মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুরে সংবাদ প্রচারে ক্ষিপ্ত হয়ে এক ইউপি চেয়ারম্যান আদালতে চাঁদাবাজি ও মানহানির অভিযোগে এনে আদালতে মামলা করলেন কলকাতা এক্সপ্রেস মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধিসহ জেলার তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে। আদালতের বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
বুধবার (১৫ মার্চ) বিকেলে জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি করেন ঘটমাঝি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আকতার হাওলাদার। গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হলেও (১৬ মার্চ) বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মামলার নথী নিতে পারেনি আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। এমামলায় আসামিরা হলেন— ডেইলি এশিয়ান এইজ, কলকাতা এক্সপ্রেস এর মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি, সাব্বির হোসাইন আজিজ, দৈনিক সমকাল ও বাংলাভিশন টেলিভিশন টিভির মাদারীপুর প্রতিনিধি ফরিদ উদ্দিন মুপ্তি, এশিয়ান টিভির মাসুদ হোসেন খান। তবে ওই তিন সাংবাদিকের দাবি, উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রথমে গত ৮ মার্চ কলকাতা এক্সপ্রেস সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে সমকাল, স্থানীয় দৈনিক মাদারীপুর সংবাদসহ একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাটি প্রকাশ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে বাবুল আকতার তাদের মিথ্যে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। অন্যদিকে, তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় আইনজীবী সমিতির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাদারীপুর প্রেসক্লাবসহ জেলার তিনটি সাংবাদিক সংগঠন।
মামলা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রথমে কলকাতা এক্সপ্রেস এ গত ৮ মার্চ রাতে “মাদারীপুরে ধর্ষনের ঘটনায় ৪ লাখে রফাদফা করলেন চেয়ারম্যান” সংবাদটি প্রচারিত হয়। পরে ৯ মার্চ একাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টালে এবং দৈনিক সমকাল ও স্থানীয় দৈনিক মাদারীপুর সংবাদে গত ১৩ মার্চ ‘ধর্ষণের অভিযোগ ৪ লাখ টাকায় রফা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে সদর উপজেলার ঘটমাঝি ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল আকতার হাওলাদার এই সালিশ মিমাংসা করে দিয়েছে বলে সংবাদের উল্লেখ করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাতে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন ইউপি ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল আকতার। তবে উপস্থিত সাংবাদিকের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি কেন ৪লাখ টাকায় এরকম ঘটনা মিমাংসা করলেন ইউপি চেয়ারম্যান। তবে সংবাদ সম্মেলন এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার ৪লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন সঠিক কারণ বা তথ্য না দেওয়ায় জেলার সাংবাদিকগন তার সংবাদটি প্রচার করেনি। তাই ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে জেলার কর্মরত সনামধন্য তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার সুত্র জানায়, ঘটমাঝি ইউনিয়নের দক্ষিণ চিড়াইপাড়া গ্রামের একটি প্রেম ঘটিত বিষয় নিয়ে সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ৯ মার্চ সকাল ৯টার সময় ওই তিন সাংবাদিক বাড়ীর বসতবাড়িতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চায়, এবং চাঁদা না পেয়ে মনগড়া মানহানি সংবাদ প্রকাশ করে। এতে তার মানহানি হয়েছে বলেও মামলার দাবি করেন। তবে জানাযায়, ৮এই মার্চ রাতে ইউপি চেয়ারম্যান পারসোনাল মুঠোফোনে (০১৭১২৯০৬০১৫) কল করে ধর্ষনের ঘটনার ৪ লাখ টাকায় মিমাংসা করে দিয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন এবং সাংবাদিকদের বলেন আপনারা যা শুনছেন তার প্রচার করে দেন।
মামলার বাদীর আইনজীবী সুজন ভৌমিক বলেন, মাদারীপুর বার সমিতিকে জড়িয়ে ও বারের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। বারের সম্মানহানীর প্রেক্ষিতে বিচার চেয়ে মামলা করা হয়। আশা করছি, আমরা ন্যায় বিচার পাব।
এব্যাপারে মামলার ১ নম্বর আসামি ডেইলি এশিয়ান এইজ, কলকাতা এক্সপ্রেস, ঢাকা ক্যানভাস ও সময় নিউজ ২৪ ডটকম এর সম্পাদক সাব্বির হোসাইন আজিজ জানান, ছেলের পরিবারের বক্তব্য ও মেয়ের পরিবারের বক্তব্য এবং স্থানীয় সালিশদের বক্তব্য নিয়ে গত ৮ মার্চ রাতে ঘাটমাঝি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল আকতার হাওলাদারের মুঠোফোন কল করে তার বক্তব্য এবং জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্য নিয়ে সংবাদটি আট তারিখ রাতেই প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু মামলার বাদী বাবুল আকতার নিজেকে বাঁচানোর জন্য মিথ্যা, ভিত্তিহীনভাবে মনগড়া, কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে মামলা করেছে। যা কখনোই সত্য নয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মাদারীপুর প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াকুব খান বলেন, এই মামলার কোনো ভিত্তি নেই। মামলাটি হয়রানিমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সাংবাদিকরা তাদের সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেই সংবাদ প্রকাশ করেছে। এখানে ওই আইনজীবীর ( চেয়ারম্যান বাবুল আকতার) স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা তাদের অপরাধ ঢাকতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ এনে মামলা করেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই