এস এম আকরাম হোসেন :
মানিকগঞ্জে ফিঞ্চ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন সংগঠন “দি ফিঞ্চ সোসাইটি অফ বাংলাদেশ” ফিঞ্চ সম্পর্কিত দেশের সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করা হয়েছে।
শুক্রবার বেউথাঘাট সংলগ্ন “দি ক্যাসেল” রেস্টুরেন্টে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যোগ দেন সর্বস্তরের অসংখ্য ফিঞ্চ পালক। জুম্মার নামাজের পর মধ্যাহ্নভোজন শেষে শুরু হয় মুল অনুষ্ঠান। এসময় বক্তব্য রাখেন দেশের স্বনামধন্য কিছু ফিঞ্চ পালক এবং পাখির সেক্টর নিয়ে নিরলস পরিশ্রম করতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব প্রমুখ। এরপর ওয়েবসাইটের সার্বিক পরিচিতিপর্ব শেষে পুরস্কৃত করা হয় বিভিন্ন ভূমিকায় থাকা ব্যক্তিদেরকে। পাশাপাশি ফিঞ্চ সোসাইটি কতৃক আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীগণ এবং বিরল কিছু ফিঞ্চের প্রজাতির সফল প্রজননে সক্ষম হওয়া ব্যক্তিবর্গকেও পুরস্কৃত করা হয়।
দি ফিঞ্চ সোসাইটি অফ বাংলাদেশের প্রধান ব্যক্তিত্ব আব্দুল হান্নান দিনার জানান, দেশের ফিঞ্চ সেক্টরের জন্য ওয়েবসাইটটির সৃষ্টি ছিল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এখানে দেশীয় ব্রিডারগণ নিজেদের অর্জন সগর্বে উপস্থাপনের পাশাপাশি নিজেদের সমস্যা এবং পরামর্শ গুলিও নিশ্চিন্তে প্রকাশ করার সুযোগ পাবেন। শুধু তাই নয়, পাখি কেনা-বেচার জন্যেও আলাদা একটি অংশ রাখা হয়েছে ওয়েবসাইটটির মধ্যে যেখানে ব্রিডারগণ তাদের পাখির বিক্রয় পোস্ট দিতে পারবেন এবং ক্রেতাগণ সেখান থেকে পাখি পছন্দ করে ক্রয় করতে পারবেন।
তাছাড়া ফিঞ্চের খাদ্যাভ্যাস, বাসস্থান, যত্ন, রোগ-ব্যধি, প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা, ফিঞ্চের জনপ্রিয় কিছু প্রজাতির ব্যক্তিগত পরিচিতি, জেনেটিক্স সহ ফিঞ্চ পাখি সম্পর্কিত সবকিছুই একই সাথে মিলবে এই ওয়েবসাইটে। দিনার বিশ্বাস করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক ভিত্তিক গ্রুপ পরিচালিত করতে যেসকল সমস্যা এবং সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে হতো, এই ওয়েবসাইটের কল্যাণে তা থেকে মুক্তি পাবেন ফিঞ্চ পালকগণ। ব্যক্তিগত কিছু তথ্য প্রদানের মাধ্যমে যে কেউই এই ওয়েবসাইটের অংশ হতে পারেন এবং দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশী ফিঞ্চ পালকদের মধ্যেও নিজেদের এই উদ্যোগ একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে জানান দিনার।
বাংলা এবং ইংরেজী দুই ভাষাতেই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করা যাবে। পাশাপাশি ফিঞ্চ পালকদের সুবিধার্থে ওয়েবসাইটের এই সকল তথ্য আরো সমৃদ্ধভাবে বই আকারে প্রকাশ করার ঘোষণাও দেওয়া হয় এ দিন। যা একটি হ্যান্ডনোট হিসেবে সকল নতুন ফিঞ্চ প্রেমীকদের হাতে হাতে থাকবে এবং তাদেরকে ফিঞ্চ পালন সম্পর্কিত সার্বিক সহায়তা প্রদান করবে বলে তারা বিশ্বাসী। করোনাকালীন পরিস্থিতি হলেও সদস্যগণ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখেই আসন গ্রহণ করেন। সর্বোপরি, দেশের পাখি পালনের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে এটি।
পাখি খাঁচায় পোষার চল মানবজাতির মধ্যে প্রচলিত সেই প্রাচীনকাল থেকেই। সময়ের পরিক্রমায় খাঁচায় সফল প্রজননের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে সেসব পাখির নতুন প্রজন্ম এবং প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কেজবার্ড বা খাঁচার পাখি হিসেবে। বর্তমানে এমন খাঁচায় পালিত পাখির প্রজাতির সংখ্যা কয়েক শত হলেও ভিন্নভাবে নজর কাড়ে এই পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্য – “ফিঞ্চ”। আকারে গড়ে মাত্র চার ইঞ্চি হলেও নিজেদের প্রবল সক্রিয়তা, রঙিন পালক এবং শ্রুতিমধুর সুর দিয়ে পাখিপ্রেমীদের বশ করে রেখেছে এই ছোট্ট পাখিটি। কিছুদিন আগেও এই ছোট্ট পাখিটিকে নিয়ে বাংলাদেশে তেমন বিস্তারিত ভাবে কাজ হতে দেখা যেতো না কিন্ত বর্তমানে দেশীয় পাখি পালকগণ এদের দিকে দিয়েছেন বাড়তি মনযোগ। ছোট্ট ফিঞ্চকে নিয়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন যারা নি:স্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে এই পাখিটির সার্বিক উন্নয়নে।