অভি হাসানঃ
গুলশান হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শহিদ রবিউল করিম(কামরুল) এর ষষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে ১জুলাই শুক্রবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সকাল দশটায় কাটিগ্রাম স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠ থেকে শোকযাত্রা বের করা হয়।শোকযাত্রাটি শহিদ রবিউল করিমের সমাধীস্থলের সামনে যেয়ে শেষ হয়। রবিউলের পরিবারের সদস্য সহ
সর্ব স্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ শেষে বাসাই এলাকায় রবিউল করিমের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের স্কুল ব্লুমস কাটিগ্রামে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজান বেকারিতে দেশি ও বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে জঙ্গিরা। খবর পেয়ে তাঁদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে ছুটে যান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার (এসি) রবিউল। এ সময় জঙ্গিদের ছোড়া গুলি ও গ্রেনেডের আঘাতে তিনি নিহত হন।
রবিউল করিমের বাড়ি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রামে। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল তাঁর জন্মস্থান মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় নানা কর্মসূচি পালিত হয়। সমাজের অবহেলিত শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতাহীন শিশু ও কিশোরদের জন্য বাড়ির অদূরে বাসাই গ্রামে ২০১১ সালে রবিউল করিম নিজ খরচে গড়ে তুলেছিলেন বিকনিং লাইট অরগানাইজেশন অব ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি (ব্লুমস) নামের বিশেষায়িত বিদ্যালয়। বেলা একটার দিকে ব্লুমস বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।অনুষ্ঠানে , সদ্য পদন্নোতি প্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোহাঃ হাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেলা বিশেষ শাখা অপু মোহন্ত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিবালয় সার্কেল) নুর জাহান লাবনী। শহিদ রবিউল করিম প্রতিষ্ঠিত ব্লুমস কাটিগ্রামের সভাপতি জি. আর শওকত আলী, বিসিএস প্রশাসন একাডেমির পরিচালক আব্দুল আলীম খান প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রবিউল করিমের ভাই শামসুজ্জামান সামস।
বক্তব্য প্রদান কালে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান বলেন, ‘আগে শুধু আমি জানতাম ব্যাক্তিগত ও আমাদের এসি রবিউল হলি আর্টিজান হামলায় মারা গেছে ওর একটা স্কুল আছে।ও(রবিউল) যে এতো বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন ও মানবিকতা সম্পন্ন তা আজ দেখে সত্যি অবাক হয়ে গেছি। আমরা ওকে নিয়ে গর্ববোধ করি ওর পরিবার ওকে নিয়ে গর্ব কর, বাংলাদেশ পুলিশও গর্ববোধ করে। আর আমরা জানি যে হলি আর্টিজানে রবিউল যখন শাহাদাত বরণ করে তখন সে একজন নির্ভীক অফিসারের মতো সামনে এগিয়ে যায়। সে তাঁর দায়িত্ব পালনের জন্যই সেখানে গিয়েছিল। রবিউলের উদ্যোগগুলো রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। ধর্মীয় উৎসবে নিরাপত্তা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা যা এখন তৈরি হয়েছে, তা আগে ছিল না। ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ কখনো সহ্য করা হবে না’।
শোকসভায় এসি রবিউলকে নিয়ে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক আবদুল আলীম। আবদুল আলীম খান বলেন, ‘মানুষের কল্যাণে কাজ করাই রবিউলের স্বপ্ন ছিল। তিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু-কিশোরদের সেবা ও পুনর্বাসনের স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যাঁরা ব্লুমসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সহযোগিতা করছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। যখনই সমাজ পরিবর্তনের কাজ শুরু করেছিলাম, তখনই নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। সেগুলো কাটিয়ে আজ আমরা এত দূর এসেছি।’
প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি জি আর শওকত আলী বলেন, রবিউল আজ তাঁদের মাঝে না থাকলেও তাঁর কিছু অসম্পন্ন কাজ থেকে গেছে। সেগুলোর পূর্ণতা তাঁদেরই দিতে হবে। অবহেলিত শিশু-কিশোরদের সমাজের মূলধারায় যুক্ত করা যে স্বপ্ন রবিউল দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠান শেষে ব্লুমসের বিশেষ শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও দুস্থদের মাঝেও খাবার বিতরণ করা হয়।
এছাড়া ঢাকায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ছয় বছর পূর্তিতে নিহত দুই পুলিশ কর্মকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তাঁদের সহকর্মীরা। ওই দুই কর্মকর্তার স্মরণে রাজধানীর গুলশান থানার নতুন ভবনের সামনে নির্মিত দীপ্ত শপথ ভাস্কর্যে ফুল দিয়ে আজ শুক্রবার শ্রদ্ধা জানান তাঁরা। এর পাশাপাশি বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারাও দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে স্মরণ করে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।