স্টাফ রিপোর্টার:
বর্তমান সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও পুলিশ বাহিনী দিয়ে সারা দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে; মামলা দিচ্ছে ও গ্রেপ্তার করছে। তারা আসলে এসব আচরণের মাধ্যমে দেশে একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে চাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
এক মাস কারাভোগের পর বেরিয়ে এসে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল।
মহাসচিব বলেন, অবৈধ সংসদ বাতিল, দুর্নীতিবাজ, ফ্যাসিস্ট, গণতন্ত্রবিরোধী সরকারের পদত্যাগ; নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও রাজবন্দীদের মুক্তিসহ ১০ দফা দাবিতে ১১ জানুয়ারি ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভাগীয় শহরে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়।
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, গণ-অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে ফরিদপুর, ময়মনসিংহে ক্ষমতাসীন দলের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। ফরিদপুর শহরের অম্বিকা ময়দানে গণ-অবস্থান শুরু হলে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা শহীদ সুফি ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে উশৃঙ্খল আচরণ শুরু করে ও উত্তেজনাকর স্লোগান দেয়। এক পর্যায়ে তারা রাজবাড়ি, মাদারীপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত নেতাকর্মীদের মিছিলে হামলা করে। তারা অম্বিকা ময়দানে হামলা ও ককটেল নিক্ষেপ করে তাণ্ডব সৃষ্টি করে।
শুধু অম্বিকা ময়দান এলাকায় নয়, ফরিদপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় তারা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে। এসময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। উল্টো বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে। হামলাকারীদের পুলিশ গ্রেপ্তার না করে বিএনপির ১৫ জন নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করে। এসময় হামলায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন বলেও জানান মির্জা ফখরুল।
ফরিদপুরের মতো ময়মনসিংহেও পূর্বঘোষিত নগরীর হরি কিশোর রায় রোডে গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে মিছিল নিয়ে আসার সময় ময়মনসিংহ মহানগরের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা মিছিলকারী নেতাকর্মীদের ওপরে সশস্ত্র হামলা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীরা গোলপুকুরপাড় এলাকায় গফরগাঁও উপজেলার নেতাকর্মীদের ওপর গুলি বর্ষণ ও রড দিয়ে হামলা করে। তাদের হামলায় গফরগাঁও উপজেলা বিএনপির ৩ কর্মীর মাথা ফেটে যায় এবং ১২ জন আহত হয়। নগরীর জুবলীঘাট এলাকায় কিশোরগঞ্জ থেকে আগত নেতাকর্মীদের বাস এবং জিরো পয়েন্ট এলাকায় হালুয়াঘাট থেকে আগত বাসে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করে। এসময় ২ নেতাকর্মীর মাথায় সন্ত্রাসীরা রড ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করলে তাদের মাথাও ফেটে যায় এবং তারা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।
ঢাকায় গণ-অবস্থানকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে এবং ধামরাই, সাভার, কেরানীগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। ধামরাই থেকে গণ-অবস্থানে আগত নেতাকর্মীদের বহনকারী যানবাহন পুলিশ পথে আটকে ২৬ জন নেতাকর্মীকে আটক করে। সাভার থেকে ১০ জন এবং দোহারে ২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। কেরানীগঞ্জের শুভাড্ডা ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা গণ-অবস্থানে যোগ দিতে আসার সময় আওয়ামী লীগের সশস্ত্র নেতাকর্মীরা ব্যাপক হামলা করলে ১০ নেতাকর্মী আহত হয়। সন্ত্রাসীরা মহিলা নেত্রীসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপরেও হামলা করে। ১০ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক সহ-সভাপতি মোক্তার হোসেনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে বলেও জানান তিনি।
লিখিত বক্তব্যে সর্বশেষ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকার গণ-অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার সময় মোহাম্মদপুর থানা বিএনপির ৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব হামলা-মামলা-গ্রেপ্তার চালিয়ে অতীতে কোনও সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে না বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।