স্টাফ রিপোর্টার:
আগামী ৭ই ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জেলা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। সম্মেলনে জেলার কে কোন পদে আসছে তা নিয়ে জেলা জুড়েই রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা। প্রকাশ্যে চলছে মিছিল সমাবেশ।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দিন আর সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম।
তবে এবার সাধারণ সম্পাদক পদে সাধারণ জনতার পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান আপেলের নাম। মানিকগঞ্জ পৌরবাসীসহ জেলার সাধারণ জনতা মনে করে কোন জনপ্রতিনিধি না হয়েও সুলতানুল আজম খান যেভাবে বছর জুড়ে সাধারণ মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে জেলার সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়া তাঁর অধিকার।
এক সময়ের বিএনপি জামাত ও স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের শক্তিশালী দূর্গ হিসেবে পরিচিত মানিকগঞ্জ জেলা কে আওয়ামী লীগের ঘাটিতে রুপান্তর করার কারিগর হিসেবে যে কয়জন আওয়ামী লীগ নেতা ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে আলহাজ্ব সুলতানুল আজম খান আপেল অন্যতম একজন।
১৯৭৮-৮০ সাল পর্যন্ত মানিকগঞ্জ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮০-৮৬ সাল পর্যন্ত জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৮৭-৯১ সাল পর্যন্ত জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা আপেল ছাত্র জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পা রাখেন। শীতে শীত বস্ত্র, যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জেলায় সবচেয়ে আগে যে মানুষটিকে সাধারণের পাশে দেখা যায় তিনি আপেল।
১৯৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনে সর্ব সম্মতিক্রমে মানিকগঞ্জ জেলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতির দায়িত্বভার গ্রহন করে মানিকগঞ্জে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের গণজোয়ার তৈরি করেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি বহুবার কারাবরণ করেন।কিন্তু কারাগারের চার দেয়ালে তাকে বন্দি করে দমিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি। কারামুক্ত হয়েই আবারো ছাত্র জনতাকে একত্রিত করে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন চলমান রাখেন।
১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত জেলা যুবলীগের সম্মেলনে তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান শেখ সেলিম এর উপস্থিতিতে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং ২০০৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। যুবলীগের দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই তিনি মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময় কালে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
দীর্ঘ ২৫ বছর পরে ১৯৯৬ সনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করলেও মানিকগঞ্জের সংসদীয় আসন গুলোতে পরাজিতই থেকে যায়। ব্যর্থতার এই গ্লানি কে সফলতায় রুপ দিতে সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মানিকগঞ্জে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রকে প্রতিহত করার লড়াইয়ে নিজের সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন সুলতানুল আজম খান আপেল।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামাত জোট আবারো সরকার গঠন করলে আওয়ামী নেতাদের ওপর নির্যাতনের হুলিয়া নেমে আসে। দিনের পর দিন বিএনপি জামাত জোটের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনীর রক্তচক্ষু ও নির্যাতন উপেক্ষা করে এক বোঝা ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে প্রতিটি উপজেলার গ্রামে-গঞ্জে আনাচে-কানাচে আওয়ামী রাজনীতি সুসংগঠিত ও তরুন প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বীজ বপণ করার মাধ্যমে দলকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনার জন্য অহর্নিশী পরিশ্রম করে গেছেন।
আর এই অদম্য তরুন নেতার দুঃসাহসিক কর্মকান্ডে ভীত সন্তস্ত্রহয়ে ক্ষমতাসীনরা তাকে আবারো কারাগারে বন্দি করে। আর প্রতিবারই কারামুক্ত হয়েই যুবসমাজের নয়ন মনি খ্যাত আপেল তার অনুগত একঝাক শক্তিশালী কর্মীদের নিয়ে মানিকগঞ্জের বুকে নৌকার পাল উড়ানোর সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়েন।
আলহাজ্ব সুলতানুল আজম খান আপেল মানিকগঞ্জ পৌরসভার জন সাধারণের অনুরোধে ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত মানিকগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়ের পদে প্রতিদন্দিতা করার ইচ্ছা পোষন করলে ব্যপক জনসমর্থনলাভ করে। নির্বাচনের প্রক্কালে মানিকগঞ্জ পৌরসভা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বর্ধিত সভায় তৃণমূলের সকল নেতাকর্মীদের সমর্থন লাভ করে এবং আওয়ামী লীগের মেয়র পদে মনোনয়ন লাভের জন্য কেন্দ্রেসুপারিশ প্রাপ্ত হয়। নির্বাচনে জয় লাভের শতভাগ নিশ্চয়তা এবং ব্যপক জন সমর্থন থাকার পড়েও দলীয় হাই কমান্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ থেকে সড়ে দাড়ায়।
মানিকগঞ্জ জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে পরপর চার বার জেলার শ্রেষ্ঠ করদাতা হিসেবে মনোনিত হয়েছেন। তিনি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট মানিকগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতালের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিগত সময়ে তিনি পরপর তিন বার মানিকগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি মানিকগঞ্জ জেলা ডেভলপার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, মানিকগঞ্জ জেলা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাট্রির ০৩ বার বিপুল ভোটে নির্বাচিত পরিচালক হিসেবে সুষ্ঠভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। মানিকগঞ্জ পৌরসভার মত্ত হাই স্কুল ও সাটুরিয়া উপজেলার জান্না উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত সভাপতি, জেলা নাগরিক ও পেশাজীবি ঐক্য পরিষদের মনোনিত সভাপতি হিসেবে সফল ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের দুর্দিনে যেভাবে আন্দোলন সংগ্রামে তিনি (আজম খান আপেল) এগিয়ে এসেছেন, জেলার নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে যেভাবে পাশে থেকেছেন তার মূল্যায়ন করলে অবশ্যই তিনি সাধারণ সম্পাদক পদ পাবেন।
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবনের সূচনালগ্ন থেকে অদ্যবধি এই দীর্ঘ পথ চলা। আমি কি পাব কি পাব না। তা দল নির্ধারণ করবে এতটুকুই।