সন্তানের বেড়ে ওঠার জন্য পুষ্টি উপাদান অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শিশুর বিকাশ ও মেধা বাড়াতে ভূমিকা রাখে পুষ্টিকর খাবার। শিশুর শরীরে পুষ্টির অভাব হলে বেশ কয়েকটি লক্ষণ প্রকাশ পায়।
ওজন: ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস জানাচ্ছে- শিশুর শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিলে ওজন দ্রুত কমে যায়। যদি শিশুর ওজন ৩-৬ মাসের মধ্যে ৫-১০ শতাংশ কমে যায় তবে সতর্ক হতে হবে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: অনেক শিশু সামান্য অসুস্থতায় ভেঙে পড়ে। অল্পতেই সন্তান অসুস্থ হয়ে পড়া পুষ্টির ঘাটতির লক্ষণ। সুষম খাদ্য না পেলে শিশু দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে।
দাঁতের সমস্যা: শিশুরা ছোটবেলা চকলেটসহ নানা ধরনের খাবার খায়। ফলে দাঁতে সমস্যা হয়। অনেক ক্ষেত্রে পুষ্টির অভাব দেখা দিলেও দাঁতের সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন সি’র অভাব হলে মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে পারে। এ ছাড়াও ভিটামিন ডি‘র অভাবে বেড়ে যায় দাঁতের সমস্যা।
ক্লান্তিভাব: স্কুল থেকে ফিরেই শিশু ক্লান্ত হয়ে যায়! অথবা সব সময় আলসেমি করে। এরকম হলে খাবারে নজর দিন। শিশুর পুষ্টির অভাবে অনেক কিছুতে অনীহা দেখা দিতে পারে।
বিকাশে সমস্যা: পুষ্টির অভাবে শিশুর শারীরিক বিকাশের পাশপাশি মস্তিষ্কের বিকাশেও অসুবিধা হয়। নতুন কিছু পড়তে গেলে কিংবা শিখতে গেলে শিশুর অনেক সময় লাগে। বিভিন্ন খেলাধুলায় শিশু নিজের মেধা কাজে লাগাতে পারে না। নতুন বই পড়তে গেলে সমস্যা হয়। এ ধরনের ক্ষেত্রে শিশুর খাবারের তালিকায় বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিদ ডা. জাহানারা আক্তার সুমি। তিনি বলেন, পুষ্টির অভাব বলতে শুধু ওজন কম বোঝায় না। অনেক সময় বাচ্চার ওজন বেশিও হতে পারে। কম ওজন এবং ওজনাধিক্য দুটোই অপুষ্টির লক্ষণ। সাধারণত অপুষ্টিতে আক্রান্ত বাচ্চার উচ্চতার সাথে ওজন ঠিকমতো বাড়ে না। আবার অনেক সময় বাচ্চা এত বেশি খাওয়া-দাওয়া করে বিশেষ করে বাইরের খাবার, ওগুলো থেকে বাচ্চার অতিরিক্ত ফ্যাট ডিপজিশন হয় কিন্তু প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি থেকেই যায়। দুটি কারণেই বাচ্চা বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অপুষ্টিজনিত কারণে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিনস এবং মিনারেলস-এর ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে শরীরে এনজাইম, হরমোন এবং বর্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর অভাব ঘটে।
এই পুষ্টিবিদ আরও জানান, অতিরিক্ত ওজন বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এতে ডায়াবেটিস কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ বা বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার হতে পারে। প্রতিদিনের খাবারে আমিষের অংশটুকু যাতে মাছ, ডিম থেকে বেশি আসে এবং মাংসের পরিমাণ কম রাখতে হবে। এছাড়া বাদাম বা ডাল জাতীয় বা অন্যান্য বীজ জাতীয় খাবার বাচ্চার মূল খাবারের পাশাপাশি দিতে হবে। ডাল বা বীজ জাতীয় খাবার ব্রেইন ডেভেলপমেন্টের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং তার হার্টকেও সুরক্ষা দেবে। সরাসরি সবজি খেতে না চাইলেই সবজির সঙ্গে মাংস বা ডিম মিশিয়ে স্বাদ বর্ধন করা যেতে পারে। বাচ্চাকে দিনে দুই থেকে তিনবার ফল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ফলে প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং অন্যান্য খনিজ লবণ রয়েছে। প্রতিদিন দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার রাখতে হবে। সরাসরি দুধ খেতে না চাইলে পুডিং পায়েস কাস্টার্ড মিল্কশেক করে বাচ্চাকে দিতে হবে। ভাত রুটি শর্করা জাতীয় খাবার খুব বেশি না দিয়ে আমরা বাঁচার জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী ছোট মাছ ডিম দুধ ফল বাদাম ইত্যাদি খাবারের তালিকায় রাখতে পারি।