1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৯ অপরাহ্ন

করোনাকালে ধূমপানের ঝুঁকি ও বর্জনের উপায়

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৩১ মে, ২০২১
  • ৩৭৪ বার দেখা হয়েছে

আমার নিউজ ডেস্ক,

আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। প্রতিবছর ৩১ মে দিবসটি পালিত হয়। প্রত্যেক বছর ধূমপান জনিত রোগে প্রায় ৮০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। একারণে বিশ্বব্যাপী ধূমপান বর্জন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে, বিশেষ করে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস মহামারিতে এর গুরুত্ব আরো বেড়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধূমপায়ীদের কোভিড-১৯ জনিত জটিলতার ঝুঁকি বেশি। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘কমিট টু কুইট’ বা ‘আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি’।

ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে প্রায় সকলেই কমবেশি জানেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়লে পরিহার করা কঠিন। বন্ধুদের প্ররোচনা, মিডিয়ার প্রভাব ও কৌতূহলের তাড়নায় অধিকাংশ ধূমপায়ীর যাত্রা শুরু হয়।একজন মানুষ যেভাবেই ধূমপান শুরু করুক না কেন, শেষপর্যন্ত নিকোটিনের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। নিকোটিনের সাইকোফার্মাকোলজিক্যাল ইফেক্টস রয়েছে। অর্থাৎ এটি ব্যক্তির মেজাজ, অনুভূতি, চিন্তাভাবনা ও আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। একারণে এর প্রতি নির্ভরশীলতা তৈরি হয়।

করোনা সংক্রমণে ধূমপায়ীদের ঝুঁকি

চিকিৎসা বিজ্ঞানের এতটা অগ্রগতি হয়েছে যে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ধূমপানের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে। এটি প্রধানত ফুসফুসকে ধ্বংস করে থাকে। ধূমপানে ইমিউন সিস্টেম (রোগদমন তন্ত্র) ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধূমপায়ীদের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণের প্রবণতা বেশি। ধূমপানের ফলে শ্বাসতন্ত্রে শ্লেষ্মা ও অন্যান্য ক্ষতিকারক পদার্থ জমতে থাকে।

মার্সের মতো ভাইরাস মহামারিতে ধূমপায়ীদের উপসর্গের তীব্রতা ও মৃত্যুহার বেশি ছিল। চলমান কোভিড মহামারিতেও ধূমপায়ীদের ঝুঁকি বেশি। করোনায় আক্রান্ত ধূমপায়ীদের হাসপাতালে ভর্তির হার, সংক্রমণের তীব্রতা ও মৃত্যহার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। একিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোমের (এআরডিএস) একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হলো ধূমপান। করোনায় সংক্রমিত গুরুতর রোগীদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো এআরডিস। জেএএমএ ইন্টারনাল মেডিসিনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তিকৃত যেসব রোগীর এআরডিএস হয়েছিল তাদের প্রায় ৫০ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে।

কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় স্টেরয়েড ও ইমিউনোসাপ্রেস্যান্টের মতো ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ওষুধ ব্যবহারে ধূমপায়ী করোনা রোগীদের দ্বিতীয় সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) প্রধান কারণ হলো ধূমপান। সিওপিডি রোগী করোনায় আক্রান্ত হলে সহজেই গুরুতর জটিলতায় ভুগতে পারেন।

ধূমপায়ী করোনা রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত জমাট বেধে যাওয়ার প্রবণতাও বেশি, যেমন- ফুসফুসে রক্ত জমাট বেধে পালমোনারি এম্বোলিজম হতে পারে। ধূমপায়ীরা করোনায় সংক্রমিত হলে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজের (পিভিডি) ঝুঁকিও রয়েছে। পিভিডি হলো হার্ট ও মস্তিষ্কের বহিঃস্থ রক্তনালীর রোগ। ধূমপান হলো করোনারি আর্টারি ডিজিজের (সিএডি) একটি প্রচলিত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। করোনারি আর্টারি হলো হার্টে রক্ত বহনকারী রক্তনালী। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব কোভিড রোগীর সিএডি ছিল তাদের মধ্যে মৃত্যুহার বেশি ছিল।

