গোলের পর উজ্জীবিত করিম বেনজেমা, হতাশ লিওনেল মেসি
করিম বেনজেমার হ্যাটট্রিকে প্যারিস সেন্ত জার্মেইকে (পিএসজি) ৩-১ গোলে (দুই লেগ মিলিয়ে ৩-২) হারিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ। বিদায় নিয়েছে নেইমার-মেসি-এমবাপেরা।
যদিও প্রথম লেগে পিএসজি ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল। বুধবার দিবাগত রাতে ফিরতি লেগে রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেও শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল তারা। ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া রিয়ালকে বিরতির পর অল্প সময়ের ব্যবধানে জাগিয়ে তোলেন করিম বেনজেমা। নির্জীব হয়ে পড়া বার্নাব্যুতে সাগরের গর্জন ফিরিয়ে দেন।
বিরতির পর ৬১, ৭৬ ও ৭৮ মিনিটে হ্যাটট্রিক করে রিয়ালকে টিকিট পাইয়ে দেন কোয়ার্টার ফাইনালের। স্বপ্নভঙ্গের বেদনা আর একরাশ ব্যর্থতার গ্লানি মেখে নিস্তেজ দেহ টেনে নিয়ে বিদায় নেয় মেসি-নেইমাররা।
ফিরতি লেগের প্রথমার্ধে বলের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রেখে আক্রমণ শানায় পিএসজি। তৈরি করে একের পর এক সুযোগও। তার মধ্যে ৩৩ মিনিটে জালের নাগাল পান কালিয়ান এমবাপে। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি বাতিল হয়।
৩৫ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন করিম বেনজেমা। এ সময় ফেদেরিকো ভালভার্দের ক্রসে বক্সের মধ্যে লাফিয়ে উঠে হেড নেন বেনজেমা। দূরের পোস্টে তার নেওয়া হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
৩৮ মিনিটে গোল করে পিএসজিকে এগিয়ে নেন কালিয়ান এমবাপে। এ সময় নেইমারের বাড়িয়ে দেওয়া বল বক্সের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নেন ফরাসি স্ট্রাইকার। তার সামনে ছিলেন গোলরক্ষক আর ভিনিসিউস জুনিয়র। তাদের দুজনকে ফাঁকি দিয়ে জোরালো শটে বল জালে জড়ান তিনি। তার গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় নেইমার-মেসিরা।
৫৩ মিনিটে আরও একবার বল জালে জড়ান এমবাপে। এ সময় নেইমারের বাড়িয়ে দেওয়া বল বক্সের মধ্যে পেয়ে যান এমবাপে। তার সামনে ছিলেন কেবল রিয়ালের গোলরক্ষক থিবাউট কোর্তোয়া। তাকে পরাস্ত করে বল জালেও জড়ান। কিন্তু অফসাইডের কারণে সেটি বাতিল হয়।
এরপরের গল্পটুকু কেবলই করিম বেনজেমার। মাত্র ১৬ মিনিটের ব্যবধানে তিনি তিন-তিনটি গোল করে ম্যাচের সবটুকু আলো কেড়ে নেন।
৬১ মিনিটে গোল করে ব্যবধান কমান বেনজেমা। এ সময় মাঝমাঠ থেকে ব্যাকপাসে পিএজির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডোনারুমাকে বল দেন আশরাফ হাকিমি। কাছেই ছিলেন বেনজেমা। গোলরক্ষকের কাছ থেকে বল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ফরাসি স্ট্রাইকার। বল চলে যায় বামদিকে। সেখান থেকে ভিনিসিউস জুনিয়র পান। তিনি আবার বাড়িয়ে দেন বেনজেমাকে। দিশেহারা হয়ে ওঠা পিএসজি গোলরক্ষককে পরাস্ত করে বল জালে জড়াতে ভুল করেননি রিয়াল তারকা।
এই গোলের পর ভীষণ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে রিয়াল শিবির। একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে পিএসজির রক্ষণভাগকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে।
৭৩ মিনিটে পাল্টা আক্রমণে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন ভিনিসিউজ। গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি তিনি। ওপর দিয়ে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন।
৭৬ মিনিটে করিম বেনজেমা নিজের জোড়া গোল পূর্ণ করে এগিয়ে নেন দলকে। এ সময় পাল্টা আক্রমণে ভিনিসিউস জুনিয়র সুযোগ পেয়েও শট না নিয়ে বাড়িয়ে দেন লুকা মদ্রিচকে। মদ্রিচ দেন বক্সের মধ্যে আনমার্ক থাকা বেনজেমাকে। বেনজেমা বুদ্ধিদীপ্ত আলতো টোকায় বল জালে পাঠিয়ে দেন।
৭৮ মিনিটে চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজের তৃতীয় হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন বেনজেমা। এ সময় বামদিক থেকে ভিনিসিউস জুনিয়র বেনজেমাকে বল বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বক্সের মধ্যে সেটা নিয়ন্ত্রণে নেন পিএসজির মারকুইনহোস। কিন্তু ভুল পাসে বল পেয়ে যান বেনজেমা। সুযোগ কাজে লাগাতে মোটেও ভুল করেননি তিনি। তাতে রিয়াল এগিয়ে যায় ৩-১ ব্যবধানে।
শেষ পর্যন্ত বেনজেমার হ্যাটট্রিকে ভর করে পিছিয়ে পড়া রিয়াল মাদ্রিদ ৩-২ ব্যবধানের জয়ে পৌঁছে যায় কোয়ার্টার ফাইনালে। ভালো খেলেও বিদায় নিতে হয় এমবাপে-মেসি-নেইমারদের।