এবার সরকার পাট কিনবে কি কিনবে না সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু বলতে পারছে না। বাজারে নতুন পাট বেচাকেনা শুরু হলেও পাট কেনার বিষয়ে সরকারের কোনো নির্দেশনা পায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি) ও ঊধ্র্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, পাটকলগুলো বন্ধ থাকার কারণে পাট ক্রয়ের কোনো সিদ্ধান্ত নেই।
গত জুলাই মাসে সরকারি সব পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এই পাটকল বেসরকারি মালিকানায় দেয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে।
মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের নীতি-নির্ধারণী কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকারি সিদ্ধান্তে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি’র) নিয়ন্ত্রণাধীন ২৫টি পাটকল পুনরায় চালুকরণসহ অন্যান্য সম্পত্তি যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আগ্রহী উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারীরা মিলগুলো এখন থেকে সরেজমিনে পরিদর্শন করতে পারবেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মিলগুলোতে বিনিয়োগের বিষয়টি অনেক লম্বা প্রসেস। এমনকি এক বছরেও শেষ না হতে পারে এই প্রক্রিয়া।
জানা গেছে, সরকারি মিলগুলোর জন্য সরকার প্রতি বছর ১৩ লাখ বেল পাট কেনে। এখানে ১৫০ কেজিতে এক বেল গণনা করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য হলো, গত বছর দেশে ৬৮ লাখ বেল পাট উৎপন্ন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৮২ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মোট তিন লাখ ১৬ হাজার ৪৯৪ হেক্টর জমিতে এবার পাটের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধেক পাট কাটা হয়েছে। এবার ২৬ হাজার ৯৬ হেক্টর জমির পাট বানের পানিতে ডুবে গেছে। তারপরও গত বছরের তুলনায় পাটের উৎপাদন এবার ভালো। এখন পর্যন্ত কৃষক পাটের ভালো দাম পাচ্ছে।
কৃষি তথ্যসেবা সূত্রে জানা গেছে, ৪০ লাখ চাষি পাট চাষ করেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চার কোটি মানুষের জীবিকা পাটকে কেন্দ্র করে। প্রতি বছর মৌসুমে গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পান কৃষক। দেশের প্রায় সব জেলাতেই পাট উৎপন্ন হয়। তবে বেশি উৎপন্ন হয় ফরিদপুর, যশোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলায়।
‘সরকার এবার পাট কিনবে কি-না’-এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো নির্দেশনা আসেনি। আর এ বিষয়ে মহাব্যবস্থাপককে (পাট) জিজ্ঞাসা করুন।’ তবে অন্য একটি পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, এবার পাট কিনবে না সরকার। এই বাবদ বরাদ্দও রাখা হয়নি; বরং হাতে মজুত পাট বিক্রি করতে হবে। বন্ধ মিলগুলোতে কী পরিমাণ পাট মজুত আছে, এখন সেই হিসাব করছেন তারা।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) মহাব্যবস্থাপক (পাট) মো. আশরাফ হোসেন চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘পাট ক্রয়ের বিষয়ে কোনো সরকারি নির্দেশনা এখনো আসেনি। তাছাড়া পাটের মিলগুলোতো বন্ধ। এখন আমরা পাট কিনে কী করব?
তিনি বলেন, পাট দিয়ে ব্যাগ, চট, বস্তাসহ বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি হয়। উৎপাদন যেহেতু নেই সেহেতু পাট ক্রয়ের ভাবনাও আপাতত নেই।