বাংলাদেশের প্রাণ কৃষক। আমরা কৃষক পরিবারের সন্তান। মাটি, জমি এবং ফসলের সাথে সম্পর্ক আমাদের। পরচা, দলিল, মৌজা, দাগনম্বর ছাড়া আমরা অচল। এসব হচ্ছে ভূমির মালিকানার প্রমাণপত্র। আমরা উত্তরাধিকার, ক্রয় সূত্র সহ বিবিধভাবে জমির মালিকানা লাভ করি। এ প্রক্রিয়ায় রয়েছে নানাবিধ উচুঁ নিচু পথ। বাংলাদেশের মামলা মোকদ্দমার অন্যতম প্রধান অংশ জমি সংক্রান্ত বিরোধ। বংশ পরম্পরায় অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে মৃত্যু অবধিও বিরোধ মীমাংসা হয় না। সন্তান সন্তুতি, নাতি পুতি এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত বহন করতে হয় বিরোধের জের। ০৫ জুন ২০২০ ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইট এবং জাতীয় দৈনিকসমূহের সংবাদ হতে জানতে পারি, আমাদের ভূমি মন্ত্রণালয় জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০ অর্জন করেছে। এটি একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। বাংলাদেশের এ অর্জন আমাদের সকলের গৌরবের এবং সম্মানের।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটের তথ্যসমূহ একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাকে আবেগ আপ্লুত করেছে, আমি অভিভূত এবং আনন্দিত বাংলাদেশের এ অসামান্য সাফল্যে। এটি আমাদের বলিষ্ঠ সক্ষমতার স্বাক্ষর। ই-মিউটেশন কার্যক্রমে ২০১৯-২০ সনের মে মাস পর্যন্ত ১৫,৫৮,৭৭০ টি আবেদন পাওয়া যায় এবং ১৪,৭২,৫৮৮ টি নিস্পত্তি হয়েছে। মাত্র ১১ মাসে নিস্পত্তির হার ৯৪.৪৭%। এটি সারা পৃথিবীর সাড়া জাগানো সরকারের পক্ষ থেকে সফল জনসেবার চিত্র। ভূমিসেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বর্তমান সরকারের ভিশন-২০২১ অর্জন তথা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ই-মিউটেশনের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
চিঠিতে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ক বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল ল্যু ঝেনমিন উল্লেখ করেন, ‘জনস্বার্থে সেবার উন্নয়নে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে মন্ত্রণালয়টি (ভূমি) এবং আমি বিশ^াস করি, ভূমি মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ আপনার দেশের জনপ্রশাসনের উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছে। প্রকৃতপক্ষে, এই কাজ (ই-নামজারি) জনসেবায় ব্রতী হতে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহ হিসাবে কাজ করবে।’
প্রতি বছর দেশে প্রায় ৪০-৪২ লক্ষ ভূমি রেজিষ্ট্রেশন হয় এবং উত্তরাধিকারমূলে আরও ২০-২৫ লক্ষ নামজারির ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়। কিন্তু মালিকানা হালনাগাদ হয় ১৫-২০ লক্ষ। প্রায় ৪০-৪৫ লক্ষ ভূমির রেকর্ড হালনাগাদ এর বাইরে থেকে যায়। নামজারি হওয়ার পর রেকর্ড হালনাগাদ না করার ফলে একই জমি একাধিক ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রেশন হওয়া, দ্বন্দ্ব সংঘাত, দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলার উৎপত্তি, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি ও দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়। এর প্রভাব দারিদ্র্যতার উপর পড়ে।
ই-নামজারির সফল বাস্তবায়ন, আমি বিশ^াস করি বাংলাদেশের দারিদ্র্যকে শূন্যস্থানে আনতে একটি অন্যতম ভূমিকা রাখবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সোনার বাংলায় দারিদ্র্য থাকবে, এটা হতে পারে না। যদিও করোনার আগ্রাসী ভূমিকায় অনেক পরিকল্পনাই এলোমেলো এখন। কিন্তু আমরা লক্ষ্যচ্যুত নই। আমাদের দেশ পরিচালনার নেতৃত্বে রয়েছেন জনগণের আস্থাভাজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘের পাবলিক অ্যাওয়ার্ড ২০২০ অর্জনে আপনাকে অভিনন্দন জানাই এবং আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। একইসাথে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ এর প্রতিও অভিনন্দন ও ধন্যবাদ।