আমার নিউজ ডেক্স,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে এবং জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বিশ্বাস করি একেবারে শিশু-কিশোর, যুবক থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধরা এই এসব প্রকাশনাগুলো পড়লে জাতির পিতা সম্পর্কে যেমন জানতে পারবে, তেমনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে ইতিহাসকে জানতে পারবে।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর লেখা ১১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনকালে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়ন শহরভিত্তিক নয়, একেবারে তৃণমূল থেকেই আমরা উন্নয়ন করে আসছি। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের আয়োজনের ফলে মানুষ যেমন ইতিহাসকে জানতে পারবে, সত্যকে জানতে পারবে, আর এর ভেতর থেকে নিজেরা নিজেদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে।
তিনি বলেন, দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি যে একটা দায়িত্ব আছে সেটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে যতই জানতে পারবে ততই তারা তা উপলদ্ধি করতে পারবে। কেননা, একটা মানুষ তাঁর জীবনের সবকিছু ত্যাগ করেছিলেন, বাংলাদেশের শোষিত বঞ্চিত মানুষের জন্য।
সরকার প্রধান বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষের যে অবস্থা তা ১৩/১৪ বছর আগেও এমন ছিল না, এটা হলো বাস্তবতা। কিন্তু আমরা সে পরিবর্তন আনতে পেরেছি, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের প্রকাশনা উৎসবের পাশাপাশি একই অনুষ্ঠানে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারস’ বৃত্তি প্রদান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজের চূড়ান্ত পুরস্কার বিতরণ করেন।
তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর সেগুন বাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইসস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন।
১১টি বইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর’ বইটির সম্পাদনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্বাচিত ১৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারস’ বৃত্তি এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত বিজয়ী ১০০ জনের মাঝে নির্বাচিত ১০ জনকে অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
মুজিববর্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এবং জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বিত উদ্যোগে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারস’ বৃত্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। স্নাতক পর্যায়ের সামাজিক বিজ্ঞান, কলা ও মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, আইন, ভৌত বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং এ- টেকনোলজি, বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, শিক্ষা ও উন্নয়ন, চিকিৎসা, চারু-কারু, কৃষি বিজ্ঞান এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিক্ষেত্রের প্রত্যেক অধিক্ষেত্র হতে একজন করে মেধাবী শিক্ষার্থীকে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলারস’ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তাদের প্রত্যেককে বৃত্তি হিসেবে এককালীন তিন লাখ টাকার চেক, সনদ এবং ১টি সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে জাতির পিতার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে জানানোর উদ্দেশে ১০০ দিনব্যাপী ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
২০২০ সালের ১ ডিসেম্বর হতে ২০২১ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত অনলাইনে আয়োজিত এই কুইজ প্রতিযোগিতায় নিবন্ধন করেন ১৫ লাখ ৭৬ হাজার প্রতিযোগী। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ এই অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় ১০ হাজারের বেশি ব্যক্তি পুরস্কৃত হয়েছেন। আর চূড়ান্ত বিজয়ী ১০ জনের হাতে ল্যাপটপ এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর করা সার্টিফিকেট তুলে দেন স্পিকার। বাকিদের পুরস্কার যার যার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়ার কথাও অনুষ্ঠানে জানান আয়োজক কমিটি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং আন্তর্জাতিক প্রকাশনা ও অনুবাদ উপ-কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফখরুল আলম।
সাহিত্য অনুষ্ঠান উপ-কমিটির আহ্বায়ক এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পূর্বে ধারণকৃত বক্তব্য অনুষ্ঠানে প্রচারিত হয়।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মুজিববর্ষের থিম সং ‘তুমি বাংলা ধ্রুবতারা, হৃদয়ের বাতিঘর’ পরিবেশিত হয়।