স্টাফ রিপোর্টার:
বাংলাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর মারা গেছেন। ৬ টা ৫৭ মিনিটে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সোমবার এন্ড্রু কিশোরের বড় বোনের স্বামী ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশে ফোরার পর এই প্লেব্যাক সম্রাট রাজশাহী মহানগরের মহিষবাথান এলাকায় থাকা তার বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাসায় ছিলেন।
তার ওই বাড়িটির একটি অংশেই রয়েছে ক্লিনিক। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল এন্ড্রু কিশোরের। তবে গতকাল রোববার (০৫ জুলাই) থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। তাই এন্ড্রু কিশোরের সুস্থতায় প্রাণ খুলে দোয়া করার জন্য সবার কাছে অনুরোধ করেছিলেন স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু। সেখানেই তারা চিকিৎসা চলছিল। এর পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি ঘটনায় সোমবার দুপুরে বাড়িতে রেখেই তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট নেওয়া হয়।
এর পর সন্ধ্যায় তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ক্যান্সার আক্রান্ত এন্ড্রু কিশোরকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শফিকুল আলম বাবু জানান, দেশে ফিরলেও এন্ড্রু কিশোরের শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছিল না। রোববার (৫ জুলাই) সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। কারও সঙ্গে কথা বলার মতো অবস্থাতেই ছিলেন না তিনি।
বিকেলে এন্ড্রু কিশোরের জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছিল। শফিকুল আলম বাবু জানান, প্রায় ৯ মাস পর সিঙ্গাপুর থেকে গত ১১ জুন দেশে ফিরেন সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। ২০ জুন থেকে তিনি রাজশাহীতে ছিলেন। তবে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। দেশে ফিরে কিছুটা সময় কোলাহলমুক্ত কাটাতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই ফেরার খবরটি এতদিন কাউকে জানাননি।
এ প্রসঙ্গে এন্ড্রু কিশোর কিছুদিন আগে বলেছিলেন, কয়েক দিন হলো দেশে এসেছি। কিছুটা সময় একান্তে থাকতে চেয়েছি। তাই পরিবারের বাইরে কাউকে জানাইনি। তাছাড়া শরীরের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। ডাক্তার কড়া নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, কোলাহলমুক্ত থাকতে হবে-সেই নির্দেশনা মেনেই চলছি। চেকআপের জন্য তিন মাস পর পর সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। গত বছরের ৯ সেপ্টেস্বর শরীরের নানা জটিলতা নিয়ে সিঙ্গাপুর চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন তিনি। ছয়টি ধাপে তাকে মোট ২৪টি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, কয়েক মাস পরপর নিয়মিত চেকআপ করাতে হবে তাকে।
এর আগে মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে ফেরা হয়নি তার। অবশেষে গত ১১ জুন বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফেরেন তিনি। ১৯৭৭ সালে , মেইল ট্রেন সিনেমার মধ্য দিয়ে প্লেব্যাকে যাত্রা শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। এরপর আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, সহ অসংখ্য জনপ্রিয় ও কালজয়ী গান উপহার দিয়েছেন শ্রোতাদের।
তার শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা সহায়তা করেছিলেন। পাশাপাশি ,গো ফান্ড মি, নামে এক ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। সহশিল্পীদের মধ্যেও অনেকে তার পাশে দাঁড়ান। কিন্তু চিকিৎসায় তার সুস্থতা আসেনি।