জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
‘আমরা চাই নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সেই সরকার নির্বাচিত হতে হবে। যে সরকার নিজেই নিজের ফল ঘোষণা করতে পারে তাকে নির্বাচিত সরকার বলা যায় না।’
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি শুক্রবার (১৪ জুলাই) বিকেলে রাজধানীতে জাতীয় পার্টির উদ্যোগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্মরণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন করতে হবে নির্বাচিত সরকারের অধীনে, আমরাও চাই। নির্বাচিত সরকার যদি নির্বাচন কমিশনসহ সবকিছু প্রভাবিত করতে পারে তাকে সমর্থন করা যায় না। সংবিধানে বলা হয়েছে গণতন্ত্রের কথা। জনগণ যদি মনে করে আমার ভোটে সরকার গঠন হয়েছে, তাকেই বলা যায় নির্বাচিত সরকার। নির্বাচন কমিশন যেন সরকারের প্রভাবের বাইরে থাকে। যদি আমার কথায় নির্বাচন কমিশন চলে, তাহলে আমি কী হেরে যাব এমন সিদ্ধান্ত নেব? সরকার নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করতে পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
আওয়ামী লীগ নামে ও বেনামে সরকার হয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে জিএম কাদের বলেন, তারা তাদের সরকারের জন্য কাজ করছে। তারা কাজ করছে তাদের সরকারের জন্য। কিছু মানুষ প্রশাসনে আছে, পুলিশে আছে। সরকারি বিভিন্ন বিভাগে আছে। তারা আগ বাড়িয়ে বলেন আমরা আওয়ামী পরিবার। আমরা ছাত্রলীগ-যুবলীগ করেছি। তারা আওয়ামী লীগের সভায় যান, শ্লোগান দেন এবং আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলেন। এরা হচ্ছে বেনামে আওয়ামী লীগ। এখন ডেমক্রেসির পরিবর্তে আওয়ামীক্রেসি চলছে।
‘গভর্নমেন্ট অব দ্য আওয়ামী লীগ, গভর্নমেন্ট বাই দ্য আওয়ামী লীগ এবং গভর্নমেন্ট ফর দ্য আওয়ামী লীগ। এটা কখনোই ডেমক্রেসি হতে পারে না’, বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সরকারি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে বেছে বেছে আওয়ামী লীগের লোক বসানো হচ্ছে অভিযোগ করে জিএম কাদের বলেন, সাধারণ মানুষ মনে করছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের কাজ হচ্ছে সরকারি দলের দুর্নীতিবাজদের সার্টিফিকেট দেওয়া। তারা কোন দুর্নীতি করেনি। সকল জায়গায় বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে, এটাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। ফলে গরীব আরও গরীব হচ্ছে, ধনীরা আরও ধনী হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের নামে লুটপাট চলছে। দেশের মানুষের খোঁজ রাখা হচ্ছে না। বর্তমান সরকার স্বাধীনতার পক্ষে হতে পারে কিন্তু তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শক্তি নয়।
তিনি বলেন, এরশাদ সাহেবের দেশ পরিচালনার সময়কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১০ নভেম্বর ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত সামরিক আইন জারির মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হয়েছে। ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে আইনসম্মত ভাবে দেশ পরিচালনা করেছেন। প্রথম ভাগকে আদালত অবৈধ বলেছে, কারণ সংবিধান সম্মতভাবে হয়নি। যদি জনগণের কল্যাণে কাজ হয়ে থাকে তাকে অবশ্যই বৈধ বরা যায়।
‘১৮৮৮ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে অওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলো। ১৯৯৬ সালে আবার বিএনপির বিরুদ্ধে তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিলো আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামী। আরেকটি তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আরেকটি আন্দোলন এখন চলছে,’ জানান জিএম কাদের।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে একটি নির্বাচন হবার কথা ছিলো, তখন তত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি আন্দোলন হয়েছিলো। সেই সময়ে ওয়ান ইলেভেন এসেছিলো। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালে বলেছিলেন, আমরা চিরস্থায়ী ভাবে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চাই। এখন তারা সংবিধানের দোহাই দিয়ে নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। ১৯৯১ সালে তত্বাবধায়ক সরকার গঠন সংবিধান মতো ছিলো না। পরবর্তীতে সংসদে এর বৈধতা দেওয়া হয়েছে। ২০০৮ সালে ওয়ান ইলেভের এর সময় অনির্দিষ্টকালের জন্য নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিলো তাও সংবিধান মতো ছিলো না। আবারো নবম সংশোধনীর মাধ্যমে বৈধতা দেওয়া হয়েছিলো। সংবিধান সবাই মেনে চলেছি তা তো নয়।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি বলেন, এই মুহূর্তে জাতির জন্য পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন। দুঃখের বিষয়, তিনি আমাদের মাঝে নেই। জাতীয় পার্টি নয় বছর দেশ পরিচালনায় মাত্র ৮০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে উন্নয়ন করেছে। যা বর্তমান বাজেটের এক বছরের খরচের মাত্র ১০ ভাগ। জাতীয় পার্টির শাসনামলে কোনো দুর্নীতি হয়নি।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপির প্রতি দেশের মানুষের আস্থা আছে। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপক্ষে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। দুর্নীতি ও দুঃশাসনের কারণে ঐ দুটি দলের ওপর সাধারণ মানুষ বিরক্ত।
কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় পার্টির পথচলা কখনোই সহজ ছিলো না। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে জাতীয় পার্টি অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছবে। পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের ওপর পার্টির সবার আস্থা আছে।
কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করবে না আর আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার অধীন ছাড়া নির্বাচনে যাবে না। দেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে এদের হাত থেকে মুক্তি চায়।