নিউজ ডেস্ক:
ফাইনালের মতো ফাইনাল হয়তো একেই বলে! তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরুর পরও শেষ দিকে এসে কেমন যেন ছিটকে যাচ্ছিল চেন্নাই সুপার কিংস। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার পরে ১৩ রান।
প্রথম চার বল থেকে মাত্র ৩ রান দেন গুজরাট টাইটান্সের বোলার মোহিত শর্মার। দুই বলে ১০ রান- সমীকরণটা কঠিনই লাগছিল, তার ওপর ফাইনাল ম্যাচ। কিন্ত সহজেই তা মিলিয়ে দেন রবীন্দ্র জাদেজা। পঞ্চম বলে লং অন দিয়ে ছক্কা মারার পর শেষ বলে ফাইন লেগ দিয়ে চার মারেন এই অলরাউন্ডার। ৬ বলে ১৫ রানের সেই ছোট্ট ক্যামিও ইনিংসই চেন্নাইকে চ্যাম্পিয়ন করানোর পথে রাখল সবচেয়ে বড় অবদান। সেই ছোট্ট ইনিংসই ডিএলএস মেথডে গুজরাটকে হারিয়ে দিল ৫ উইকেটে, সেই ছোট্ট ইনিংসই তাদের দেয়নি টানা দ্বিতীয় শিরোপার স্বাদ।
আইপিএলে মহেন্দ্র সিং ধোনিদের পঞ্চম শিরোপা এটি। ছুঁয়ে ফেলেছে সবচেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়ন হওয়া মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে। ফাইনালে চেন্নাইয়ের জন্য লক্ষ্যটা ছিল ১৫ ওভারে ১৭১ রান। তবে তার আগে ৪ উইকেটে ২১৪ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় গুজরাট। আইপিএলের ফাইনাল ইতিহাসে যা সর্বোচ্চ সংগ্রহ। তাই জিততে ইতিহাসই গড়তে হতো চেন্নাইকে। কিন্তু তাড়া করতে নামার সময়ই হানা দেয় বৃষ্টি। যা খেলা বন্ধ রাখে দুই ঘণ্টারও বেশি সময়। তাই ২৮ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আইপিএল ফাইনাল মাঠে গড়ায় রিজার্ভ ডে ছাড়িয়ে ৩০ মে’র প্রথম প্রহর পর্যন্ত।
বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে গুজরাটকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় চেন্নাই। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ফর্মে থাকা শুভমান গিলকে নতুন জীবন দেয় তারা। অবশ্য খুব বেশিদূর এগোতে পারেননি গিল। কাটা পড়েন ০.১ সেকেন্ড সময় নিয়ে করা ধোনির বিদ্যুৎগতির স্টাম্পিংয়ে। রবীন্দ্র জাদেজাকে এগিয়ে এসে ড্রাইভ করতে গিয়ে সাজঘরে ফিরতে হয়ে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। যাওয়ার আগে ২০ বলে ৭ চারে ৩৯ রান করেন তিনি।
একে তো টসে হার, তার ওপর বৃষ্টির চ্যালেঞ্জ। জেতার জন্য বড় সংগ্রহই কেবল স্বস্তি দিতে পারত গুজরাটকে। ঋদ্ধিমান সাহা, সাই সুদর্শনের ব্যাটে চড়ে রানের গতি ক্রমাগত বাড়িয়েছে তারা।
৬৭ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন সাহা-সুদর্শন। দ্বিতীয় উইকেটে ৬৪ রান যোগ করেন তারা। ১টি ছয় এবং ৫টি চারের সাহায্যে ৩৯ বলে ৫৪ করে আউট হন সাহা। তবে সুদর্শন দমে যাননি। শুরুটা ধীরগতির হলেও গিয়ার বদলাতে খুব বেশি সময় খরচ করেননি বাঁহাতি এই ব্যাটার। চেন্নাইয়ের ছেলে হয়েও জ্বলে ওঠেন চেন্নাইয়ের বিপক্ষে।
তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়ার সঙ্গে গড়েন ৮১ রানের জুটি। যার মধ্যে ৬০ রান ছিল তারই। ৩৩ বলে ফিফটি স্পর্শ করে সেঞ্চুরির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন সুদর্শন। কিন্তু ফিরতে হয় ৪ রানের আক্ষেপ নিয়ে। ৪৭ বলে ৮ চার ও ৬ ছক্কায় ৯৬ রান করে আউট হন তিনি। অন্য প্রান্তে ১২ বলে অপরাজিত ২১ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন পান্ডিয়া। চেন্নাইয়ের হয়ে মাথিশা পাথিরানা ২ উইকেট নেন। এছাড়া দীপক চাহার ও রবীন্দ্র জাদেজার শিকার একটি করে।
তাড়া করতে নেমে শুরুটা দুর্দান্ত করে চেন্নাই। রুতুরাজ গায়কোয়াড় ও ডেভন কনওয়ের উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৭৪ রান। সপ্তম ওভারে দুই ওপেনারকে শিকার করে গুজরাটকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন নুর আহমেদ। রুতুরাজ ১৬ বলে ২৬ ও কনওয়ে আউট হন ২৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৪৭ রানে। দুজনের বেঁধে দেওয়া সুরটা ধরে রাখেন বাকি ব্যাটাররাও। অজিঙ্কা রাহানে ১৩ বলে ২৭ রান করার পর আম্বাতি রায়ডু খেলেন ৮ বলে ১৯ রানের ক্যামিও ইনিংস। সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন যিনি, সেই ধোনি অবশ্য উপহার দেন গোল্ডেন ডাক। অনেকেরই ধারণা আইপিএলে এটাই তার শেষ আসর। কিন্তু ব্যাট হাতে সেভাবে তা স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি চেন্নাই অধিনায়ক। প্রথম বলেই সোজা ক্যাচ তুলে দেন ডেভিড মিলারের হাতে।
ধোনিসহ রাহানে ও রায়ডুর উইকেট নিয়ে গুজরাটের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে মোহিত শর্মা। গত দুই আসরে অবিক্রিত থাকলেও এবার ক্যারিয়ারে পুনর্জন্ম ঘটেছে এই বোলারের। ২৭ উইকেট নিয়ে এবারে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী তিনি। তাই শেষ ওভারে তার ওপর আস্থা রাখেন গুজরাট অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। প্রথম চার বল পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিলেন মোহিত। কিন্তু শেষ দুই বলে ১০ রান নিয়ে হয়তো তার পুরো আসরকেই মাটি করে দিলেন জাদেজা। একপ্রান্ত আগলে রেখে ৩২ রানে অপরাজিত ছিলেন শিভাম দুবে।
এদিকে আইপিএলের ফাইনালে তাড়া করতে নেমে শেষ বলে জেতার রেকর্ড ছিল কেবল রাজস্থান রয়্যালসের। প্রথম আসরে রুদ্ধ্বশ্বাস এক ফাইনালের জন্ম দেয় তারা। সেবার পরাজিত দলের নামটা ছিল চেন্নাই সুপার কিংস। এবার মুদ্রার উল্টোপিঠও দেখল মহেন্দ্র সিং ধোনির দল।