অভি হাসানঃ
সকাল সকাল অফিস। ঘুম থেকে উঠে আড়মোড়া ভেঙ্গে যাচ্ছি অফিসের দিকে। রিকশায় করে অফিসের সামনে যাওয়ার পর ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই তিনি ২৫ টাকা চাইলেন। মানিব্যাগ ঘেটে দেখি কয়েকটা ১০০ টাকার নোট। একটা নোট এগিয়ে দিতেই রিকশাচালক বললেন, ‘মামা, ৭০ টাকা দিতে পারবো, ৫ টাকা খুচরো নেই।’
প্রয়োজনে একজনকে কল দিতে গিয়ে দেখি মোবাইলে ব্যালেন্স নেই। রাস্তার পাশের রিচার্জের দোকানে ১০০ টাকা দিলাম। একটু পরে মোবাইলে বার্তা এলো- ৯৮ টাকা রিচার্জ সম্পন্ন হয়েছে। আমি ২ টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় কিছুক্ষণ দাড়িয়ে রইলাম। দোকানদার দেখি অন্য গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে মোবাইলের বোতাম টিপছেন। নিরাশ হলাম, পরে খানিক লজ্জাও লাগলো। কাঁচুমাঁচু মুখে সেখান থেকে সরে এলাম।
অফিস শেষ! বাসায় ফিরতে ফিরতে মনে হলো এক কাপ চা খেলে মন্দ হয় না। পাড়ার চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আয়েশ করে এক কাপ চা খেলাম। দাম ৭ টাকা, দোকানিকে ১০ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিলাম। দোকানি দুই টাকা ফেরত দিলেন। আরেক টাকা চাইলে দোকানি কি আমায় ছোটলোক ভাববে। তাই বলে এক টাকা ছেড়ে দিবো- মাথার মধ্যে এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের চিন্তায় কখন যে হাঁটা শুরু করেছি নিজেই জানি না।
হঠাৎ মনে হলো- চা শ্রমিকেরা আন্দোলন করছে তাঁদের মজুরি ১২০ টাকা করার দাবিতে। এই যুগে নাকি তাঁদের মজুরি ১২০ টাকা। তাও সবার না! ক্যাটাগরি দিয়ে ভাগ করা- এ ক্যাটাগরি ১২০ টাকা, বি ক্যাটাগরি ১১৮ টাকা, সি ক্যাটাগরি ১১৭ টাকা। এক টাকা ও দুই টাকার পার্থক্যের ক্যটাগরি। এই যুগে সারাদিন কাজ করে তাঁরা ১১৭ টাকা পায়। আর আমি ১ টাকা ছেড়ে দিলাম সেই চায়ের পাতা মেশানো পানি খেয়ে।
সকালে পাঁচ টাকা, দুপুরে ২ টাকা, বিকেলে ১ টাকা করে সারাদিনে এরকম গড়ে ১০ টাকা অহেতুক যায় প্রতিদিন। মাসে ৩০০ টাকা। মানে চা শ্রমিকদের প্রায় আড়াই দিনের খাঁটুনি। আমি শুধু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছেড়ে দিচ্ছি কোন একজনের আড়াই দিনের পরিশ্রমের মূল্য।