কেমার রোচের অফস্টাম্পের এক হাতের বেশি বাইরের বল। তামিম ইকবাল গেলেন ড্রাইভ খেলতে। ব্যাটে চুমু খেয়ে বল উইকেটের পেছনে। সাকিব আল হাসানের শরীরের দিকে তাক করা বাউন্স। দিয়েছিলেন আলজারি জোসেফ। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান গেলেন কাট করতে। ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড।
সেন্ট লুসিয়া টেস্টে তামিম ও সাকিবের আউটের ধরন দেখে বোঝার উপায় নেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তারা ১৫ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে দিয়েছেন! নিজের উইকেটের মায়া তারা করলেন না! শুধু এই দুই সিনিয়র ক্রিকেটারই কেন! নাজমুল ইসলাম শান্ত, মুমিনুল হক বা মুশফিকুর রহিমও তো এই অঙ্গনে কাটিয়ে দিয়েছেন দীর্ঘ সময়।
নিজেদের অবস্থান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কতটা শক্তিশালী করতে পেরেছেন তারা? শেষ কয়েক সিরিজে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। সমস্যা কোথায়? ব্যাটসম্যানদের স্কিল নাকি মানসিক দক্ষতা? স্কিলের ঘাটতি নিয়ে দেশের সেরা একাদশে আসার কথা না তাদের কারও। তাহলে মানসিক ঘাটতিই ধারাবাহিক উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে?
জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা সেই কথাই বোঝাতে চাইলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে স্কিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাথে মানসিক দক্ষতা। এই দুইটার কম্বিনেশন হওয়াটা জরুরি। শুধু স্কিল নয়, এর সাথে মানসিক দক্ষতার বিশাল যোগসূত্র আছে। বিশ্বে অনেক ব্যাটসম্যান আছে টেকনিক্যালি সাউন্ড না হয়েও অনেক অনেক রান করে গেছে। কারণ তারা মানসিকভাবে শক্ত ছিল। আমাদের সাকিবকেই দেখুন। ও হয়তো টেকনিক্যালি খুব বেশি শক্তিশালী নয়। কিন্তু সবসময় রান করে আসছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ডুবেছে বাংলাদেশ। মাঝে মাঝে দুয়েকটি ইনিংসে দলগত নৈপুণ্য থাকলেও বেশিরভাগ সময় দল ব্যর্থ হয়েছে। এ সময়ে একাধিক তরুণ ক্রিকেটারকে বাজিয়ে দেখেছে টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু কেউই আস্থা অর্জন করতে পারেননি। আবার পুরোনো যাদের ফেরানো হয়েছে তারাও দায়িত্ব নিতে পারেননি।
তরুণদের ঘরোয়া ক্রিকেটে আরও কঠিন পরীক্ষায় ফেলে, আরও ঝালাই করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিয়ে আসার পরামর্শ মাশরাফির, ‘নতুনদের জন্য তো এমনিতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কঠিন হওয়ার কথা। আমাদের দেশে বরং নতুন যারা এসেছে রান করে ফেলেছে। আমরাও তাদেরকে নিয়ে অনেক লাফালাফি করেছি। দিন শেষে অন্যান্য দল যখন তাকে পরিকল্পনায় এনেছে তখন আর তারা পারফর্ম করেনি। নতুন যখন আসে অন্য দল তাকে নিয়ে এত হিসাব করে না। তার জন্য কাজটা তখন কিছুটা সহজ হয়ে যায়। আবার দলকে যখন প্রতিপক্ষ হিসেবে ধরে তখন পুরো টপ অর্ডার সহ সাতজন ব্যাটসম্যানকে নিয়েই চিন্তা করে।’
‘এক মৌসুমের পারফরম্যান্স দেখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা কঠিন। নতুন খেলোয়াড়দের একটু সময় নিয়ে জাতীয় দলে নেওয়া উচিত। হুট করে নেওয়া আপনাদেরও একটা ভারসাম্য জরুরি। যারা পারফর্ম করছে তাদের সরাসরি জাতীয় দলে না দেখে ‘এ’ টিম সহ অন্যান্য দলে খেলুক, পারফর্ম করুক। কারণ বয়স তো চলে যাচ্ছে না। ১৮-১৯ বছর বয়সী একজন খেলোয়াড়ের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট উপযুক্তও না। বয়স ২২-২৩ হলে সেটা উপযুক্ত জায়গা। তখন সে ভালোভাবে প্রস্তুত হয়ে আসে।’– যোগ করেন মাশরাফি।
সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচ, ম্যানেজমেন্ট ও পরিচালনাকারীদের নিজেদের ভাবনা পাল্টানোর আহ্বান জানিয়েছেন মাশরাফি। তার মতে, ‘ঘরোয়া ক্রিকেট খেলোয়াড় তৈরির জায়গা। আমাদের যারা স্থানীয় খেলোয়াড় খেলছে, তাদের মাঝ থেকেই তো খেলোয়াড় উঠে আসবে। জাতীয় দল জাতীয় দলের জায়গায় থাকবে। কিন্তু এই খেলাগুলো চলমান থাকলে দুই একজন ক্রিকেটার ওখান থেকে পাবেনই। ২-৩ সিজন পরে ৮-১০ জন খেলোয়াড় বের করার চিন্তা করলে হবে না। ২-৩ সিজন পরে যদি একজন চৌকস খেলোয়াড় পান, যে কি না আপনাকে ১৫ বছর সার্ভিস দেবে। আপনার ফোকাস থাকতে হবে এরকম। এগুলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আরও ১০০ বছর আগে করেছে। ভারত ৩০ বছর আগে করেছে এখন ফল পাচ্ছে। এখন আমরা শুরু করলে আমরাও পাবো। আমাদের ভালো সম্ভাবনা আছে।’