দিপক সূত্রধর/ মহসীন মোহাম্মদ মাতৃক:
মানিকগঞ্জে সদর উপজেলার গড়পাড়ার চান্দইর গ্রামে তিন দিনব্যাপী শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী শত শত বছরের পুরনো বুড়ির মেলা।জানা যায় পূর্বে এর নাম ছিল আলুসিদ্ধুর/পোড়াআলুর মেলা। বৈশাখ মাসের শেষ শনিবার অথবা মঙ্গলবার এই মেলা হয়ে থাকে বলে কেউ কেউ এই মেলাকে বলে থাকেন বৈশাখী মেলা।তবে ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই মেলা বর্তমানে বুড়ির মেলা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত।
শনিবার (১৩ই মে)সকাল বেলা দেবী বুড়ি মায়ের পূজার মধ্য দিয়েই এই মেলার সূচনা হয় বলে জানান স্থানীয়রা।তবে কেউ সঠিক ভাবে বলতে পারছেন না যে এই মেলার বয়স কতো?স্থানীয়দের মধ্যে কেউ বলছেন ২৫০ বছর,আবার কেউ বলছেন ৩০০ বছর।
এ বছর মেলা ঘুরে দেখা যায় মেলায় বসেছে হরেক রকমের মিষ্টির দোকান,ঝালমুড়ি,শরবত,আচার,পান,চটপটি-ফুসকা,ফলের দোকান সহ বিভিন্ন রকমের খাবারের দোকান।এছাড়াও মেলায় কাঠের তৈরি,লোহার তৈরি, বেত-বাঁশের তৈরি,মাটির তৈরি আসবাপত্র,হরেক রকমের মসলার দোকান সহ ছোটদের জন্য বিভিন্ন খেলনার দোকান এসেছে।বিনোদনের জন্য নৌকা,কিছু সংখ্যক ঘুড়ি থাকলেও একসময় এই মেলায় বিনোদনের মূল আকর্ষণ ছিল পুতুল নাচ, নাগরদোলা সহ বিভিন্ন প্রদর্শনী মূলক বিচিত্রানুষ্ঠান।বর্তমানে এর কিছুটা অন্যান্য মেলায় থাকলেও এগুলো প্রায় হারিয়ে যাবার পথে।
মেলায় ঘুরতে আসা প্রণয় কুমার সাহা বলেন, ছোটবেলায় গড়পাড়ার যে মেলা আমাদের অনুভূতি ছিল আগের দিন রাত থেকেই এই মেলা উপলক্ষে আমাদের ঘুম আসতো না। কারণ কিভাবে সকালে মেলায় যাব, মেলায় যেয়ে বাদাম,জিলাপি খাবো! এই মেলার আরেকটি ঐতিহ্য ছিল রানা দিয়ার গ্রাম থেকে বাঙ্গি নিয়ে আসতো,তা আমরা কিনতাম। এবং আরেকটি সব চাইতে মজার ছিল এই মেলায় আমরা ঘুড়ি উড়াতাম।নানা ধরনের হাজার হাজার ঘুড়ি পাওয়া যেত।
তিনি আরও বলেন,আমার প্রজন্ম থেকে শুরু করে আমার পরের প্রজন্মেও একটি আকর্ষণ দেখা যাচ্ছে কিন্ত নতুন প্রজন্মের এই মেলার প্রতি আকর্ষণ কমে যাচ্ছে বলে তিনি ধারনা করেন।আর এইখানকার একটি সব চাইতে ভালো দিক আমাকে আলোরিত করে যে এখানে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কোন প্রশ্ন উঠে না, সবাই মেলা কে ঘিরে একটি আনন্দমূখর পরিবেশ তৈরি করে।
এসময় স্থানীয় বাসিন্দা পবন সরকার বলেন,এই বুড়ি ঠাকুরের মন্দিরটি আমাদের শরিক বাড়ির মন্দির। আমারা সেই ছোট্ট বেলা থেকেই দেখে আসতাছি এই মেলা।আমার জানা মতে দুই-চাইর পুরুষ গেছেগা এই পূজা হয়।আগে মুরুব্বিরা যেমনে পূজা করছে ওই ভাবেই চেয়ারম্যানের কাছে থিকা ৩দিনের অনুমতি নিলেও তা আমারা মেলা পরিচালনা করতে পারি না।
মন্দিরের স্থানীয় পূজারী পরেশ বাড়ই বলেন,আমার তাঐ ঠাকুরদার আমলে ঠিকা এই বুড়ির পূজা।ঠাকুরদা কইরা গেছে বুড়ি পূইজা।আমার বাবা করছে,আমার জ্যাঠা করছে এহন আমি করতাছি।প্রায় ৭ পুরুষে এই পূইজা চইলা গেছে।বাংলাদেশের প্রায় সব স্থানের লোকজন দেবি বুড়ি মায়ের কাছে মানত করতে আসেন বলে তিনি জানান।
তবে এই মেলার কোন কমিটি নেই বলে জানান এলাকাবাসী।তারা জানান স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমেই মেলার পরিবেশ বজায় থাকে।
সব মেলাই কোন না কোন সম্প্রদায়ের, কোন না কোন ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করেই হয়ে থাকে। তবে মেলা মানেই হচ্ছে ‘মিলন’। মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন, ভাবের ও সংস্কৃতির মিলন ও আদান-প্রাদান। মেলাতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই স্বাগত।তবে আগে এক মাসব্যাপী মেলা চললেও কয়েক বছর ধরে এক সপ্তাহেই শেষ হচ্ছে মেলার আমেজ।