নিউজ ডেস্ক:
স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে প্রতি বছরই রাজধানী ছাড়ে লাখো মানুষ। সড়ক পথে যানজট, গরম আর নানা দুর্ভোগ। সেসব এড়িয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি যাওয়ার জন্য মানুষের প্রথম পছন্দ ট্রেন। সে কারণেই ঈদ এলে শত দুর্ভোগ সহ্য করেও কাঙ্ক্ষিত টিকিটের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে মানুষ। গত তিন দিনের মতো আজও (সোমবার, ৪ জুলাই) টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় দেখা গেছে কমলাপুর রেল স্টেশনে। গতকাল রোববার (৩ জুলাই) বিকেলে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে রাত কাটিয়েছেন অনেকে। সোমবার (৪ জুলাই) সকাল ৮টার পরে কাউন্টার খুলেছে। আজ অপেক্ষমাণ যাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে ৮ জুলাইয়ের টিকিট। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও কাঙ্খিত টিকিট পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও প্রায় সবার মধ্যেই রয়েছে অনিশ্চয়তা। এদিকে, বার বার চেষ্টা করেও অনলাইনে টিকিট না পাওয়ায় ক্ষোভ জানান অনেক যাত্রী। তারিফ রহমান বগুড়ার টিকিট নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘দেশ যেখানে ডিজিটালি আগাচ্ছে, সেখানে কেনো লাইন ধরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গরমে-ঘামে কষ্ট করে আমাদের টিকিট নিতে স্টেশনে আসতে হবে? অনলাইনের ওপর আরো জোর দিতে হবে। তাছাড়া দেখুন, স্টেশনে টিকিট কাউন্টারগুলোর সামনে এতগুলো ফ্যান, অথচ বেশিরভাগই চলছে না। এসব ব্যাপারে নজর দেওয়ার কেউ নেই । কমলাপুর রেল স্টেশন সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পুরুষদের জন্য ৭-৮টি লাইন থাকলেও নারীদের জন্য এবার একটি কাউন্টারকে কেন্দ্র করে একটি লাইন। তাই পুরুষদের পাশাপাশি টিকিটপ্রত্যাশী নারীদের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। তবুও ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন নারীরাও । শনিবার (২ জুলাই) রেলমন্ত্রী কমলাপুর পরিদর্শনে এসে বলেছেন, নারী যাত্রীদের টিকিটের জন্য চাপ বাড়ার কারণে তাদের জন্য একাধিক কাউন্টারের ব্যবস্থা করা হবে। যদিও কমলাপুর রেল স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, আজ পর্যন্ত নারীদের জন্য একটি কাউন্টার থেকেই আগাম ট্রেনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। অসংখ্য নারীরা রেলের টিকিটের জন্য ভোর থেকে লাইন দিয়ে অপেক্ষা করছেন। সুমাইয়া নামের রংপুরের আগাম টিকিট নিতে আসা এক নারী যাত্রী বলেন, ‘ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট পাই না। পুরুষদের চেয়ে আমাদের কষ্টটা বেশি। বিশেষ করে, গরম-ঘাম এবং বাথরুমের সমস্যা। এ ব্যাপারে স্টেশন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’ আগাম টিকিটের জন্য দিনরাত টানা পালা করে অপেক্ষায় নাজেহাল যাত্রীরা। ওয়েবসাইট কিংবা ‘রেল সেবা’ অ্যাপ ঠিক মতো কাজ না করায় অনলাইনের মাধ্যমে টিকিট না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেকের। অনলাইনে টিকিট পাওয়া গেলে এত কষ্ট আর বিড়ম্বনা সয়ে তাদেরকে স্টেশনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো না বলে জানান যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে টিকিটের জন্য তারা স্টেশনে আসছেন।কমলাপুর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রোববার আগামী ৭ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি শুরু করার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় ৮২ ভাগ টিকিট। যারা রোববার লাইনে দাঁড়িয়ে ৭ জুলাইয়ের টিকিট পাননি, তারাই ৮ জুলাইয়ের টিকিটের জন্য সেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। পালা করে পরিবারের অন্য সদস্যরা এসেও লাইনে দাঁড়ান বলেও জানান অনেক যাত্রী। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, ‘হাজার হাজার মানুষ টিকিটের জন্য আসেন, কিন্তু এর ১০-১৫ ভাগ মানুষ টিকিট পান। ট্রেনের সিট সীমিত, মানুষের চাহিদা অনেক বেশি। তারপরও আমরা বাড়তি ট্রেনের পাশাপাশি প্রতিটা আন্তঃনগর ট্রেনে বাড়তি বগির ব্যবস্থা করেছি। যাতে নিয়মিত যাত্রীদের পাশাপাশি কিছু বাড়তি যাত্রী নির্বিঘ্নে ট্রেনে বাড়ি যেতে পারেন।’