1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৮ অপরাহ্ন

করোনায় দ. পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদন খাতে ধস, বাজার হারানোর শঙ্কা

  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৫৮২ বার দেখা হয়েছে

গত কয়েক দশকে বৈশ্বিক পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। বিশেষ করে কম্পিউটার, গাড়ি, ইলেক্ট্রনিক্স, পোশাকসহ বেশ কিছু পণ্যের অন্যতম প্রধান উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলো। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি এসব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে অতিসংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকে অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধের প্রভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কারখানা।

সম্প্রতি এ অঞ্চলের প্রায় ২ হাজার ১০০টি কারখানার ওপর চালানো এক জরিপে উঠে এসেছে আশঙ্কা জাগানিয়া তথ্য। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- দক্ষিণপূর্ব এশিয়া কি তাহলে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা বাজার হারাতে বসেছে?

লন্ডনভিত্তিক সংস্থা আইএইচএস মার্কিট জানিয়েছে, গত আগস্ট মাসে এ অঞ্চলের দেশগুলোর পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) ৪৪ দশমিক ৫-এ নেমে গেছে। হুট করে এক মাসের জন্য এমনটি হলে হয়তো বিশেষ চিন্তার কিছু ছিল না। কিন্তু এ নিয়ে টানা তিন মাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পিএমআই ৫০-এর নিচে নেমে যাওয়া দুশ্চিন্তার কারণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আইএইচএস মার্কিটের অর্থনীতিবিদ লুইস কুপার এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, (পিএমআই-এর) সবচেয়ে দ্রুত পতন লক্ষ্য করা গেছে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায়।

jagonews24

কারখানা বন্ধের হিড়িক
থাইল্যান্ড-ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর। এ অঞ্চল থেকে পণ্য নেওয়া অনেক প্রতিষ্ঠানই এখন চরম সংকটে রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের পাশাপাশি কন্টেইনার ঘাটতির কারণে তাদের ব্যবসা অভূতপূর্ব ক্ষতির মুখে পড়েছে।

অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স-এর এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতিবিদ সিয়ান ফেনার জানান, বৈশ্বিক উৎপাদন খাতে, বিশেষ করে ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য চূড়ান্ত ধাপের সমন্বয়ে ভিয়েতনামের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা রয়েছে। তবে সম্প্রতি সেখানে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব অনুভূত হচ্ছে টেলিযোগাযোগ সংশ্লিষ্ট পণ্যগুলোর ওপর।

আইএইচএস মার্কিটের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান রাজিব বিশ্বাস জানান, ভিয়েতনামে কারখানা বন্ধের প্রভাব বিশ্বজুড়ে ক্রমেই বাড়ছে। তিনি বলেন, শুধু আগস্ট মাসেই ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলে একশর বেশি সামুদ্রিক খাবার প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া মহামারির কারণে সে দেশের এক-তৃতীয়াংশ পোশাক কারখানাও এখন সাময়িকভাবে বন্ধ।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, করোনাকালে স্যামসাং এবং টয়োটার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রাজিব বিশ্বাস জানান, স্যামসাং বিশ্বের অন্য অঞ্চলে উৎপাদন বাড়িয়ে ক্ষতি অনেকটা পোষাতে পারলেও টয়োটা তা পারেনি। করোনার কারণে বেশ কয়েকটি কারখানা অস্থায়ীভাবে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে তারা।

সংকট কাটবে কবে?
ফেনারের ধারণা, সরবরাহ খাতের বিশৃঙ্খলা ও মূল্যবৃদ্ধির চাপ আগামী বছরের প্রথমদিকে কমে আসতে পারে। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, সেমিকন্ডাক্টরের মতো বেশ কিছু খাতে সংকট দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, আর তার ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে গাড়ি উৎপাদন শিল্পে।

jagonews24

গত সপ্তাহে গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড জানিয়েছে, তারা জার্মানির কোলন শহরের কারখানায় ফিয়েস্তা মডেলের গাড়ি উৎপাদন স্থগিত করেছে। কারণ এতে ব্যবহৃত সেমিকন্ডাক্টর আসতো মালয়েশিয়া থেকে। কিন্তু দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটিতে সম্প্রতি মহামারির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সেমিকন্ডাক্টর সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে, আর তার জন্যই ফিয়েস্তা গাড়ির উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে কি সরে যাবে প্রতিষ্ঠানগুলো?
করোনার কারণে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার জেরে অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের গোটা সরবরাহ ব্যবস্থা নিয়ে পুনর্বিবেচনা শুরু করেছে। লকডাউন আর অন্যান্য বিধিনিষেধ স্পষ্ট করে দিয়েছে, আজকের বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থা কতটা অরক্ষিত, কতটা ভঙ্গুর। ইলেকট্রনিক্স ও টেক্সটাইলের মতো অনেকগুলো প্রধান শিল্প মাত্র কয়েকটি জায়গায় কেন্দ্রীভূত হওয়া ব্যবসার জন্য মারাত্মক অশুভ।

ফেনার বলেন, এটি (পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে) আরও বৈচিত্র্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তবে আমরা মনে করি, (ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান) ফিরে যাওয়ার হার খুব সীমিত হবে। আমাদের এখনো বিশ্বাস, এশিয়া এফডিআইয়ের (প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ) এর জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবেই থাকবে।

রাজিব বিশ্বাসও মনে করেন, করোনাভাইরাস মহামারি বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাকে আমূল বদলে দিতে পারে। তিনি বলেন, এটি সরবরাহ ব্যবস্থায় বৈচিত্র্য বাড়াবে, সেই সঙ্গে চিকিৎসা সরঞ্জাম, টিকা উৎপাদন এবং মূল ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টরের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury