নিউজ ডেস্ক:
ছোট বেলায় বুঝার মতো বয়স থেকেই একটি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল বেড়ে ওঠা তার। নাচ, গান অভিনয় সংস্কৃতির প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই ছোট বেলা থেকে আজ তার রয়েছে বলিষ্ঠ পদচারণা । স্পষ্টবাদী মানুষ বলেই সোজা সাপটা কথা বলাটা তার পছন্দ । তার ভেরিভাইড ফেসবুকের টাইমলাইনের আপলোড দেখলেই এর সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যায় । অনেক মেয়েরাই যেখানে নিজের বয়সটা লুকানোর চেষ্টা করেন, বিশেষ করে নায়িকা হলে তো কথাই নেই সেখানে অরুণা বিশ্বাসের ধারনাটা একদম বিপরীত । তিনি বলেন ‘ বয়স লুকিয়ে কি লাভ? বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ পরিণত হয়। জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। বোধও বাড়ে। অভিজ্ঞতা বাড়ে। তাই এটা জীবনের অন্যতম সৌন্দর্য’।
‘কুড়িতে বুড়ি হওয়া’ এই কথার সাথে পরিচিত প্রায় সব মেয়েরাই। বয়স বিশের উপরে পেরিয়ে গেছে তো দুনিয়াদারি ভুলে তোমাকে এখন বিয়ের জন্য পাত্র খুঁজতে হবে। পড়াশোনা লাটে যাক, ক্যারিয়ার গোল্লায় চলে যাক, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর আশা বাদ দিয়ে বিবাহযোগ্য ছেলে খুঁজতে শুরু করো নয়তো একদল প্রতিবেশী তোমার জীবনটাকে প্রতিনিয়ত বিষিয়ে তুলতে উঠেপড়ে লাগবে।
অরুণা বিশ্বাসের ধারনাটা তেমন ছিলনা বলেই , ১৯৮৩ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অবস্থিত ভারতেশ্বরী হোমস থেকে এসএসসি পাস করেন অরুণা বিশ্বাস। এরপর ঢাকার বদরুন্নেসা কলেজ থেকে এইচএসসি ও ইডেন কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন। পরে কানাডার অক্সফোর্ড কলেজ থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস টেকনোলজির ওপর ডিপ্লোমা করেন তিনি। দীর্ঘ সময় প্রবাস জীবন কাটালেও শেকড়ের টানে ফিরে এসেছেন নিজ মাতৃভুমিতে।
আজ পঞ্চাশ উর্ধ বয়সেও অরুণা বিশ্বাসের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে পথচলা থেমে নেই । তিন যুগ, তার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে ৩৬ বছর পূর্ণ করেছেন। ১৯৮৬ সালে নায়করাজ রাজ্জাকের পরিচালনায় ‘চাপা ডাঙ্গার বউ’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে তার যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮৬ সালের ৬ জুন সিনেমাটি মুক্তি পায়। এতে তার বিপরীতে ছিলেন নায়ক বাপ্পারাজ। প্রথম সিনেমাতেই অরুণা বিশ্বাস এটিএম এম শামসুজ্জামান, শাবানা’র মতো অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। প্রথম সিনেমা দিয়েই অরুণা বিশ্বাস দর্শকের মন জয় করেছিলেন। এরপর আর তাকে পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। একে একে অভিনয় করেন, ‘দুর্নাম’, ‘সম্মান’, ‘কৈফিয়ত’, ‘দংশন’, ‘চরম আঘাত’, ‘বন্ধু বেঈমান’,‘সাদী মোবারক’, ‘আবদার’, ‘প্রেম শক্তি’, ‘হাঙ্গর নদী গ্রেনেড’, ‘মাটির কসম’, ‘জনম দু:খী’, ‘সতীনের সংসার’, ‘মিস্টার মাওলা’, ‘ত্যাগ’, ‘মায়ের দোয়া’,‘ হিংসার আগুন’, ‘অবুঝ সন্তান’সহ আরো অনেক দর্শকপ্রিয় সিনেমায়।
ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে এই নায়িকা জানান , স্কুল কলেজ জীবনে তিনি নাচে যেমন পারদর্শী ছিলেন ঠিক তেমনি গানেও। তারই বাবা যাত্রা সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাসের কাছেই তার গানে হাতেখড়ি ‘ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটি শেখার মধ্য দিয়ে। এরপর নানান সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শখের বশে তার গান গাওয়া হয়েছে।
তার প্রথম পরিচালিত সিনেমা ‘অসম্ভব’ সিনেমাতেই তিনি প্রথম প্লে-ব্যাক করেছেন। গানের শিরোনাম ‘ও শাড়ি’। গানটি লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং সুর সঙ্গীত করেছেন অমিত চ্যাটার্জি।
বর্তমান সময় নিয়ে আলাপচারিতায় এই নায়িকা বলেন, সরকারি অনুদানে তিনি নির্মাণ করেছেন ‘অসম্ভব’ নামের সিনেমা । যাত্রাশিল্প ও যাত্রাশিল্পীদের গল্প নিয়ে তৈরি হচ্ছে এ সিনেমাটি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি যাত্রাশিল্প ও যাত্রাশিল্পীদের নিয়ে একটা গল্প বলতে, যা অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নটা পূরণ হতে যাচ্ছে। আরও ভালো লাগছে এজন্য যে সাধারণ খুব কম কাজ হয়েছে এমন একটি বিষয় সিনেমার জন্য বেছে নিতে পেরেছি বলে।
‘অসম্ভব’ সিনেমায় অভিনয় করছেন আবুল হায়াত, অরুণা বিশ্বাস, শতাব্দী ওয়াদুদ, সোহানা সাবা, গাজী আবদুন নূর, শাহেদ, তার বিপরীতে স্বাগতা ও অরুণা বিশ্বাস। চলতি বছর নিয়ে চার বার তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য ।
কেমন হচ্ছে বর্তমান সিনেমা ? তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো মন্দ মিলিয়ে ছবি মুক্তি পাচ্ছে। তবে অপরিপক্ক ভাবে নির্মিত সিনেমা গুলোর জন্য ভালো নির্মিত ছবি গুলো জন্য খারাপ লাগে । তার পরেও আমরা চাই দর্শকরা হল মুখী হোক ।
অরুণা বিশ্বাসের বাবা যাত্রা সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাস এবং মা জ্যোৎস্না বিশ্বাস দুইজনই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুস্কার ভূষিত । দুইজনই পেয়েছেন একুশে পদক। দীর্ঘ দিন চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও কোন জাতীয় পুরুস্কার অরুণা বিশ্বাসের ঝুড়িতে আসেনি। একারণে আফসোস থাকলেও দুঃখ নেই তার অরুণা বলেন , দর্শকদের ভালোবাসা আমার জীবনের চরম পাওয়া । একজন ভক্ত যখন আমার ছবি স্কেস করে আমার ফেসবুকের মাসেঞ্জারের ইনবক্সে পাঠায় আর থেকে বড় পুরুস্কার আর কি হতে পারে ? টেলিভিশনে আমার ছবি প্রচার হলে সেই ছবি তুলে আমাকে ইনবক্স করে । এগুলো মন থকে আসে ।