জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস:
মানিকগঞ্জে বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের হামলায় শতাধিক বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী আহত এবং একজন গুলিবিদ্ধ হওয়ার দাবী করেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি আফরোজা খান রিতা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা তিনটার দিকে মানিকগঞ্জের গিলন্ড এলাকায় জেলা বিএনপি আয়োজিত তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী করেন।
তিনি বলেন, ’বিএনপি’র ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচী জেলা পুলিশকে তিন দিন আগেই অবহিত করা হয়েছে। কর্মসূচী পালন করা যাবে না, এধরণের কোন কথা কেউ বলেন নি। আজ সকাল ১১টায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে পুর্বনির্ধারিত কর্মসূচীতে যোগদানের জন্য নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে আসতে থাকলে প্রতিটি সড়কেই তারা পুলিশী বাধায় পড়ে। ১১টার সময় উত্তর সেওতা থেকে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিল খালপাড় এলাকায় আসলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। বারবার অনুরোধ করা হলেও পুলিশ মিছিল নিয়ে আসতে না দেওয়ায় তারা সেখানে দাড়িয়েই শ্লোগান দিতে থাকে। একপর্যায়ে পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ, টিয়ার শেল এবং রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলিবিদ্ধ-ফজলুল হক মানিকগঞ্জ সদর উপজেরা বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। পুলিশ ফজলুল হক, সেলিম মোহাম্মদ এবং রুবেল মাহমুদকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করেছে। আমি অতি উৎসাহি পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তির দাবী করছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুষ্ঠান ঠেকাতে সকাল থেকেই লাঠিসোটা নিয়ে জেলা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয় জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তারা বিভিন্ন গাড়ী তল্লাশী করে অনেককেই মারধর করেছে। পুলিশকে সাথে নিয়ে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা অত্যন্ত দু:খজনক।’
তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, জ্বালানী তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি’র শান্তিপূর্ন কর্মসূচীতে সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা হামলা করেছে। কর্মসূচী পালন দেয়নি অনেক স্থানে। একটি স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের বাধা অত্যন্ত দু:খজনক। আগামীতে এই ধরণের হামলা ও বাধা দিলে আমরাও বসে থাকবো না।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আজাদ হোসেন খান, আব্দুল বাতেন, যুগ্ম-সম্পাদক সত্যেন কান্তি পন্ডিত ভজন, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপি নেতা গোলাম কিবরিয়া সাইদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুস সালাম বাদল, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড: নুরতাজ আলম বাহার, পৌর বিএনপি’র সভাপতি নাসির উদ্দিন আহম্মেদ যাদু, সাধারণ সম্পাদক এস এম এম ইকবাল হোসেন, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিক উদ্দিন ভূইয়া হাবু, যুববিষয়ক সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদ হারেজ, প্রচার সম্পাদক আব্দুল্লা আল মামুন প্রমুখ।
বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশী বাধার ব্যাপারে মানিকগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ‘বিএনপি’র কর্মসূচী পালনের অনুমতি না থাকায় আমরা তাদের মছিলে বাধা দিয়েছি। আমরা তাদের আগে আঘাত করিনি। আমাদের ওপর তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করায় আমরা তাদের ধাওয়া করি। তাদের আঘাতেই আমি এবং কনস্টবেল শাহিনসহ ৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। শাহীনের অবস্থা খুবই খারাপ। তার ডান চোয়াল ফেটে গেছে।’
গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি নেতা ফজলুল হক গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তিনি গুলিবিদ্ধ হননি। লাঠি চার্জ বা ইটপাটকেলের আঘাতে হয়তো তিনি আহত হয়েছেন। তিনিসহ গ্রেপ্তারকৃত অন্যদুজনকেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ‘
উল্লেখ্য, পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের সাথে বিএনপি নেতা কর্মীদের সংঘর্ষ ঘটে। এতে উভয় পক্ষের অনেকেই আহত হন। জেলা শহরের খালপাড় এলাকায় সকাল ১১টায় এই সংঘর্ষ বাধে। দুপুর ১২ টা পর্যন্ত দফাদফায় সংঘর্ষ হয়। এক ঘন্টা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিলেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তবে সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর উপস্থিত ছিলেন না।