এস এম আকরাম হোসেন :
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী,মানিকগঞ্জের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান।
কোভিড পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম চালুকরণের লক্ষ্যে গত ৫/৯/২১ ইং তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো: গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে, গত ১২ তারিখে সারা দেশের ন্যায় মানিকগঞ্জেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকার প্রদত্ত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করনীয় বিষয়সমূহ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে দেখা গেছে। প্রবেশ পথে ব্যানার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা সকলকে তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও পর্যবেক্ষণ করে ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। এরপর গেটের পাশেই সাবান ও হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
শিক্ষার্থীসহ সকলকে হাত ধুয়ে এবং মাস্ক পড়ে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিন ফুট শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে শ্রেণি কক্ষে সিটে বসছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় যে ১৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তার বেশিরভাগই পালন করতে দেখা গেছে।
স্বাস্থ্যবিধি মানতে শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে সকলকে সচেতন করা হচ্ছে। ।
মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, এস,কে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, কানিজ ফাতেমা গালস স্কুল ও কলেজ, খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী মাকসুদা ইয়াসমিন বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে শ্রেণি কার্যক্রমের যে সরকারি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা আমরা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে স্কুল পরিচালনা করছি। শ্রেণিকক্ষসহ আশে পাশে যে ময়লা ছিল পরিস্কার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে ঢোকার আগেই তাপ পরিমাপক যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করে ভিতরে প্রবেশ করাচ্ছি। গেটের পাশেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রেখেছি। শ্রেণিকক্ষে তিন ফুট শারীরিক দুরত্ব রেখে শিক্ষার্থীদের আসনে বসাচ্ছি। কোন শিক্ষার্থী যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তার জন্য আইসোলেশন কক্ষ প্রস্তুত রেখেছি। সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় আমরা সঠিকভাবে স্কুল পরিচালনা করছি।’
মুন্নু ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লে. ক. (অবসরপ্রাপ্ত) মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, গত ১২ই সেপ্টেম্বর থেকে আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে সরকারি নির্দেশনা মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। স্বাস্থ্য সুরক্ষার সবধরণের ব্যবস্থা করেছি। প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সকলে মাস্ক পড়ে ক্যাম্পাসে ঢুকছে। যদি কোন শিক্ষার্থী কোন কারণে অসুস্থ হয় তার জন্য একটি আইসোলেশন কক্ষ রয়েছে। সেখানে দুইটি বিছানা রেখেছি। প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণও রয়েছে। আমাদের সামগ্রিক ব্যবস্থানার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি, তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলেছি। উভয় পক্ষই অত্যন্ত সন্তষ্টি প্রকাশ করেছেন। এসব কারণে আমাদের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
কানিজ ফাতেমা গালস স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুহম্মদ আব্দুল হালিম বলেন, ৫৫৪দিন পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সরকারি নির্দেশনা বা স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ মেনে আমরা পাঠদান করছে। মাস্ক ছাড়া কোন শিক্ষার্থীসহ কেউ আসলে তাদেরকে স্কুলের পক্ষ থেকে মাস্ক দেওয়া হয়।ক্লাসে বিভিন্নভাবে সর্তক করা হয়। যাতে মাস্ক পরিধান করে, শারীরিক দুরত্ব বজায় থেকে ক্লাসে মনযোগী থাকে। এই বিষয়গুলো আরোও যথাযথভাবে মেনে চলার জন্য আমার শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি তারা যেন শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তুলে যে একগুলো ব্যবহার না করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে তাদের কি অসুবিধা হবে।
এ বিষয়ে খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: আব্দুল মজিদ মোল্লা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলার শুরু থেকে স্বাস্থ্যবিধি বা সরকারি নির্দেশনা মেনে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।সচেতনতা বাড়ানোর জন্য আমরা প্রতিটি শ্রেণির শাখার শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে যাচ্ছি।আমরা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করে প্রত্যেকের ভালো দিকগুলো অনুসরন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চাই।
এবিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেবেকা জাহান বলেন, আমরা সকল প্রতিষ্ঠানেই খোঁজ খবর রাখছি। সকল প্রতিষ্ঠান প্রধানকে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সবধরণের ব্যবস্থা রাখতে সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনের তাগিদ দিচ্ছি এবং পর্যবেক্ষণ করছি। এক্ষেত্রে কোন ধরণের গাফিলতি সহ্য করা হবে না।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর শনিবার শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর ও অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মামুনুল আলম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম সরকারি নির্দেশনা বা স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে পালন করা হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য মানিকগঞ্জের স্কুলগুলো পরিদর্শনে আসেন। এস,কে সরকারি বালিক উচ্চ বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের সাথে প্রেসবিফিংয়ে সরকারি নির্দেশনা মানার বিষয়ে সন্তষ্টি প্রকাশ করেন। এসময় তার সাথে জেলা শিক্ষা অফিসার রেবেকা জাহান,এস,কে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আরজু খানম, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কাজী মাকসুদা ইয়াসমিন,খান বাহাদুর আওলাদ হোসেন খান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিদ মোল্লাসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।