1. hasanchy52@gmail.com : admin :
  2. amarnews16@gmail.com : Akram Hossain : Akram Hossain
শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩১ পূর্বাহ্ন

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই

  • প্রকাশের সময় : বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০২৩
  • ২১৬ বার দেখা হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার:

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আর নেই। রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাত ১০টা ৫৫ মিনিটের দিকে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তার মৃত্যুর খবর প্রতিদিনের বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন ডা. জাফরুল্লাহর মেডিকেল বোর্ডের প্রধান সমন্বয়কারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মামুন মোস্তাফী।

আজীবন গণমানুষের কল্যাণ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। তার মৃত্যুতে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এরই মধ্যে তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি।

৩ এপ্রিল থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। গত রবিবার তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। গত সোমবার তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিডনি ডায়ালাইসিস শুরু হয়েছে বলে জানান তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. মামুন মোস্তাফী।

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মৃত্যুর খবরে হাসপাতালে ভিড় করেন তার নিকট আত্মীয়স্বজনরা।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৪১ সালের ২৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের রাউজানে জন্মগ্রহণ করেন। তবে বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। বাবা-মায়ের দশ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনা করেছেন বকশীবাজার নবকুমার স্কুল ও ঢাকা কলেজে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ছাত্র অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়নের মেডিকেল শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব সার্জনস থেকে জেনারেল ও ভাস্কুলার সার্জারিতে পড়া অবস্থায় দেশে যুদ্ধ শুরু হয়। পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্ব শেষ না করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসেন। ভারতের আগরতলার মেলাঘরে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে গেরিলা প্রশিক্ষণ নেন এবং এরপরে ডা. এমএ মবিনের সঙ্গে মিলে সেখানেই ৪৮০ শয্যাবিশিষ্ট ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।

মানুষের কাছে চিকিৎসাসেবা পৌঁছে দিতে জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১৯৮১ সালে গড়ে তোলেন অত্যাধুনিক ‘গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যাল’। সাধারণ মানুষের কাছে অপেক্ষাকৃত অর্ধেক মূল্যে তিনি ওষুধ সরবরাহ করেন। নব্বই দশকের পর থেকে চিকিৎসাসেবা খাতে বাণিজ্যিক প্রভাব ঠেকাতে তিনি ঔষধ নীতি প্রণয়নে সোচ্চার হন। তার প্রচেষ্টায় ১৯৮২ সালে প্রণয়ন হয় সরকারে ঔষধ নীতিমালা।

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশে তিনি একটি সর্বজনীন চিকিৎসাসেবা চালু করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। তিনি চেয়েছিলেন অন্তত কোনো মানুষ যেন অর্থের অভাবে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু্বরণ না করেন। সেই চেষ্টা থেকেই তার প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র গত পাঁচ দশক ধরে নাম মাত্র মূল্যে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

স্বাধীনতার পরে জাফরুল্লাহর ‘বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল’ ঢাকার ইস্কাটন সড়কে পুনঃস্থাপিত হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালেই গ্রামের মানুষের স্বাস্থ্যসেবার কথা ভেবে ‘চল গ্রামে যাই’ স্লোগান ও উদ্দেশ্য নিয়ে হাসপাতালটি ঢাকার অদূরে সাভারে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

১৯৭৭ সালে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সমন্বিত সমাজস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়া ১৯৮৫ সালে ম্যাগসেসে পুরস্কার, ১৯৯২ সালে সুইডেন থেকে রাইট লাইভহুড পুরস্কার এবং ২০০২ সালে বার্কলি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টারন্যাশনাল হেলথ হিরো পুরস্কার লাভ করে।

জাতির যেসব সূর্যসন্তান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গড়ার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের অন্যতম ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আর্থিকভাবে নিজেকে লাভবান করার সুযোগ থাকলেও তা দুপায়ে ঠেলে মৃত্যূর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।

স্বাধীনতার পর থেকেই দেশীয় ওষুধ শিল্প গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ। কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। সমাজতান্ত্রিক দেশ থেকে কমদামে ওষুধ আমদানির প্রস্তাব বিবেচনায়ও নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তার স্বপ্ন আর বেশিদুর এগোয়নি। পরবর্তী সময়ে এরশাদকে বুঝিয়ে ওষুধ নীতি করাতে সক্ষম হন ১৯৮২ সালে। সাড়ে ৪ হাজার ওষুধ থেকে ২ হাজার ৮০০ ওষুধ নিষিদ্ধ করা হয়।

জিয়াউর রহমান চেয়েছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ তার মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে ওষুধ নীতি নিয়ে কাজ করুক। কিন্তু জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাবিরোধী শফিউল আযমদের সঙ্গে নেওয়ায় চার পৃষ্ঠার চিঠি লিখে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান ডা. জাফরুল্লাহ। বলা হয়ে থাকে, প্রেসিডেন্ট জিয়ার ব্ল্যাংক চেকের প্রস্তাব ফেরাতে সময় নেননি তিনি। জাফরুল্লাহর পিতা সরাসরি বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের ছাত্র ছিলেন বলেই হয়তো জীবনে কখনও আপসকামী ছিলেন না তিনি।

শেয়ার করুন

এ বিভাগের আরও খবর
© All rights reserved © 2014 Amar News
Site Customized By Hasan Chowdhury