করোনাভাইরাসে জুবুথুবু ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য উৎসবের মঞ্চ তৈরি। নানা অনিশ্চয়তাকে একপাশে রেখে আজ শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শুরু হচ্ছে অনেক প্রতীক্ষার ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। মাঠে নয়, এবার টিভি সেটের সামনে হবে উন্মাদনা। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ও তিনবারের শিরোপাধারী চেন্নাই সুপার কিংস প্রথম ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় মুখোমুখি হবে।
গত মার্চে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আইপিএলের ১৩তম আসর করোনায় পেছাতে হয়েছে। এই আইপিএল অনান্য বারের থেকে অনেকটাই আলাদা হতে চলেছে। মাঠ হবে দর্শকশূন্য। দর্শকদের কৃত্রিম আওয়াজেই প্রতিটি ম্যাচ খেলা হবে। ভিভো থেকে এই বছর আইপিএলের স্পনসরও বদলে গিয়ে হয়েছে ড্রিম ইলেভেন। করোনায় মারাত্মক বিপর্যস্ত ভারত থেকে সরিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাই, শারজা ও আবুধাবিতে।
সাত সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হতে যাওয়া এই প্রতিযোগিতার প্রথম রাতে সবার চোখ থাকবে চেন্নাই অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ও মুম্বাইয়ের অধিনায়ক রোহিত শর্মার দিকে। তাদের হাত ধরে ফের শুরু হচ্ছে কোনও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। দুটি দলই সবচেয়ে বেশি সফল ফ্রাঞ্চাইজি। রেকর্ড চারটি শিরোপা মুম্বাইর, চেন্নাইয়ের একটি কম। তবে চেন্নাই একমাত্র দল যাদের প্লে অফে খেলার শতভাগ রেকর্ড আছে এবং কেবল তারাই টানা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
রোহিতের তুরুপের তাস হবেন কিয়েরন পোলার্ড, যিনি সদ্য সিপিএলে ত্রিনবাগো নাইট রাইডার্সকে চতুর্থ ট্রফি জিতিয়েছেন। তার দলের শক্তি বাড়াতে রয়েছেন দুই অলরাউন্ডার- পান্ডিয়া ভ্রাতৃদ্বয় হার্দিক ও ক্রুনাল। মুম্বাইয়ের অস্ত্রাগারে রয়েছে বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি বোলারখ্যাত পেস তারকা জসপ্রীত বুমরাহ ও দক্ষিণ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান কুইন্টন ডি কক।
এ বছর কাগজে কলমে চেন্নাইয়ের ব্যাটিং শক্তিশালী না হলেও ধোনির ছোঁয়ায় বদলে যেতে কতক্ষণ। টপ অর্ডারে আছেন দুই তারকা শেন ওয়াটসন ও ফাফ দু প্লেসি। বোলিংয়ে এবার নেতৃত্ব দেবেন জস হ্যাজেলউড ও স্যাম কারান। স্পিন বিভাগও শক্তিশালী- ইমরান তাহির, রবীন্দ্র জাদেজা ও মিচেল স্যান্টনার।
আইপিএলে বাকি ছয় দলের কী খবর? সানরাইজার্স হায়দরাবাদ তাদের ধারাবাহিকতা ও কলকাতা নাইট রাইডার্স উপভোগ্য ক্রিকেট দিয়ে শিরোপার দৌড়ে থাকবে। ভারতের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুও চ্যালেঞ্জ ছুড়বে।
সানরাইজার্সের নেতৃত্বে থাকছেন ডেভিড ওয়ার্নার। জনি বেয়ারস্টোর পাশে থেকে তিনি সামলাবেন টপ অর্ডার। গত বছর এই জুটি ছিল অসাধারণ। এই ফ্রাঞ্চাইজির মিডল অর্ডারে আছেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন, মানীষ পান্ডে ও মিচেল মার্শ। বোলিং আক্রমণে ভরসা ভুবনেশ্বর কুমার।
শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্সের দায়িত্ব এবার দিনেশ কার্তিকের কাঁধে। আছেন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান এউইন মরগান ও টম ব্যান্টন। ভারতীয় তরুণ শুভমান গিল মিডল অর্ডার সামলাতে তৈরি। এবারের মিশনে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা দুই ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স ও লকি ফার্গুসনকে যুক্ত করেছে। তবে দুই অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল ও সুনীল নারিন দলের মূল অস্ত্র বলা যেতে পারে।
গত তিন মৌসুম ধরে প্লে অফের আগে ছিটকে পড়া বেঙ্গালুরুকে এগিয়ে নিতে কোহলির সঙ্গে আছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স ও অ্যারন ফিঞ্চ। দলের বড় সংগ্রহে তারা বারুদের কাজ করবেন। বোলিংয়ে শক্তি বাড়াতে তারা ডেল স্টেইন ও ক্রিস মরিসকে টেনেছে। এ বছর তারা শিরোপা খরা কাটাতে পারবে আশা ভক্তদের।
২০০৮ সালে প্রথম আসরে ট্রফি জেতার পর থেকে ছন্নছাড়া রাজস্থান রয়্যালস। এবার তারা কম্বিনেশনে পরিবর্তন এনেছে। ইংল্যান্ড পেসার টম কারান ও সীমিত ওভারে বিশেষ দক্ষ অলরাউন্ডার দক্ষিণ আফ্রিকান ডেভিড মিলার আছেন। এই দলটির নেতৃত্ব দেবেন স্টিভ স্মিথ। তার সঙ্গে ব্যাটিংয়ে ভরসা জস বাটলার ও কলকাতার সাবেক খেলোয়াড় রবিন উথাপ্পা। বল হাতে অ্যান্ড্রু টাই ও জোফরা আর্চার বেসামাল করতে পারেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের।
কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের নতুন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। টপ অর্ডারে তার সঙ্গে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন ক্রিস গেইল। শক্তিমত্তা বাড়াতে থাকবেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। গতবার তৃতীয় স্থানে থেকে আইপিএল শেষ করা দিল্লি ক্যাপিটালস লড়াই করবে ভারতীয় ব্যাটিং তারকা শিখর ধাওয়ান, শ্রেয়াস আইয়ার, ওপেনার পৃথ্বি শ ও গ্লাভসম্যান ঋষভ পন্তকে সঙ্গে নিয়ে।
সব মিলিয়ে অন্যান্য বারের মতো তারকাখচিত এক আইপিএলই হতে যাচ্ছে এবার। কিন্তু দর্শকহীন টুর্নামেন্ট উত্তাপ কতটা ছড়াবে তা দেখার বিষয়। তারপরও উত্তেজনার রেণু ছড়াতে সাধ্যের সবটুকু দেবেন ক্রিকেটাররা, এটাই প্রত্যাশা ভক্ত-সমর্থকদের।