জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপশক্তির যেকোনও অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকতে হবে। একইসঙ্গে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় শোক দিবস’ উপলক্ষে সোমবার (১৪ আগস্ট) দেয়া এক বাণীতে এ আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং গণতন্ত্র-উন্নয়ন বিরোধী চক্র এখনও দেশে-বিদেশে নানাভাবে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এই অপশক্তির যেকোনও অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় শোক দিবসে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন ১৫ আগস্টের সকল শহিদকে। তিনি তাদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার দীর্ঘ ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম এবং দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যখন সমগ্র জাতিকে নিয়ে সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র তাকে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যসহ হত্যা করে। এই হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাঙালি জাতির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। ঘাতকদের উদ্দেশ্যই ছিল অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে ভূলুণ্ঠিত করা। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে। তারা ইনডেনমিটি অর্ডিনেন্স জারি করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের পথকে বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে গণতন্ত্রকে হত্যা করে। সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে বিদেশে দূতাবাসে চাকরি দেয়। স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের নাগরিকত্ব দেয়। রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার এবং রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসিত করে। পরবর্তী অবৈধ সামরিক সরকার এবং বিএনপি-জামাত সরকারও একই পথ অনুসরণ করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু করে। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে এই হত্যার বিচার কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পুনরায় বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে পূর্ববর্তী সরকারগুলোর রেখে যাওয়া অচলাবস্থা এবং বিশ্বমন্দা কাটিয়ে দেশকে দৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার কাজ শুরু করে।
তিনি বলেন, গত সাড়ে ১৪ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আমাদের সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে আমরা জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। আশা করি, জাতির পিতার হত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে কারা ছিল সেটাও একদিন বের হয়ে আসবে।
জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচারও সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের সুযোগ বন্ধ হয়েছে।
জাতির পিতা হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করারা আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সকল চক্রান্ত ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে সকলে মিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি- জাতীয় শোক দিবসে এই হোক আমাদের সুদৃঢ় অঙ্গীকার।