিশাল তার ব্যাখ্যা কোনভাবেই দেয়া সম্ভব নয়। আমার কাছে সেই ব্যাখ্যা নেই। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন। বাবা মানে নির্ভরতার আকাশ আর নিঃসীম নিরাপত্তার চাদর।
মরিয়া বাবর অমর হয়েছে, নাহি তার কোন ক্ষয়/ পিতৃস্নেহের কাছে হয়েছে মরণের পরাজয় — সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসা এতোটাই স্বার্থহীন যে সন্তানের জন্য নিজের প্রাণ দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না বাবা। ছোটবেলায় তার হাত ধরেই হাটতে শেখা। পরে গেলে কিভাবে যেন ধরে ফেলেন। ঠিক সুপারম্যানের মত। বাবা আসলেই সুপারম্যান। নিজে না খেয়ে না পরে সন্তানকে দেওয়ার মানুষটাই বাবা।
আসলে বাবা যে কি জিনিস সেটা যার নেই সেই বুঝে। আবার অনেকেই থাকতেও বুঝতে চেষ্টা করেননা। তাইতো ছোটবেলার সেই সুপারম্যানের জায়গা হয় বৃদ্ধাশ্রমে। যাইহোক আগেই বলেছি বাবার বিশালতার ব্যাখ্যা দিয়ে কোন দিন শেষ করা যাবেনা। আমার কথা বলি। বাবার চাকরির সুবাদে অনেক জায়গায় থাকতে হয়েছে।
ছোটবেলায় নাকি প্রতিদিন দোকানের চা আর কেক না খেলে আমার চলতই না। আমারও একটু একটু মনে পরে সেই কথা। কতশত আব্দার ছিল তাঁর কাছে। আজ আমার বয়স ৩৬ বছর। তিন বছর আগে আমিও এক কন্যার বাবা হয়েছি। নিজের সন্তানের প্রতি ভালবাসা আর মায়া দেখে এখন বুঝতে পারি আমার বাবাও ঠিক এমন ভাবেই আমাকে ভালবাসতেন। মেটাতেন আমার হাজারো আব্দার। ছোটবেলায় আমরা মোবাইল ফোনের সুবিধা পাইনি।
কিন্তু আমার মেয়ে জন্মের পরই মোবাইল ও কম্পিউটারের সুবিধা পেয়েছে। বাইরে বের হলেই তার হাজারো বায়না আমাকে শুনতে হয়। আব্বু এটা আনে ওটা আনে, আব্বু সব আনে। মেয়ে আমার এখনো স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেনা। আনে মানে আনতে হবে। বাসায় কিছুক্ষণ না দেখলেই নিজেই ভিডিও কল দিয়ে বলবে আব্বু, চিস (চিপস) আনে, আব্বু জুস আনে, আব্বু চকেট (চকলেট) আনে, আব্বু সব কিনে আনে। ঘুমানোর সময় বলবে আব্বু বুকে আসো
আজ বড় হয়েছি এখন বুঝি আমার মেয়ের মত আমিও বাবাকে এমনভাবেই হয়ত বলতাম। আর বাবা আমার সব আবদারই মেটাতো। আমি ছোট বেলা থেকেই বাজার করিনা। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার সুপারম্যান এত্ত এত্ত বাজার নিয়ে হাজির। বটগাছটি আছে বলেই হয়তো আমার অনেক কিছুই করতে হয়না। এখনো অনেক কিছুই আমাকে করতে হয়না। অনেক কিছুই ভাবতে হয়না। সব ভাবনা এখনো আমার বাবার।
শুধু তাই না আমার মেয়ের ভাবনাও আমার বাবার। সাংবাদিকতা করি, নিউজের বাইরে তেমন কিছু লিখতে পারিনা। যা লিখলাম তা শুধু আমার অনুভূতির কথা। আমার মনের কথা। বাবার কাছ থেকে এত কিছুর পরও সামনা সামনি বাবাকে ধন্যবাদটুকুও দেওয়া হয়নি। আজ বাবা দিবসে পৃথিবীর সকল বাবাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রইল।
পৃথিবীর সকল সন্তানদের কাছে আমার চাওয়া যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা যেন, কোন ভাবেই তাদের বাবাকে অসম্মান না করে। ছোটবেলার সেই দিনগুলির কথা মনে করে যেন প্রতিটি সন্তানই যেন শেষ দিনপর্যন্ত যেন বাবার পাশেই থাকে।