উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক হয়ে দেখা দিতে পারে। এটি হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হৃদরোগ এমনকি মৃত্যুরও কারণ হতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে ১৭ অক্টোবর বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস (ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন ডে) পালন করা হয়। তাই সুস্থ থাকতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে জেনে নিন বিস্তারিত:
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন ডা. শাগুফা আনোয়ার(হেলথ্ স্পেশালিষ্ট এবং ডিরেক্টর, কমিউনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভেলপমেন্ট, ইউনাইটেড হসপিটাল)। তিনি বলেন –
প্রি-হাইপারটেনশনের লক্ষণগুলো প্রথমে জানতে হবে
যাদের রক্তচাপ ক্রমাগতভাবে স্বাভাবিক মাত্রার সামান্য ওপরে থাকে; অর্থাৎ সিস্টোলিক মাত্রা ১২০ থেকে ১৩৯ এর মধ্যে এবং ডায়াস্টোলিক মাত্রা ৮০ থেকে ৮৯ এর মধ্যে থাকলে তাকে প্রি-হাইপারটেনশন বলে। এদের উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন হবার ঝুঁকি অনেক বেশি। চিকিৎসকেরা তাদেরকে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে রক্তচাপ কমানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
উচ্চ রক্তচাপের বিপদসীমা
গড়ে রক্তচাপ ১৪০/৯০ বা এর ওপরে থাকলে কোনো উপসর্গ না থাকলেও ধরে নিতে হবে, আপনি রক্তচাপে ভুগছেন।
রক্তচাপ ১৮০/১১০ বা এর ওপরে হলে তা উচ্চ রক্তচাপের বিপজ্জনক পর্যায়, অস্থির না হয়ে এ অবস্থায় কয়েক মিনিট বিশ্রাম নিয়ে আবার রক্তচাপ মাপুন। এরপরও রক্তচাপ বেশি থাকলে দ্রুত হাসপাতালে যাবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন। এই অবস্থা থেকে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলিয়র, জ্ঞান হারানোর মতো মারাত্মক কিছু হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও অসহ্য মাথাব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, নাক দিয়ে রক্তপাত, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
উচ্চ রক্তচাপ যাদের হতে পারে
৪০-৪৫ বৎসর বয়স পর্যন্ত পুরুষের উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি নারীর চেয়ে বেশি। তবে পঁয়তাল্লিশোর্ধ্ব বয়সে নারী-পুরুষ উভয়েরই উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে। ডায়াবেটিস থাকলে বা পরিবারের অন্যদের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
প্রয়োজনীয় পরামর্শ
হেলদি লাইফস্টাইল বা স্বাস্থ্যবান্ধব জীবনযাত্রার মাধ্যমে কীভাবে রক্তচাপকে মাত্রার ভেতরে রাখা যায়, আসুন তা এবার জেনে নেই
সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণ
লবণের প্রধান উপাদান সোডিয়াম শরীরে পানি ধরে রেখে রক্তচাপ বাড়ায়, যা হৃদযন্ত্রের জন্য অতিরিক্ত বোঝা বাড়িয়ে তোলে। খাবারের সাথে কাঁচা লবণ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে তা বর্জন করা জরুরি। ক্যানজাত স্যুপ বা অন্যান্য খাবারেও প্রচুর সোডিয়াম থাকে। এই ধরনের খাবার পরিহার করতে হবে।
স্ট্রেস বা চাপ নিয়ন্ত্রণ
মানসিক চাপ বেড়ে গেলে রক্তচাপ হঠাৎ তীব্র হয়ে যেতে পারে, স্ট্রেসের কারণে অন্য কিছু অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস, যেমন মদ্যপান বা ধূমপান, খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম, রাত জাগা ইত্যাদি ত্যাগ করা উচিত।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
অতিরিক্ত শারীরিক ওজন হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ-দুইয়েরই ঝুঁকি বাড়াতে পারে। খাদ্য তালিকায় চর্বিযুক্ত খাবার ও বাড়তি মিষ্টি জাতীয় খাবার কমিয়ে ফল, শাক-সবজি, আমিষ ও আঁশযুক্ত খাবার বাড়িয়ে শরীরের ওজন কমাতে হবে, এমনকি ১০ পাউন্ড ওজন কমালেও রক্তচাপে সুনিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব।
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ
কারো কারো গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ভাগে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। একে জেস্টেশনাল হাইপারটেনশন বলে। এই অবস্থা থেকে প্রি-এক্লাম্পশিয়া হতে পারে। এর ফলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হতে পারে, মায়ের কিডনি ও মস্তিষ্কে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কাজেই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা খুবই জরুরি।
উচ্চ রক্তচাপ উদ্রেককারী ওষুধ পরিহার
কিছু কিছু কফ সিরাপ, ব্যথানাশক, স্টেরয়েড, ডায়েট পিল, জন্মনিরোধক বড়ি ও বিষন্নতার ওষুধ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ সেবন করবেন না।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
ফলমূল, সবজি, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, পোল্ট্রিজাত খাবার, বাদাম ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন। গরু বা খাসির মাংস, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মিষ্টি এসব কম খাবেন।
ব্যায়াম
একজন পূর্ণ বয়ষ্ক লোকের প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিটের মতো মাঝারি মাপের ব্যায়াম করা জরুরি। এটা যে কোনো ধরনের কাজ যেমন বাগান করা, সাইকেল চালানো, হাঁটা বা অন্যান্য অ্যারোবিক এক্সারসাইজের মাধ্যমে করা যেতে পারে।
একজন পূর্ণবয়ষ্ক মানুষের রক্তচাপের শ্রেণিবিন্যাস
শ্রেণি সিসটোলিক (ওপরের) রক্তচাপ ভায়াসটনিক (নিচের) রক্তচাপ
নিম্ন রক্তচাপ <৯০ মি. মি পারদ <৬০ মি. মি. পারদ
স্বাভাবিক রক্তচাপ ৯০-১১৯ ’’ ৬-৭৯ ’’
স্বাভাবিক কিন্তু উচ্চ রক্তচাপে
পরিণত হতে পারে ১২০-১৩৯ ’’ ৮০-৮৯ ’’
উচ্চ রক্তচাপ গ্রেড-১ ১৪০-১৫৯ ’’ ৯০-৯০ ’’
উচ্চ রক্তচাপ-গ্রেড-২ ১৬০-১৭৯ ’’ ১০০-১১৯ ’’
উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত জরুরি অবস্থা ১৮০ ’’ ১১০ ’’
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন, স্বাস্থ্যোপযোগী জীবনযাত্রা মেনে চলুন।