স্টাফ রিপোর্টার:
আগে দু’বার প্রত্যাখ্যান হয়েছে। ফের করোনার ভ্যাকসিন কর্মসূচির আওতায় জনসচেতনতার জন্য প্রচার, বিজ্ঞাপন ও আতিথেয়তা খাতে ব্যয়ে ১০৪ কোটি ৮২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
গত ২৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব সুশীল কুমার পালের স্বাক্ষরিত চিঠিটি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধক ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য অপারেশনাল ব্যয় খাতে।
তবে এ বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এর আগেও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে এধরনের বেশ কিছু খাতে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। সেগুলো অযৌক্তিক বিবেচিত হওয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছিল। অযৌক্তিক ব্যয়গুলোর মধ্যে ছিল আপ্যায়ন, প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাত।
চিঠিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুসারে- পোস্টার, অডিও-ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট, প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনের জন্য ১৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা এবং আতিথেয়তা খাতে ব্যয়ের জন্য ৮৯ কোটি ৮৫ লাখ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। সর্বমোট ১০৪ কোটি ৮২ লাখ ৯৮ হাজার টাকা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
প্রায় দেড় সপ্তাহ আগে অর্থ বিভাগ করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন কেনার ক্ষেত্রে ২২৮ কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় চিহ্নিত করেছে। এই অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের মধ্যে প্রচারের ব্যয় এবং টিকা দেওয়ার জন্য জরিপ কার্যক্রম, আতিথেয়তা বিল, ডাক্তারদের সম্মানী, কর্মকর্তা ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং ডাটাবেস তৈরি অন্তর্ভূক্ত ছিল।
এরআগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনাভাইরাসের প্রতিরোধ কর্মসূচীর আওতায় ১৬টি খাতের অর্থ বরাদ্দ চেয়ে যে চিঠি দিয়েছিল তার মধ্যে ৬টি খাতের ব্যয় নিজস্ব বাজেট বরাদ্দ থেকে করার পরামর্শ দিয়েছিল অর্থমন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ১০-১১-২০২০ তারিখে ভ্যাকসিন কেনা ও আনুষঙ্গিক উপকরণ ব্যয়সহ সর্বমোট ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার বরাদ্দ চাওয়া হলে অর্থ বিভাগ থেকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার এবং পরে সমপরিমান টাকা চাহিদার বিপরীতে শর্তসাপেক্ষে ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা অর্থাৎ সর্বমোট ১ হাজার ৪৫৫ কোটি ৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
বরাদ্দপত্রে দেওয়া শর্তগুলো হচ্ছে- সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদন নিতে হবে, অগ্রিম অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থের ব্যাংক গ্যারান্টি নিতে হবে, অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এবং দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ প্রযোজ্য এবং আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। এছাড়া এ অর্থ চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সংশ্লিষ্ট কোডে সমন্বয় করতে হবে। ভ্যাকসিন কেনা ও কোল্ড চেইন ইক্যুইপমেন্ট, এডি সিরিঞ্জ, সেফটি বক্স কেনা ইত্যাদি বাবদ ব্যয় প্রতিবেদন একমাসের মধ্যে ব্যয়িত অর্থের স্বপক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নসহ বিল-ভাউচার ও ব্যয় প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।
সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এসআইআই) ভ্যাকসিন পরিবহন ব্যয়সহ প্রতি ডোজের দাম ৫ (পাঁচ) ইউএস ডলার নির্ধারণ করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয় করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মোট দাম দাঁড়ায় ১৫,০০,০০,০০০ ইউএস ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক হাজার ২৭১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা) ব্যয়ের একটি ক্রয় প্রস্তাব সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। ইতোমধ্যে সেসব ভ্যাকসিনের অংশ দেশে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানিকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগের উদ্বোধন করেছেন।