স্টাফ রিপোর্টার:
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে সরকারের কাছে বিএনপি বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আবেদন করা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার (৪ মে) রাজধানীর ফার্মগেট পূর্ব রাজাবাজারের নাজনীন স্কুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কর্মহীন আসহায় মানুষের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, খালেদা জিয়া করোনা আক্রান্ত হয়ে তার ইচ্ছানুযায়ী রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে আমরা জানি। খালেদা জিয়া কিংবা তার পরিবারের তরফ থেকে কোনো ধরনের আবেদন-নিবেদন আমাদের কাছে আসেনি।
তিনি আরও বলেন, বিদেশ নিতে পারবে কি পারবে না সেটা আদালত নির্ধারণ করবেন। তিনি যেন দেশে থেকে সুচিকিৎসা পান, সে ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী করে দিয়েছেন। এরপরও যদি তিনি (খালেদা জিয়া) আরও কিছু পেতে চান, তাহলে আদালতের মাধ্যমে আসতে হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেখানে অন্যান্য দেশে জিডিপির হার কমে যাচ্ছে কিন্তু বাংলাদেশ সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে। এটাকেই বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব। দেশ এগিয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রী গরীব মানুষের কথা ভুলে যাননি। তিনি কেবল আমাদের নেতা না, বিশ্বের নন্দিত নেতা। শেখ হাসিনা গরিব মানুষের কথা ভুলে যাননি।
নিম্নআয়ের মানুষ যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের ৩৫ লাখ গরিব মানুষের জন্য ২৫০০ টাকা করে দিচ্ছেন। কেউ যাতে বস্ত্র, খাদ্যে কষ্ট না পায় সেজন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
করোনার মধ্যেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। শেরেববাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এই ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাব্বির হোসেন মাছুদ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তরের আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্না কচি।
এর আগে দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘৪০১ ধারার উপধারা-২ অনুযায়ী সরকার খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়েছে। এখন তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দিতে গেলে আদালতে আসতে হবে। আমার তো তাই মনে হয়। তারপরও আমি না দেখে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘উনার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা কতটুকু প্রয়োজন। তা বাংলাদেশে আছে কি-না, সবকিছু দেখে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে।’
এদিকে, মঙ্গলবার (৪ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বৈঠক শেষে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার সুপারিশ করে মেডিকেল বোর্ড। চিকিৎসারা জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। মেডিকেল বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, খালেদার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। ফুসফুসের পানি কমেছে। তবে অক্সিজেন সাপোর্ট এখনও চলছে।
এর আগে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে পরিবারের পক্ষ থেকে ‘আবেদন’ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেলেও তা ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ফখরুল জানান, তিনি সোমবার (৩ মে) সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফোন করেছিলেন।
গত ১০ এপ্রিল নমুনা পরীক্ষায় খালেদা জিয়ার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। প্রথমে তিনি গুলশানে তার ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
পরে ২৭ এপ্রিল সিটি স্ক্যানসহ প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। সেই রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।