আমার নিউজ ডেস্ক,
করোনার টিকা নেওয়ার পর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাধারণত এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া উদ্বেগজনক নয়। তবে এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, অল্পসংখ্যক লোকের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনও হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনে একটুও অবহেলা না করে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে।
টিকা জনিত অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন দ্রুত তীব্র জটিলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে। একারণে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনের লক্ষণগুলো জানা থাকা থাকতে হবে, যাতে সঠিক সময়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে মারাত্মক পরিণতি এড়ানো যায়।
অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন আসলে কী? করোনার টিকার প্রথম ডোজে যাদের এমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় তারা কি দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন? এসব প্রশ্নের উত্তর এখানে দেওয়া হলো।
অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন কি?
করোনার টিকা বা যেকোনো টিকার প্রতি অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন তখন হয় যদি ওই টিকার কোনো উপাদানের প্রতি টিকাগ্রহীতা সংবেদনশীল হয়ে থাকেন। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অ্যানাফাইলেক্সিসে রূপ নিতে পারে- অর্থাৎ অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন এত বেশি বেড়ে যাওয়া যে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে।
অনেকেই এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয়ে টিকা নিতে চাচ্ছেন না। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনও পর্যন্ত করোনার টিকা গ্রহণে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন বা অ্যানাফাইলেক্সিসের ঘটনা বিরল, তাই এটা নিয়ে এত দুশ্চিন্তা অনাবশ্যক। তবে টিকা গ্রহণের পর সচেতন থাকতে হবে, কারণ বিরল হলেও এটা আমার বা আপনার ক্ষেত্রে ঘটলে কি হবে? তাই টিকা নিতে যাওয়ার আগে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনের লক্ষণগুলো জানতে হবে। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় দ্রুত চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন হয়।
অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হলে কী করবেন?
সাধারণত টিকা নেওয়ার পর কিছু মিনিট থেকে আধঘণ্টা বা ঘন্টাখানেকের মধ্যে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা জানান, যেখান থেকে টিকা নেবেন ওখানে টিকা গ্রহণের পর কমপক্ষে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করা ভালো, যাতে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া যায়। টিকা নেওয়ার আগে টিকাকেন্দ্রে উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে। টিকার স্থানে র্যাশ হলে চিকিৎসকে অ্যান্টিহিস্টামিন ও অ্যালার্জির ওষুধ দিতে পারেন। অ্যালার্জি জনিত তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (অ্যানাফাইলেক্সিস) হলে জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন হবে, অন্যথায় মৃত্যু হতে পারে। চিকিৎসক কিছু ঘণ্টা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। অ্যানাফাইলেক্সিসের দুটি লক্ষণ হলো- জ্ঞান হারানো ও ঘেমে যাওয়া। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে অ্যানাফাইলেক্সিস নিয়ে ভয়ের কিছু নেই।
অ্যালার্জিক রিয়্যাকশনের লক্ষণ
করোনার টিকা গ্রহণে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হলে কিছু লক্ষণে তা বোঝা যাবে। অল্প মাত্রার অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন ও অ্যানাফাইলেক্সিসের সম্ভাব্য লক্ষণগুলো হলো-
* ত্বকে আমবাত (হাইভস), ফোসকা, লাল হওয়া ও ফোলা
* রক্তচাপ কমে যাওয়া
* ঘেমে যাওয়া
* দুর্বলতা, নাড়ি স্পন্দন দ্রুত হওয়া, মাথাঘোরানো ও চেতনা হারানো
* বমিভাব ও বমি
* বিভ্রান্তি ও মাথাব্যথা
* শ্বাস ছাড়ার সময় অস্বাভাবিক আওয়াজ, নাকে প্রতিবন্ধকতা, শ্বাসপ্রশ্বাস কঠিন হওয়া ও কাশি।
যাদের ঝুঁকি বেশি
টিকা গ্রহণে কার অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন বা অ্যানাফাইলেক্সিস হবে এটা বলা সহজ নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় (রিস্ক ফ্যাক্টর) থাকলে এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি বেশি হতে পারে। যেমন-
* অতীতে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হয়েছে
* পূর্বে অ্যানাফাইলেক্সিস হয়েছে
* ডিমের প্রতি অ্যালার্জি
* হাঁপানির ইতিহাস
* ঘনঘন অ্যালার্জির প্রবণতা।
প্রথম ডোজে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হলে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়া যাবে?
টিকার প্রথম ডোজে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হলে এটা স্বাভাবিক যে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের আগ্রহ উবে যায়, বিশেষ করে যাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া বা অ্যানাফাইলেক্সিস হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ নেবেন কিনা নির্ভর করছে প্রথম ডোজে সৃষ্ট প্রতিক্রিয়ার ওপর। এছাড়া বিবেচনার জন্য আরো ফ্যাক্টর রয়েছে। প্রথম ডোজের প্রতিক্রিয়া নিরীহ প্রকৃতির হলে বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যাদের ইতোমধ্যে অ্যানাফাইলেক্সিস হয়েছে তাদের ইতিহাস ও সংবেদনশীলতা নিরূপণ সাপেক্ষে দ্বিতীয় ডোজ বাতিল করা হতে পারে। যাদের প্রথম ডোজে অ্যালার্জি জনিত প্রতিক্রিয়া হয়েছে তারা ভিন্ন ধরনের কোভিড টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন কিনা চিকিৎসকেরা বিবেচনা করতে পারেন।