নিউজ ডেস্ক:
আবারও বাড়ছে বিদ্যুতের দাম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণপ্রাপ্তির শর্তানুযায়ী আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে বিদ্যুতের দাম বাড়নোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আইএমএফের ঋণের বিপরীতে সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে ৫ শতাংশ। চলতি মাসে কিংবা আগামী মাসের যেকোনো সময় দাম বাড়ানোর ঘোষণা হতে পারে। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, লোকসান কমাতে বিতরণ সংস্থাগুলোও ভোক্তা পর্যায়ে ২০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির জন্য পিডিবির কাছে আবেদন করে। সে ভিত্তিতেই ১৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আগে বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকি ছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। বিশ্ববাজারে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে সে ভর্তুকির পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। সরকার বিদ্যুতের দাম কিছুটা সমন্বয় করতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, চলতি মাস কিংবা আগামী জুনে আরেক দফা বাড়ানো হবে বিদ্যুতের দাম। এর আগে গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত গ্রাহকপর্যায়ে তিন ধাপে পাঁচ শতাংশ হারে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। পাইকারি বিদ্যুতের দাম নতুন করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে। আর খুচরায় বাড়তে পারে ৫ শতাংশের মতো। দাম বাড়ানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হবে উচ্চপর্যায় থেকে।
পিডিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয় ভর্তুকি ছাড় করেছে ১৩ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। এটি ২০২১-২২ অর্থবছরের ভর্তুকি হিসেবে পেয়েছে তারা। একই অর্থবছরের জন্য আগে পেয়েছে আরও ১০ হাজার কোটি টাকা। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভর্তুকির কোনো টাকা এখনো পাওয়া যায়নি। পিডিবি ভর্তুকি চাহিদা জানিয়ে চিঠি দিলেও টাকা ছাড় করতে দেরি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, আইএমএফের দেওয়া শর্তগুলোর মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রে আইএমএফের শর্তপূরণে কি ধরনের সমস্যা তা জানাতে হবে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, জ্বালানি তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরকার সরে আসতে চায়। শিল্প খাতেও বাড়তি গ্যাস দরকার। এ কারণে আমদানি বাড়াতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এখন বিদ্যুতের দাম কিছুটা সমন্বয় করা প্রয়োজন।
চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি বিশেষ প্রেক্ষাপটে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, তেল ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ এবং সমন্বয়ে সরাসরি সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ রেখে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন ২০২৩ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
এর আগে আইন সংশোধন করে গত ১ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন), অধ্যাদেশ, ২০২২’ গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার। এর মধ্যদিয়ে বিশেষ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সরাসরি বাড়ানো বা কমানোর ক্ষমতা যায় সরকারের হাতে।
গত ২১ নভেম্বর বিদ্যুতের পাইকারি দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বৃদ্ধি করে বিইআরসি। এরপরই গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির আবেদন করে বিতরণ কোম্পানিগুলো। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ জানুয়ারি গণশুনানি করে বিইআরসি। কিন্তু গণশুনানি শেষে নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাহী আদেশে কয়েক দফায় ১৫ শতাংশ বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার। সর্বশেষ ২৮ ফেব্রুয়ারি ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়।
এর আগে গত নভেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয় প্রায় ২০ শতাংশ (কার্যকর হয় ডিসেম্বর থেকে)। এটি সমন্বয়ে ১২ জানুয়ারি ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (কিলোওয়াট ঘণ্টা) বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে গত ১৪ বছরে পাইকারি পর্যায়ে ১০ বার ও খুচরায় ১১ বার বেড়েছে বিদ্যুতের দাম।