করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট চাপ পড়ছে শিশুর মনোজগতেও। যেসব শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেছিল, তাদেরও এখন বাড়ির বাইরে যেতে মানা। সারাক্ষণ বাড়িতে থেকে বন্দি পাখির মতো ছটফট করছে তারা। শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই চঞ্চল প্রকৃতির হয়। কিন্তু এখন বাধ্য হয়েই ঘরের ভেতরে কাটছে সারাক্ষণ। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা নেই, খেলাধুলা নেই, পড়াশোনাও চলছে ঢিমেতালে। এমন অবস্থায় ইন্টারনেটের দিকে ঝুঁকে পড়া শিশুর জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ সেখানে সে সময় কাটানোর জন্য অনেককিছুই পেয়ে যাবে।
ইন্টারনেটে যেন পৃথিবীর ভেতরে আরেক পৃথিবী। সেখানে খুব সহজেই একজন আরেকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন। ইন্টারনেটের উপকারিতা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু এর ভুল ব্যবহারে ঘটতে পারে অনেককিছুই। এখানে অনেক প্রাপ্তবয়স্করাও নিজেদের সামলে চলতে পারেন না, ছোটদের ক্ষেত্রে তাই আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
ফেক অ্যাকাউন্ট, সেক্সুয়াল ভায়োলেন্স, নারীর প্রতি ঘৃণ্য মনোভাব, কাউকে অপছন্দ হলে তাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা- এমন হাজারটা নেতিবাচক বিষয় ছড়াতে পারে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। বিশ্বজুড়ে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো চিন্তাভাবনা শুরু করেছে, কোন ধরনের কনটেন্ট দেখলেই তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত তা নিয়ে। আপনার-আমারও একবার ভেবে দেখা উচিত এই পরিস্থিতিতে।
যাদের বাড়িতে কিশোর-বয়সী বা দ্রুত কৈশোরের দিকে এগোচ্ছে এমন সদস্য আছে, তাদের কী করা উচিত এই পরিস্থিতিতে? প্রথমত শিশুকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে দেবেন না। নিরাপত্তাহীনতা থেকেই জন্ম নেয় অবিশ্বাস। আর ছোট থেকেই মনে অবিশ্বাস বাসা বাঁধলে পরের দিকে কোনো সম্পর্কই টিকবে না। শিশুর সঙ্গে খুব ছোট থেকে ‘সিকিওরড অ্যাটাচমেন্ট’ গড়ে তুলতে হবে মা-বাবাকে। এমনটাই জানাচ্ছে ফেমিনা।
সোশাল মিডিয়ায় কে কতগুলো লাইক পাচ্ছে, সেটাও এখন অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ! চাহিদা যত বাড়বে, তা মেটানোর জন্য মনও তত জটিল রাস্তা খুঁজে বের করবে। সিকিওরড অ্যাটাচমেন্ট গড়ে উঠলে মানুষ এভাবে যেন-তেন প্রকারে চাহিদা মেটানোর কথা ভাবে না। তাদের সম্পর্কও সুস্থ ও সুন্দর হয়, তারা এন্ডোর্সমেন্টে বিশ্বাস করে না।
অনেক অভিভাবকও সোস্যাল মিডিয়ার পাল্লায় পড়ে ঘর-সংসারের প্রতি উদাসীন হয়ে পড়েন। কাজের সময় বাদে ভার্চুয়াল সম্পর্ক বেশি সিরিয়াসলি নেয়ার দরকার নেই। আপনার ব্যক্তিগত জীবনে ভার্চুয়াল পৃথিবীর প্রভাব খুব বেশি হলে শিশুর জীবনেও তার ছাপ পড়বে।
শিশু যদি ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে যায়-ও, তাকে রাতারাতি বদলে ফেলার চেষ্টা করবেন না। কারণ একদিনেই তা সম্ভব হবে না। তাকে অন্য কোনো ভালো অভ্যাসে অভ্যস্ত করতে হবে। মনে রাখবেন, শিশুর প্রথম বিদ্যালয় তার পরিবার। আপনারা যেমনটা শেখাবেন, শিশু ঠিক তেমনটাই শিখবে।
শিশুর সঙ্গে খোলা মনে কথা বলতে হবে। শিশু যে সব সময় আপনার পরামর্শ নেবে, বা যা বলছেন তাই শুনবে তেমনটা না-ও হতে পারে। কিন্তু একটুতেই তাকে বিচার করবেন না। তার সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশলেই কেবল তার গতিবিধি বোঝা যাবে। ইন্টারনেটে কী করছে, সেদিকেও নজর রাখা যাবে।