কোভিড মহামারিতে কিছু কারণে ধূমপায়ীদের করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যারা সিগারেট ফুঁকেন তাদের ইমিউন সিস্টেম দিনকে দিন ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। ইমিউন সিস্টেম যত ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি তত বেড়ে যায়। যারা ই-সিগারেট ব্যবহার করেন তারা ডিভাইসটির মাধ্যমে করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। কোভিড রোগীর ধূমপানের ধোঁয়ার মাধ্যমে তার আশপাশে থাকা লোকদের মাঝে ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। তাই কেউ ধূমপান করলে ডাবল মাস্ক পরুন বা ওখান থেকে সরে যান। অন্যের ব্যবহৃত সিগারেট ফুঁকবেন না। গ্রুপ স্মোকিং বা দলবদ্ধ ধূমপান করবেন না।

করোনাকালে ধূমপান ছাড়বেন যেভাবে

যারা শত চেষ্টার পরও ধূমপান ছাড়তে পারেননি, তাদের জন্য অভ্যাসটি বর্জনের জন্য করোনাভাইরাস মহামারি আশীর্বাদ হতে পারে। কারণ এসময় সবসময় এটা স্মরণে রাখলে ধূমপানের প্রতি অনীহা বাড়তে পারে- ধূমপায়ীরা করোনায় আক্রান্ত হলে মারাত্মক জটিলতা বা মৃত্যুর বাড়তি ঝুঁকি রয়েছে। চলতি মহামারিতে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে গ্রুপ স্মোকিং  যে কমে গেছে তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে। এবার নিজের প্রচেষ্টা বাড়ালে ব্যক্তিগত ধূমপানও বর্জন করা সম্ভব হতে পারে।

এখন বন্ধু ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সরাসরি আড্ডার প্রবণতা কমে গেছে, তাই পরিবারে অবস্থানের সময় বেড়েছে। এসময় ধূমপানের কথা ভুলে থাকতে পারিবারিক কাজে সাহায্য করতে পারেন, পারিবারিক বিনোদনে সময় বাড়াতে পারেন, খাবার প্রস্তুত করতে পারেন এবং সন্তানদের নিয়ে সৃজনশীল কাজকর্ম করতে পারেন। এছাড়া বাচ্চাদের নিয়ে খেলতে পারেন, পরিবারকে নিয়ে জ্ঞানের আসর বসাতে পারেন, নির্দিষ্ট সময় পরপর পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন, ধূমপানের ইচ্ছে হলে পরিবারের সদস্য বা মোবাইলে কারো সঙ্গে কথা বলতে পারেন, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন এবং ধ্যান ও প্রার্থনা করতে পারেন।

অনেকে হতাশা ব্যক্ত করেন যে, এতবছর ধরে সিগারেট টেনে আসছি, ক্ষতি যা হবার তা হয়ে গেছে, এখন আর ধূমপান ছেড়ে কী হবে? কিন্তু না, ধূমপান বর্জনে উদ্দীপ্ত হওয়ার এখনো কারণ রয়েছে। আপনি যত বছর ধরেই ধূমপান করেন না, যেদিন থেকেই ছেড়ে দেবেন তখন থেকেই উপকার পেতে শুরু করবেন। ধূমপান পরিহারের এক সপ্তাহের মধ্যে ঘ্রাণ, স্বাদ ও ক্ষুধার উন্নতি হবে। কিছু মাসের মধ্যে ফুসফুসের কার্যক্রম বাড়বে। ধূমপান জনিত কাশি (স্মোকার’স কফ) দূর হয়ে যাবে।সমাজে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা অর্থবহ মনে হবে। তাই আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে হতাশাকে তাড়িয়ে ধূমপান বর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury