বাপ্পি লাহিড়ী মানে জমকালো পোশাক, চোখে রোদচশমা ও গলায় গোছা গোছা সোনার হার আর হাতে আংটি। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ শিল্পীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। শেষ যাত্রায় তার গায়ে সোনা ওঠেনি, কিন্তু কালো চশমায় ঢাকা ছিল তার চোখ। জীবনের শেষবেলা পর্যন্ত যে কালো চশমাটি তার সঙ্গী ছিল, সৎকারের আগেও তা তার সঙ্গেই ছিল।
বাপ্পি লাহিড়ীর শেষ যাত্রার বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেটদুনিয়ায়। তাতে দেখা যায়, বাপ্পাসহ আরও কয়েকজন প্রয়াত সুরকারকে তার বাড়ি থেকে শববাহী গাড়িতে তুলছেন। পুষ্পমালায় সাজানো হয়েছে বাপ্পি লাহিড়ীকে। চোখে পরানো হয়েছে সেই কালো চশমা। আর শববাহী গাড়িকেও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। গাড়ির মাথায় রয়েছে বাপ্পির হাসিমাখা মুখের একটি ছবি।
বাপ্পি লাহিড়ীর রাজকীয় শেষ যাত্রায় উপস্থিত হয়েছিলেন ঘনিষ্ঠজনেরা। বাবাকে বিদায় জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মেয়ে রেমা লাহিড়ী। ছেলে বাপ্পা লাহিড়ী বাবার মরদেহ কাঁধে তুলে নেন। শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকা বাপ্পি লাহিড়ীকে বিদায় জানাতে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন। এ তালিকায় রয়েছেন—বিদ্যা বালান, শক্তি কাপুর, অলগা ইয়াগমিন, রুপালি গাঙ্গুলি, ভুষণ কুমার, মিকা সিং, উদিত নারায়ণ প্রমুখ।
গত ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি মধ্যরাতে মুম্বাইয়ের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাপ্পি লাহিড়ী। গত বছরের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বাপ্পি লাহিড়ী। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। তিনি একাধিক শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যু হয়েছে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার (ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়) কারণে।
১৯৭০ থেকে ৮০-এর দশকে হিন্দি সিনেমা জগতে অন্যতম জনপ্রিয় নাম বাপ্পি লাহিড়ীর। হিন্দিতে ডিস্কো ড্যান্সার, চলতে চলতে, শরাবি, বাংলায় অমর সঙ্গী, আশা ও ভালোবাসা, আমার তুমি, অমর প্রেম প্রভৃতি সিনেমায় সুর দিয়েছেন; গেয়েছেন একাধিক গান।
কিশোর কুমার সম্পর্কে ছিলেন বাপ্পির মামা। বাবা অপরেশ লাহিড়ী ও মা বাঁশরী লাহিড়ী— দুজনেই সংগীত জগতের মানুষ। ফলে পুত্র বাপ্পি ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন। মা-বাবার কাছেই প্রথম গানের তালিম নেন। মা-বাবা নাম দিয়েছিলেন অলোকেশ, কিন্তু জনপ্রিয়তা পান বাপ্পি লাহিড়ী নামে।
১৯৫২ সালের ২৭ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বাপ্পি। তারপর দীর্ঘদিন বাংলা ও হিন্দি সিনেমায় গান গেয়েছেন, সুর দিয়েছেন। শরীরে প্রচুর সোনার গহনা পরতে ভালোবাসতেন। বলতেন, ‘আমার ভগবানের নাম সোনা!’ ছিল গায়কির নিজস্ব কায়দা, যা তাকে হিন্দি সিনেমা জগতে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায়। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার এবং সম্মাননা।
বাপ্পি লাহিড়ী রাজনীতিতেও নাম লেখিয়েছিলেন। বিজেপিতে যোগ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে ভোটেও লড়েছিলেন এই বরেণ্য শিল্পী।