আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ দিনে সারা বিশ্বের মানুষ তাদের প্রিয়জনদের সান্নিধ্যে পালন করবে জীবনের অনিন্দ সুন্দর এই সম্পর্কটি।
বিজ্ঞানীদের মতে, ভালোবাসা শুধু মানসিক আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়। এর সঙ্গে শারীরিক অনেক কিছু জড়িত। কারো প্রেমে পড়লে বা কাউকে ভালোবাসলে শরীরের বিভিন্ন হরমোন একসঙ্গে কাজ করে। এতে শরীর উপকৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রেম-ভালোবাসার জাদুকরী শক্তি শরীরে বিস্ময়কর প্রভাব ফেলে।
রক্তচাপ: প্রেম-ভালোবাসা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ভালো। ভালোবাসায় রক্তচাপ কমে। ভালোবাসলে অক্সিটোসিন নামক লাভ হরমোন উৎপন্ন হয়। এই হরমোন রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে। হরমোনটি রক্তনালী শিথিল করে রক্তচাপের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কোলেস্টেরল: শুনতে অদ্ভুত মনে হলেও সত্য যে, প্রেম-ভালোবাসা কোলেস্টেরলের জন্যও ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব দম্পতি একসঙ্গে সুখে দিন অতিবাহিত করেন তাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোনের সমান্তরালে কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমেছে। গবেষকরা জানান, নারী-পুরুষের ভালো সম্পর্ক পরস্পরকে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের পরামর্শ প্রদানে উদ্বুদ্ধ করে। এটি কোলেস্টেরলের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। এছাড়া প্রেমিক-প্রেমিকা নিজেরাই বুঝতে পারেন যে, স্বাস্থ্যের উন্নতি প্রয়োজন, তাই তারা এ সময় নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান ও শরীরচর্চা করেন। এটি মূলত একে অপরের চোখে সুন্দর হয়ে ওঠার প্রতিযোগিতা।
জীবনের আয়ু: গবেষণায় দেখা গেছে, নারী-পুরুষের সুখী সম্পর্ক বেশিদিন বাঁচতে সাহায্য করতে পারে। যারা একা থাকেন তাদের মধ্যে বিষণ্নতা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ঝোঁক বেশি। এতে শরীরে রোগ সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। শরীরে রোগ বাসা বাঁধলে জীবনের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে। একা ছিলেন এমন নারীদের আয়ু গড়ে ২ বছর কমে এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ৬-৭ বছর- বলছে গবেষণা।
হরমোন: প্রেমে পড়লে অথবা ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ালে মস্তিষ্কে লাভ হরমোন উৎপন্ন হয়। যেমন ডোপামিন, এন্ডোরফিনস ও সেরোটোনিন। এসব হরমোন মনে সুখের জোয়ার বইয়ে বিষণ্নতার মাত্রা কমায়। এভাবে হার্টের রক্তনালী বিষণ্নতার ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা পায়।
হার্ট অ্যাটাক: যারা একা থাকেন তাদের অনেকেই বিষণ্নতায় ভোগেন। জীবনের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। তাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন করটিসোলের উৎপাদন বেড়ে যায়। গবেষণা বলছে, উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল রক্তে ট্রাইগ্লাইসেরাইড, সুগার ও প্রেসার বাড়াতে পারে। এগুলো হলো হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের প্রচলিত ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়।
রোগপ্রতিরোধ: প্রেমে পড়লে মানুষ যে সুখী হয় তার অন্যতম লক্ষণ হলো গুনগুন করে গান গাওয়া। শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করতে তথা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সুখে থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইমিউন সিস্টেম সবল থাকলে চেস্ট ইনফেকশন বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ থেকে মারাত্মক পরিণতির ঝুঁকি হ্রাস পায়। কেবল এটা নয়, সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমের প্রয়োজন রয়েছে।
ব্যথানাশক: নারী-পুরুষের আবেগপূর্ণ সুসম্পর্ক কেবল মনের জ্বালা দূর করে না, শরীরের ব্যথা কমাতে ওষুধের মতো কাজও করতে পারে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষণা বলছে, নারী-পুরুষের ভালো সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কিছু না কিছু কমতে পারে। কীভাবে? এ প্রসঙ্গে গবেষকরা জানান, ভালোবাসার পরম অনুভূতি মস্তিষ্কের সেই অংশকে সক্রিয় করে যা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে সক্রিয় হয়।