1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন

জমিতে কীটনাশক ব্যবহারের জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ২২ জুন, ২০২২
  • ৫৫৬ বার দেখা হয়েছে

জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস:
জমিতে ভেজাল কীটনাশক এবং অপরিমিত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষকের শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি জমির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এব্যাপারে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে না পারলে কৃষি ও কৃষক দুটোই ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্প্রতি মানিকগঞ্জের ঘিওর, সিংগাইর, হরিরামপুর এবং সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকজন কৃষক অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। জমিতে কীটনাশক দেওয়ার সময় নাকে ও মুখে কীটনাশক প্রবেশ করার ফলেই তারা আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া, অনেকেই চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় জানতে চেয়েছেন তারা।
ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি ইউনিয়নের বানিয়াজুরি গ্রামের ৭০ বছর বয়সী কৃষক লিয়াকত মিয়া বলেন, ‘আমার ভিটে মাটি নেই। পরিবার পরিজন নিয়া বানিয়াজুরি বেরিবাঁধের পাশে সরকারী জায়গায় একটি ছয়টিনের দুচালা টিনের ঘর উঠাইয়া থাকি। অন্যের কাছ থেকে আড়াই বিঘা জমি কটে নিয়া চাষাবাদ করি। কোন রকমে দুই বেলা খাইয়া বাইচা আছি। কয়েক বছর আগে পোকা খেদাইবার লিগা বেগুন, টমেটো, পুঁইশাকে বিষ দেওয়ার সময় অসুস্থ অইয়া গেছিলাম। মাথা ঘুরছিলো, শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হইছিলো, বমি বমি লাগছিলো, শরীর দুর্বল হইয়া গেছিলো। তখন, লেবু আর তেতুল খাইয়া ঠিক অইছিলাম। পোকা-মাকড় হইলে বিষ না দিয়াইতো পারি না। আবার বিষ দিবার যাইয়া মইরা যাই। এহন আমরা কি করুম।’

সিংগাইর উপজেলার বলধরা ইউনিয়নের কাস্তা গ্রামের ৪৫ বছর বয়সী কৃষক বিনয় কুমার মন্ডল বলেন, ‘আমি সরিষা খেতে ইউরিয়া সার দিবার যাইয়া আমার ডান হাতের তালুসহ আশের পাশের সবজায়গায় ভিজা যায়। তারপর চাইয়া দেখি রক্ত পরতেছে। ভয় পাইয়া গেলাম। পরে পানি দিয়া হাত ধুইয়া বরুন্ডী বাজারের একটি ওষুধের দোকানে যাইয়া কওয়ার পর কি জানি একটা মলম দিল। ১৫দিন ওইটা লাগানোর পর সারছে। ঘা হইয়া গেছিলো। এখন হাতে পলিথিন পেচাইয়া দেই। এরপর আরে তেমন সমস্যা হইতেছে না।’

সদর উপজেলার বেতিলা-মিতরা ইউনিয়নের আইরমারা গ্রামের ৫৮ বছর বয়সী কৃষক হালিম খা বলেন, ‘কয়েক বছর আগে বর্ষা মৌসুমে গোয়াল ঘরের চারদিকের ডোয়ায় কেইচা, পিপড়াসহ নানাজাতের পোকা-মাকড় উঠতেছিলো। এজন্য আমি ডোয়ায় তরল বিষ-বন্যার ওষুধ দিছিলাম। বিষ দেওয়ার আধাঘন্টা পর আমার একটা গরু অসুস্থ হইয়া মইরা গেলো। একেরপর এক অসুস্থ হইয়া একদিনে আমার চারটা গরুই মইরা গেলো। বড় ক্ষতি হইছে। সেই ক্ষতি আমি এখনও পুষাইবার পারি নাই।’
হরিমাপুর উপজেলার পাটগ্রাম চরের ৫৫ বছর বয়সী কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, ‘ ব্রি-২৯ ধানের খেতে ফুরাডান ও বাসুডিন পানির সাথে গুলাইয়া খেতে করছিলাম। ৩ ড্রাম দেওয়ার পর আমি অজ্ঞান হইয়া জমিতে পইরা যাই। জ্ঞান ফেরার পর জানলাম, আশে পাশের লোকজন আমাকে ওষুধের দোকানে নিয়া স্যালাইন দেওয়ার একঘন্টা পর আমার জ্ঞান ফিরছে।’

মানিকগঞ্জ সদরের মনোয়ার হোসেন, কাজী মতিউর রহমান, ইউসুফ আলী, কাদের মিয়া, লালন মিয়া, ঘিওরের আনন্দ কুমার রায়, সিঙ্গাইরের আব্দুর হালিমসহ অনেক কৃষক খোলামেলা কথা বলেছেন। দোকান থেকে কীটনাশক কিনলেও ভাউচার বা রশিদ না দেওয়া, একটি কীটনাশকের পরিবের্ত একাধিক কীটনাশক দেওয়া, এক কোম্পানীর কীটনাশকের পরিবর্তে অন্য কোম্পানীর কীটনাশক দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের।

কৃষকের এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘কৃষকের অসুস্থ হওয়ার পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। সবচাইতে বড় কারণ হচ্ছে তারা কীটনাশক প্রয়োগের সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না। কীটনাশক স্প্রে করার সময় হ্যান্ডগ্লোবস, মাস্ক, পায়ের জুতা, চোখে চশমা, ফুল হাতা শার্ট বা পিপিই পড়ার কথা। কিন্তু তারা এসব স্বাস্থ্য সুরক্ষা পোশাক পড়েন না। এছাড়া, বাতাসের অনকূলে স্প্রে করার কথা থাকলেও তারা তা করছেন না। এসব কারণেই মূলত কেউ কেউ অসুস্থ হচ্ছেন। তবে, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এসব ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও কাজ করছেন। তবে, ধীরে ধীরে কীটনাশক প্রয়োগ কমিয়ে জৈব-বালাইনাশকের ব্যবহার বাড়াতে হবে। কেননা, পরিমানমত কীটনাশক প্রয়োগ না হওয়ার ফলে কীটনাশক জমিতে খুব একটা কাজ করছে না। এছাড়া বাজারে রয়েছে কিছু ভেজাল কীটনাশক। ভেজাল কীনাশক পরীক্ষা করার ব্যবস্থাও জেলা পর্যায়ে নেই। পাঠাতে হয় ঢাকায়। কৃষি এবং কৃষককে বাঁচাতে হলে কৃষকদের সচেতনতা বাড়াতে হবে।’

সিভিল সার্জন ডা. মোয়াজ্জেম আলী চৌধুরী বিপ্লব বলেন, ‘কোন ধরণের কীটনাশক কি পরিমান দিতে হবে সেব্যাপারে কৃষকের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তা না হলে তারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থেকেই যাবে। কৃষকদের কি কি সতর্কতা ব্যবস্থা নিতে হবে সেদিকে লক্ষ্য রেখে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কৃষি বিভাগ যদি আমাদের সহযোগিতা চায় তাহলে, স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আমরাও সহযোগিতা করতে পারি।’

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury