1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন

টাকা দিতে দেরি হওয়ায়, পেটের মধ্যে টিউমার রেখেই শেলাই করে দিলেন মানিকগঞ্জের পাষন্ড চিকিৎসক খাইরুল হাসান

  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১
  • ২৩৭১ বার দেখা হয়েছে

এস এম আকরাম হোসেন :
টাকা দিতে দেরি হওয়ায়, পেটের মধ্যে টিউমার রেখেই শেলাই করে দিলেন পাষন্ড চিকিৎসক খাইরুল হাসান। গত শুক্রবার দিনগত রাত দুইটার দিকে মানিকগঞ্জ জেলা শহরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে এই অমানবিক ঘটনাটির স্বীকার হয়েছেন আফরোজা আক্তার নামের এক নারী। রোববার ভুক্তভোগী রোগী ও তাঁর স্বজনরা এই অভিযোগ করে।

শুক্রবার রাত ১১টার দিকে জেলার সাটুরিয়া উপজেলার নয়াডিঙ্গী গ্রামের দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী ওই নারীকে ভর্তি করা হয় ওই হাসপাতালে। প্রসব যন্ত্রনা উঠায়, রাত দুইটার দিকে তাকে নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। অপারেশন করতে আনা হয় জেলাশহরের ডক্টর’স ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা মানিকগঞ্জ ডক্টরস ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা.খায়রুল হাসান এবং অজ্ঞানের চিকিৎসক ডা.আশিক রহমান গর্ভবতী ওই নারীকে ৪৫ মিনিট পর্যবেক্ষণের পর, তারা অপারেশন শুরু করেন। একটি সুস্থ কন্যা শিশু হয় তার। অপারেশন শেষে, ওই নারীর পেটে একটি টিউমার দেখতে পান ওই চিকিৎসক। তিন হাজার টাকা দিলে তিনি অপারেশন করে টিউমার অপসারণ করবেন বলে রোগীর স্বজনদের জানান। কিন্তু এই টাকা দিতে দেরি হওয়ায় তিনি পেটের মধ্যেই টিউমার রেখে শেলাই করে চলে যান বলে অভিযোগ তাদের।

ওই নারীর স্বামী বলেন, ‘আমি একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করি। আমি গরিব মানুষ। আমার গর্ববতী স্ত্রীকে নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায়, অন্য হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক ডেকে আনা হয়। অপারেশন শেষে পেটে টিউমার ধর পরার পর, চিকিৎসক টিমার অপসারণ করতে তিন হাজার টাকা চায়। আমি তার প্রস্তাবে রাজি হই এবং টাকাটা হাসপাতালে বিলের সাথে দিতে চাইলে তিনি অস্বীকার করে। বলে নগদ দিতে হবে। রাতে টাকাটা সংগ্রহ করতে একটু দেরী হওয়ায় তিনি পেটের মধ্যে টিউমার রেখেই শেলাই করে চলে যান। আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যরা তাকে বার বার অনুরোধ করি। হাসপাতালের লোকজনও তাকে বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু, তিনি কারও অনুরোধই রাখেননি। একটি চিকিৎসক যদি এতটা অমানবিক হয়, তাহলে আমাদের মতো নিরীহ মানুষ কোথায় যাবে?’

হতভাগ্য ওই নারী বলেন, ‘আমার পেট থেকে সন্তান বের করার পর কমপক্ষে আধাঘন্টা আমাকে সেখানে পেট কাটা অবস্থায় ফেলে রাখে। তারপর, পেটে টিউমারটি রেখে শেলাই করে দেয়। এই টিউমার অপসারণ করতে আবার পেট কাটতে হবে। মাত্র তিনহাজার টাকার জন্য তিনি আমার সাথে এমন করলেন, তিনি কেমন ডাক্তার? আমি এই পাষুন্ড চিকিৎকের বিচার দাবী করছি।

ওই হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সার্বক্ষণিক থাকলেও সার্জারীর চিকিৎসক অধিক রাতে থাকেন না। একারণে বিভিন্ন হাসপাতাল সার্জারী’র চিকিৎসকদের ডেকে এনে অপারশেন করাই। যত রাতই হোক, চিকিৎসক খায়রুল হাসানকে ডাকলে তিনি অজ্ঞানের চিকিৎসককে সাথে নিয়ে দ্রুত চলে আসেন। তাকে রাতের ডাক্তার বলা হয়। শুক্রবার রাতে আমার শরীরটা খারাপ থাকায়, আমি একুট আগে শুয়ে পড়ি। তিনি অপারেশন শুরু করার পর রোগীর লোকজন আমাকে ফোন করে আসতে বলে। আমি চিকিৎসককে অনুরোধ করে বলি, রোগী টাকা না দিলে আমি তাকে টাকা দিব। কিন্তু তিনি তা না করে, পেটের মধ্যে টিউমার রেখে শেলাই করে চলে যান। এটি অত্যন্ত অমানবিক। এতে আমার হাসপাতালের সুনাম নষ্ট হয়েছে। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় ফরিদা ইয়াসমিন জানান, এর আগে এই চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় অকালে অনেক রোগী মারা গেছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।

অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. খায়রুল হাসান বলেন, ‘একটি অপারেশন করতে গিয়ে আরেকটি অপারেশন প্রয়োজন পড়লে তার জন্য তো বাড়তি টাকা চাইতেই পারি। টাকা চাওয়াটা তো আমার ভুল হয়নি। হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ কাছে না আসায় আমি টিউমার অপারেশন করেনি। এই ম্যানেজার আমার বিল দেওয়ার সময় টাকা কম দেওয়া নিয়ে ঝামেলা করে। এই টিউমার অপারেশন করাটা খুব জরুরী না। পরেও করা যাবে।’

এব্যাপারে জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মো: লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি। এটা অত্যন্ত অমানবিক। এই ধরণের একজন, দুজন চিকিৎসকের অমানবিক আচরণের কারণে গোটা চিকিৎসক সমাজের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একজন অজ্ঞানের চিকিৎসক কিভাবে অপারেশন করে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ’এক সময়তো এমবিবিএস পাশ করা চিকিৎসকরা নিয়মিত অপারেশন করতেন। এখন, দেশে অনেক দক্ষ সার্জারি ও গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। জেনে শুনে, এধরণের কাজ প্রতারণার শামিল। তবে, এ ক্ষেত্রে রোগীর লোকজনদেরকেও আরও সচেতন হতে হবে। কোন সমস্যায়. কোন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিৎ-তাতো অবশ্যই জানতে হবে।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury