স্কুলে তো কত কিছুই শেখানো হয়, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস, সাহিত্য। সঙ্গে নানারকম খেলাধুলা, ডিবেট ইত্যাদি। কিন্তু তাতে সবকিছু কী শেখা হয়ে যায়? বিশেষজ্ঞদের মতে, সন্তানকে শেখাতে হবে জীবনযাপনের কিছু নিয়ম। অন্যথায় পড়াশোনা বা খেলাধুলায় যতই ভালো হোক না কেন, যত সাফল্যই আসুক না কেন জীবনে পথ চলা কঠিন হয়ে পড়বে।
কথা বলা শেখান: প্রথমে শেখান কীভাবে কথা বলতে হয়। ঘরে এবং স্কুলে, দু-জায়গাতেই। বেশি কথা না বলা, যতটুক যা বলার ভদ্রভাবে বলা, অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা, অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া। কীভাবে বড়দের সঙ্গে কথা বলতে হয়, কীভাবে বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে হয়, ছোটদের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়, পরিচিত কিংবা অপরিচিত কারো সঙ্গে কথা বলার সময় কিভাবে সম্বোধন করতে হয়, সব শেখান। কথার সঙ্গে বাচনভঙ্গীর দিকেও গুরুত্ব দিন। জীবনে এগিয়ে যেতে গেলে এসব গুণের দরকার হয়। এছাড়া কোন বিষয়গুলো বুলিং-এর পর্যায়ে পড়ে তা সন্তানকে শেখান। কারো নাম ব্যঙ্গ করা, শারীরিক গড়নের জন্য কাউকে নিয়ে মজা করা, স্কুলে পড়ালেখায় দুর্বল ছাত্রটিকে নিয়ে মজা করা; এমন আরো যেসব বুলিং রয়েছে সেসব নিয়ে সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। এতে বুলিং-এর শিকার মানুষটি কতটা কষ্ট পায় তা সন্তানকে বুঝিয়ে বলুন।
শেয়ার করা: নিজের যা আছে তা অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া হলো মানুষের অন্যতম গুণ। শেয়ার করার অসাধারণ গুণটি অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক যেমন সুন্দর করে তেমনি মানসিক প্রশান্তিও বাড়ায়। সন্তানকে ছোট থেকেই শেয়ারিং শেখাতে পারেন। সন্তানের মধ্যে এই গুণ থাকলে সে জীবনে অনেক দূর যেতে পারবে। নিজের ভাই-বোন বা কাজিনদের সঙ্গে নিজের খেলনা শেয়ার করা, মাঝে মাঝে একজন দুস্থ মানুষকে সাহায্য করা কিংবা বাসায় এনে তার সঙ্গে খাবার শেয়ার করার মাধ্যমে ছোট থেকেই সন্তানের মাঝে এই অসাধারণ গুণটি গড়ে তুলুন। স্কুলে ও আশেপাশে বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন কালচার ও বিভিন্ন মতবাদের মানুষ দেখা যায়। আপনার সন্তান যাতে কারো মধ্যে কোনো ভেদাভেদ না করে সেদিকে খেয়াল রাখুন। জীবনে বড় হতে গেলে এই গুণটি থাকা দরকার।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সে সম্পর্কে বলুন। খেলাধুলা এবং খাবার পর কিভাবে নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হয় তা তাকে শেখান। সন্তানকে নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের প্রতি যত্নশীল হতেও শেখান। তার দ্বারা যেন পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হয় তা শেখান। চারপাশ অপরিষ্কার না করতে শেখান এবং পরিবেশের জন্য এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বলুন। শুরু করতে পারেন যেখান সেখানে ময়লা বা থুথু না ফেলার অভ্যাস তৈরি করার মাধ্যমে।
আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা: চোখের দিকে তাকিয়ে মাথা উঁচু করে যেন সে কথা বলে, তা শেখান। কারণ আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা বোধ থাকলে এই ভাবেই কথা বলেন মানুষ।
পরিস্থিতি অনুসারে কাজ করা: পরিস্থিতি বোঝা ও সেই অনুযায়ী কাজ করা ও কথা বলা খুব জরুরি। ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে এ ব্যাপারে দক্ষ করে তুলুন।
কীভাবে আপনার সন্তানকে ভালো অভ্যাসে রপ্ত করবেন
প্রথম পদক্ষেপটি হলো ভালো অভ্যাসগুলোকে আপনার নিজের মধ্যে আয়ত্ত করা। বাচ্চারা তাদের মা–বাবাকে তাদের রোল মডেল হিসেবে দেখে। আপনি যদি চান যে আপনার সন্তানের মধ্যে ভালো অভ্যাসগুলো গড়ে উঠুক, তাহলে আপনি তাকে যা শেখাতে চান তা তাদের সামনে নিজেও অনুশীলন করুন। এমনকি হতাশার মুহূর্তগুলোতেও বাচ্চাদের সামনে নিজের আদর্শ বজায় রাখা থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে পড়বেন না।
আপনার সন্তান যখন সু–অভ্যাসগুলো কাজে লাগিয়ে দেখায়, তখন তার প্রশংসা করার বিষয়টি নিশ্চিত করুন এবং প্রতিবার ভালো কিছু করার সঙ্গে তাকে উৎসাহ প্রদান করলে তা তাকে আরও ভালো হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। সন্তানের সু–অভ্যাস এবং ভালো আচার-আচরণগুলোকে উপেক্ষা করার বিপরীত প্রভাব হতে পারে, কারণ তারা আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য হয়তো খারাপ আচরণ করতে পারে।
বাচ্চাদের কম মনোযোগ এবং দুরন্তপনা আপনাকে হয়তো একাধিকবার বিরক্ত ও হতাশ করে তুলবে, কিন্তু ধৈর্যশীল হন। ধৈর্যচ্যুত না হওয়া এবং সন্তানের ওপর রেগে না যাওয়া উচিত। আপনি যদি শান্ত ও অনড় থাকেন, তবে আপনার সন্তানও সেই একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে।